ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর হাসিনা  

মিফতাউল জান্নাতি সিনথিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৬:১৮, ২৬ অক্টোবর ২০২০
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর হাসিনা  

জন্মসূত্রে ঢাকার অধিবাসী হাসিনা মুক্তা। বিয়ে হয়ও ঢাকায়। দাম্পত্য জীবন ভালোই কাটছিল। কিন্তু দশ বছর পর স্বামী মারা যান। রেখে যান দুই সন্তান। এখন সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর সায়েদাবাদে শ্বশুর বাড়িতেই থাকছেন। 

অর্থবিত্ত কিছুটা থাকলেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন হাসিনা। কী থেকে কী করবেন, হঠাৎ মাথায় আসে স্বাধীন পেশাই তিনি বেছে নেবেন। আর স্বাধীনতা চাকরিতে নেই, আছে ব্যবসায়। সেই থেকেই উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। 

ডিমের খোসা ও ক্লে দিয়ে তৈরি ক্রাফটিংয়ের মাধ্যমে উদ্যোক্তা জীবনের হাতে খড়ি হলেও ব্লক ও বুটিকসের পণ্য বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। এছাড়াও রয়েছে ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, ছোট ও বড়দের নানা ধরনের, নানা ডিজাইনের পোশাক। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজি বিভাগে স্নাতকোত্তর পাস করার পর অন্যরা যেখানে স্বপ্ন দেখেন ভালো বেতনের চাকরি, সেখানে হাসিনা আক্তার স্বপ্ন দেখেছেন নিজে উদ্যোক্তা হয়ে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরি করার। সেই লক্ষ্য নিয়ে এস এম ই ফাউন্ডেশন, সাবা বাংলাদেশ, বিসিক ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে অথিতি শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন হাজারও উদ্যোক্তাদের।

তিনি বলেন, ‘পঞ্চাশ হাজার টাকা লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দশ বছরে আমার মূলধন দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৪৫ লাখ টাকায়। বর্তমান রাজধানীর গোলাপবাগে নতুনত্ব (বুটিকস ও হস্তশিল্প) নামে রয়েছে নিজস্ব শো-রুম। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ে যেখানে মানুষ ভুগছেন হতাশায়, সেখানে আমি নারী উদ্যোক্তা হাসিনা দায়িত্ব নিয়েছি নিজের পরিবারের ও দুই মেয়ের পড়াশুনার।’ 

তিনি জানান, এখনকার দিনের মেয়েদের তুলনায় তার সময়ে মেয়ে হয়ে ব্যবসা করা ছিল অনেক চ্যালেজিং বিষয়। প্রথম দিকে ঘরোয়াভাবে ব্যবসা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে ঘরের বাইরে ব্যবসা করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। কিন্তু বাবা ও পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা পেয়ে হাসিনা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন অনেক দূর। 

তার হাতের তৈরি পণ্য শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চায়না ও ইন্ডিয়ার উদ্যোক্তা মেলায় তার তৈরি হস্তশিল্প অনেক সাড়া পেয়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের নিকট থেকে অনেক প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। পণ্যে মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের গিফট আইটেম। 

কথায় আছে, ব্যবসায় সফল হতে গেলে নিজের চিন্তাভাবনাকে রাখতে হবে ইউনিক, চাহিদাসম্পন্ন ও সময়োপযোগী। করোনায় যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্ল্যের ঊর্ধ্বগতি আকাশচুম্বি, ঠিক এই সময়ে হাসিনা আক্তার চিন্তা করেন কীভাবে নিজের দেশের মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যে স্বদেশি পণ্য তুলে দেওয়া যায়। সেই চিন্তা থেকে নিজ উদ্যোগে নিজস্ব কারখানায় মাস্ক তৈরি করে পিসপ্রতি ১৬ টাকায় পৌঁছে দিয়েছেন জনগণের দোরগোড়ায়। 

হাসিনার তৈরি মাস্ক ও পিপিই ব্যবহৃত হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল, মুগদা মেডিক্যালসহ আরও অনেক বেসরকারি মেডিকেলে। ডাক্তার, নার্স ও বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের কাছেও সমাদৃত হয়েছে তার পণ্য। 

‘নারীরা কাজ না করলে দেশ আগাবে না’ এই মূলমন্ত্র নিয়ে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে ব্যবসার পাশাপাশি হাসিনা আক্তার প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘নতুনত্ব’ নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে সব বয়সের নারীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। 

হাসিনার মতে, একজন উদ্যোক্তার নিজস্ব আইডিয়া থাকার পাশাপাশি জানা দরকার পণ্য ও পণ্যের সেবা কীভাবে অন্যের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যায়। উদ্যোক্তারা যেন কোনোভাবেই দক্ষতার দিক থেকে পিছিয়ে না পড়ে, মূলত সেই ভাবনা থেকেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। 

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়