ঢাকা     বুধবার   ১৫ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

স্বামীকে সহযোগিতা করতেই উদ্যোক্তা ডানা ত্রিপুরা

শিরীন সুলতানা অরুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ৩০ জুন ২০২১  
স্বামীকে সহযোগিতা করতেই উদ্যোক্তা ডানা ত্রিপুরা

ডানা ত্রিপুরা,জন্ম ও বেড়ে ওঠা বান্দরবান জেলায়। পরিবারের তিন ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান তিনি। ২০১২ সালে ঢাকার MCET (মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি) কলেজ থেকে আর্কিটেকচার বিভাগে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন ডানা ত্রিপুরা। বর্তমানে বান্দরবানেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। পরবর্তীতে কর্মজীবনে প্রবেশ করায় আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি তার।

ডানা ত্রিপুরার বাড়ি ও কর্মস্থল বান্দরবনের আলীকদমে হলেও তার স্বামীর কর্মস্থল ছিলো মালুমঘাট,চকরিয়াতে। বিয়ের পর অফিস যাতায়েতে কষ্ট হওয়ায় তার স্বামী সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার। চাকরি ছাড়ার পর স্বামী ও স্ত্রী মিলে একটা ষ্টেশনারী দোকানও দেন। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, সময়ের সমন্বয়হীনতা ও লোকবলের অভাবে বন্ধ করে দিতে হয় দোকান।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে করোনাকালীনে স্কুল বন্ধ হওয়ায় আবারো অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন ডানা ত্রিপুরা। ততদিনে তার স্বামী নিজের মত করে সিজনাল ব্যবসা শুরু করেছেন। স্বামীকে সহযোগিতা করতেই বান্দর বনের খাঁটি মধুর ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হন তিনি।

বর্তমানে ডানা ত্রিপুরা ও তার স্বামী  ফেসবুক পেজ ‘APREES COLLECTION’- এর মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা । তাদের সিগনেচার পণ্য হলো পাহাড়ি মধু। অন্যান্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মেয়েদের পোশাক,জুমের বিন্নি চাল,কাওন চাল ও তিল ইত্যাদি। যদিও এখন পণ্য ডেলিভারি সমস্যা জনিত কারনে অফলাইনেই ব্যবসার পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।      

নিজের ব্যবসার কথা বলতে গিয়ে ডানা ত্রিপুরা বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে প্রবল থাকলেও শুরুটা এত সহজ ছিলোনা। কিন্তু ইচ্ছেটা চাপা দিইনি। "খাঁটি জিনিস খাবো, সুস্থ সবল থাকবো" এই লক্ষ্য নিয়েই ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ভেজালের ভীড়ে খাঁটি জিনিস আমরা কতটকুই বা পাই! এজন্য খাঁটি মধুর পাশাপাশি জুম ফসল নিয়ে কাজ করার চিন্তা মাথায় আসে। আর এই পণ্যগুলো চাষ থেকে শুরু করে সংগ্রহ সব আমাদের চোখের সামনে। তাই এগুলো নিয়ে সংশয়ের কোন কারণ ছিলোনা।

অর্থের পাশাপাশি আমি যা পাচ্ছি তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই হলো উদ্দেশ্য। আর কাপড়ের বিষয়টা হলো কর্মজীবী নারী হিসেবে অফিস পোশাকের জন্য নতুনত্ব, ফ্যাশনেবল আর আরামদায়ক পোশাক আমরা সবাই চাই। কিন্তু আলীকদম মফস্বল এলাকা হওয়ায় এখানে এই ধরনের পোশাক চাইলেও পাওয়া যেতনা। অনেক সময় দোকানে বললেও একটা দুইটার জন্য আনতে রাজি হত না। তাই নিজের চাহিদার পাশাপাশি অন্যের চাহিদা পূরণের জন্য এই প্রচেষ্টা’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি সংসার জীবনে একজন নারীর সবচেয়ে বড় শক্তি তার স্বামী। আমি আমার প্রতিটা কাজে আমার পরিবারের সবার সাপোর্ট সবসময় পেয়েছি। এক্ষেত্রে আমার স্বামী, মা ও ভাইয়েরা সবাই সমান। কেউ কোনদিন কোন কাজে না করেনি’।

ডানা ত্রিপুরার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু ২০১৬ সালে হলেও সফলতা   অনুভব করেন বিগত দুই বছর যাবত। ভবিষ্যতে তার উদ্যোগ শুধু আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিবে তা নয়, হারিয়ে যাওয়া দেশীয় সংস্কৃতির পণ্য নিয়ে ব্যবসার ইচ্ছে রয়েছে তার। এছাড়াও ইচ্ছে আছে ত্রিপুরা- ম্রোদের পুঁতি ও থামি নিয়ে ব্যবসা করার।

লেখকঃ স্বত্ত্বাধিকারী,এস এস এগ্রো প্রোডাক্ট,জেলা প্রতিনিধি উই (রাংগামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) এবং জেলা কন্ট্রিবিউটর লেখক,উদ্যোক্তা/ই-কমার্স পাতা,রাইজিংবিডি ডটকম।

রাঙামাটি/সিনথিয়া

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ