ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নদীর নাব্যতা হ্রাস ও জলাবদ্ধতায় উপকূলীয় জনজীবন বিপর্যস্ত

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদীর নাব্যতা হ্রাস ও জলাবদ্ধতায় উপকূলীয় জনজীবন বিপর্যস্ত

বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে এভাবে জলাবদ্ধতার শিকার নিম্নাঞ্চল এলাকার পরিবার (ছবি : আলী আকবর টুটুল)

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। যার কারণে জলাবদ্ধতায় জনজীবনে চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে।

বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরিশাল ও ভোলা এসব উপকূলীয় জেলার নদ-নদীতে অতিরিক্ত পলিজমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক পানির চাপ নদীগুলো ধারণ করতে পারছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও অকালবন্যা।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, কৃষির অবনতি ঘটছে। এ অবস্থায় চরম ঝুঁকির মধ্যে উপকূলীয় এলাকার মানুষগুলো। অতিরিক্ত পলি জমে নদ-নদী ভরাট হওয়ায় জোয়ারের স্ফীতি বাড়ছে, বাড়ছে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা। এসব কিছুই কিন্তু এ অঞ্চলের বন্যা এবং জলাবদ্ধার ইঙ্গিত বহন করে। এর প্রভাবে এ অঞ্চলে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রমতে, উপকূলের নদীগুলোর বহনকৃত বার্ষিক পলির পরিমাণ ১.২ বিলিয়ন টন। এতে শুষ্ক মৌসুমে প্রধান প্রধান নদীগুলোর শাখা-প্রশাখাসমূহের কার্যকারিতা পলি সঞ্চায়নের ফলে বন্ধ হয়ে থাকে। এই উপকূলীয় এলাকা এমন একটি প্রাকৃতিক অবস্থান যেখানে মাটি, পানি, বায়ুর সংমিশ্রণ ঘটে থাকে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিচিতি নির্ধারণে জোয়ার ভাটার প্রবণতা, লবণাক্ততার অবস্থান এবং ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব এই তিনটি নিয়ামকের ওপর নির্ভর করে।

উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর নাব্যতা না থাকায় বর্তমানে সাড়ে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই তলিয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ অঞ্চল। নদীগুলোতে বর্ষার পানি নিষ্কাশন হচ্ছেই না বরং নদী উপচে পানি প্রবেশ করছে ফসলের মাঠ ও লোকালয়ে। এসবের বাস্তব চিত্র আজ দেখা যায় প্রতিটি বসতভিটায় যখন মাটি দিয়ে ভরাট করে তাদের বাড়িঘর উঁচু করতে হচ্ছে অনবরত। নদীর লবণ পানি ফসলি খেতে উঠে দেখা দিচ্ছে তীব্র খাদ্যসংকট, জীবন-জীবিকার জন্য করতে হচ্ছে সংগ্রাম।

নতুন করে যোগ হওয়া পোল্ডার সিস্টমের কারণে নদীর গতিবেগ কমে গেছে। তাই জোয়ারের পলিযুক্ত পানি ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে না পেরে নদী তার বক্ষ ভরাট করে তুলছে। ভরাট এলাকার নদীর অভ্যন্তরীণ খাল বিলের তুলনায় উঁচু হয়ে পড়ায় পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিপর্যস্ত নদী ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধ ও উজানে বাঁধ নির্মাণ এসবের জন্য দায়ী।

সুন্দরবন গবেষক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ, স্লুইসগেট ব্যবস্থাপনা না থাকা ও অপরিকল্পিভাবে চিংড়ি চাষের কারনে নদীতে অতিরিক্ত পলি জমছে। ভারত নদীতে বাঁধ দেওয়ায় উজানের পানিপ্রবাহ না থাকায় লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। এসব কারণে সকল নদী-খালসমূহ খনন, রেকর্ডীয় নদী খালের অবৈধ বাধ অপসারণ ও দখল মুক্তকরণ, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বন্ধ, খননের মাধ্যমে নদী খালের নাব্যতা পুররুদ্ধারসহ নদীতে অব্যাহত ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে নৌপথ সচল করার বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি)’র নির্বাহী পরিচালক এস জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু দুর্গতদের জীবন জীবিকা ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ, জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। এ অঞ্চলে তীব্র লবণাক্ততা, ফসলহানি, বৃক্ষ উজাড়, জলাবদ্ধতা, জলোচ্ছ্বাস, পরিবেশ বিপর্যয়, খাদ্যাভাবসহ জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ রোধে রেকর্ডীয় নদী-খালের ওপর পাবলিক রাইটস্ প্রতিষ্ঠায় অবৈধ বাঁধ অপসারণ, আবদ্ধ বিলগুলো কমপক্ষে বছরের অর্ধেক সময় উন্মুক্ত রাখতে হবে।



রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১ আগস্ট ২০১৪/দিলারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়