ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংসার সাংঘর্ষিক নয়: তানজেরিনা

মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২১ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ২৩:০৩, ২১ এপ্রিল ২০২৪
স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংসার সাংঘর্ষিক নয়: তানজেরিনা

‘প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো বাধা আসবেই। আমিও তার ব্যতিক্রম নই, বাধা আমারও এসেছে। কিন্তু সেটা আমার স্বামী-সন্তানদের থেকে নয়। মূলত আমার স্বামী ও সন্তানদের ইচ্ছায় ও মনের জোরেই এ পর্যন্ত এসেছি। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংসার সাংঘর্ষিক নয়। শুধু পরিবারকে মানিয়ে নিয়ে চলতে জানতে হয়। পরিবারকে মানিয়ে চলতে জানলে কোনো সমস্যা তৈরি হয় না। বরং পরিবারের সদস্যরাই অন্যতম সহযোগী হয়ে যায়।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সফল নারী উদ্যোক্তা তানজেরিনা বেগম। তিনি ২০০০ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। সাংসারিক জীবন শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় বসবাস করছেন তিনি। সংসার সামলানোর পাশাপাশি তিনি শুরু করেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা।

তানজেরিনা ছিলেন পুরোদস্তুর গৃহিণী। কিন্তু নিজে কিছু একটা করার বাসনা মনের কোনায় সবসময় পুষে রেখেছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরও স্বামী বড় ব্যবসায়ী হওয়ায় কখনো চাকরি করার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু করোনার সময়ে সবকিছু স্থবির হয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি ঘরবন্দি জীবন কাটছিল তার। তখনই তিনি শুরু করেন উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা।

তিনি বলেন, করোনাকালে কাজ শুরু করেছি। ২০২১ সাল থেকে পুরোপুরি পথচলা শুরু হয় আমার। করোনার সময়ে মানুষ যখন ঘরবন্দি, তখন খাবারের ডিমান্ডটা ছিল টপ লেভেলে। তখন থেকে খাবারের অর্ডার নেওয়া এবং তা বানিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়।

তবে তিনি তার সন্তানদের জন্য স্কুলের টিফিন তৈরি করে দিলে সেখান থেকে অন্য বাচ্চারা খেয়ে খুব প্রশংসা করতো। খাবার নিয়ে কাজ করার উৎসাহটা মূলত সেখান থেকেই পাওয়া। পরে করোনার সময়ে তার মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ফ্রেশ ফ্রম দ্যা ওভেন’ নামে একটি পেজ খুলে দেন। সেখানে তিনি অল্প অল্প করে রান্নার ছবি দিতে থাকেন। সেটা দেখে পরিচিতজনদের থেকে অর্ডার আসতে থাকে। এরই মধ্যে উই এর সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। তারপর উই এর হাত ধরে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে চলছেন্ তিনি।

তবে উই এর থেকে নানা পরামর্শ নিলেও যা কিছু শিখেছেন নিজে থেকেই। তিনি বলেন, বর্তমানে খাবারের পাশাপাশি হস্তশিল্প, হোম ডেকোর, বিছানার চাদর, ব্রাইডাল সু ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি। আমি এসব যা কিছু করি, সবই নিজে থেকেই শেখা। কোথাও কখনো ট্রেনিং করা হয়নি।

হস্তশিল্পের কাজগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ মতোই করে থাকেন তানজেরিনা। তবে গ্রাহকরা যদি কখনো কোনো ডিজাইনের চাহিদা দেন, সেটাও তিনি যত্নের সঙ্গে তৈরি করে দেন। তার কাজগুলো  সুক্ষ্ম হওয়ায় সেগুলো সম্পন্ন করতে ২-৩ দিন লেগে যায়। হস্তশিল্পের কাজটি একটু বেশি কষ্টের হলেও তিনি শখ থেকেই এটি করেন।

এ নারী উদ্যোক্ত বলেন, ধীরে ধীরে এ কাজ থেকে সরে আসতে হবে। কারণ আমাদের দেশে আর্ট শিল্পকে মানুষ ভালো নজরে দেখে না। আমরা সাজপোশাক, ভালো শাড়ি এগুলোকে যতটা প্রাধান্য দেই, শিল্পকে সেভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। 

প্রতিমাসে তিনি সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজের উদ্যোগ থেকে ভালোই আয় করেন। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম আয়ের হিসাবটা ভালোই ছিল। যত অ্যাক্টিভ থাকা যায়, অর্ডার ততোই পাওয়া যায়। কিন্তু এখন সংসার, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা সবদিক দেখতে গিয়ে তেমন সময় দিতে পারি না। তারপরও রান্না করা খাবার ও হস্তশিল্প মিলিয়ে মোটামুটি ভালোই অর্ডার আসে।

হস্তশিল্পের কাজগুলো একটু জটিল হওয়ায় এ কাজের জন্য তেমন অভিজ্ঞ মানুষ পান না তিনি। এজন্য এ কাজগুলো তিনি একাই করে থাকেন। তবে রান্নার জন্য তিনজন লোক রাখা আছে।

তানজেরিনা বেগম মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তাদের মতো ছোট উদ্যোক্তাদের খুবই প্রয়োজনীয় একটা মাধ্যম। কারণ বর্তমানে সবকিছুই চলছে ফেসবুককে কেন্দ্র করে।

নিজে ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না নিলেও তিনি মনে করেন একজন উদ্যোক্তার জন্য প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, একজন উদ্যোক্তা যত বেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন, তিনি ততো বেশি উপকৃত হবেন। একজন উদ্যোক্তার জন্য ফেসবুক এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। সেখানে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে, যা আমরা জানি না। সে বিষয়ে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া হলে একজন উদ্যোক্তা সহজেই সফল হতে পারবেন।
 
প্রতিটি মানুষই চান, তার বর্তমান অবস্থানটা পরিবর্তন করে আরও উন্নত করতে। তানজেরিনাও এর ব্যতিক্রম নন। এজন্যই তিনি সাংসারিক শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার সব পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে একদিন বিদেশে পৌঁছে যাবে, এমনটাই স্বপ্ন দেখেন তিনি।
 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়