`বাংলাদেশের নারীযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর অবদান` গ্রন্থমেলায়
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ না থাকার একটি অভিযোগ রয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ক্ষেত্রে আরেকটি সংযোজন হতে যাচ্ছে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ 'বাংলাদেশের নারীযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর অবদান'। ড. ফাল্গুনী তানিয়ার রচিত বইটি এবারের একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। বইটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স।
বইটির ভূমিকায় লেখা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ নিঃসন্দেহে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এটা দুঃখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে একটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ ইতিহাস এখনো রচিত হয়নি। একাত্তরের যুদ্ধে নারীর যে বহুমুখী ভূমিকা ছিল তাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় অভিষিক্ত না করে নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে সহযোগী শক্তি রূপে। মুক্তিযুদ্ধে নারী তার অমিত তেজে বাংলার মাটিকে রক্ষা করেছে। রণাঙ্গণে যুদ্ধ ব্যতীত পারিবারিক সংগঠন টিকিয়ে রাখার যে লড়াই তার গুরুত্ব কম নয়। অথচ এই নারী যুদ্ধের পর তার যথাযোগ্য সম্মান পায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বহুবিধ উপায়ে নারীকে স্বাভাবিক জন¯্রােতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। তার চূড়ান্ত প্রচেষ্টার ফলেই মুজিব প্রশাসন ছিল অত্যন্ত নারীবান্ধব। যদিও যুদ্ধোত্তর সামাজিক পরিস্থিতি নারীর জন্য এতটুকুও সুখদায়ক ছিল না।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর একাধিক গ্রন্থ রচিত হলেও স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে নারীদের পরিস্থিতি এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য বঙ্গবন্ধুর যে আত্যন্তিক প্রচেষ্টা ছিল সে সম্পর্কিত কোনো তথ্যসমৃদ্ধ ও গবেষণাভিত্তিক গ্রন্থ রচিত হয়নি। গবেষণা ক্ষেত্রের এই অভাবটি পূরণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ও তার প্রশাসন নারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তা এই গবেষণাকর্মে অনুসন্ধান করা হয়েছে।
গবেষণাকর্মটিতে মূলত প্রাথমিক উৎস থেকে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রসমূহ। ১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত সময়ের সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী বিভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়। এই সময় প্রকাশিত ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকা গবেষণার জন্য অনুসন্ধান করা হয়েছে। এছাড়া বি.বি.সি, ভয়েস অব আমেরিকাতে প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদ, আমাদের দেশীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র গবেষণার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গবেষণার দ্বৈতয়িক উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থ, সাক্ষাৎকার সংকলন, দেশে-বিদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দলিল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বিজয় কেতন জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাসগুলোকেও তথ্যের ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
গবেষণাপত্রের প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে সাতই মার্চ : বাঙালি নারীর বহুমাত্রিক সংগ্রাম।’ এই অধ্যায়ে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান কালপর্বে বিভিন্ন আন্দোলনে নারীরা যেভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তা অনুসন্ধানের প্রয়াস রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম ‘বাংলাদেশের নারীযোদ্ধা: একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা।’ এই অধ্যায়ে স্বাধীনতার জন্য একাত্তরের নারীদের কতটা আত্মত্যাগ করতে হয়েছিল তা অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা রয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম ‘নারী- লেখকদের উপন্যাসে যোদ্ধা - নারী ও বঙ্গবন্ধু।’ এই অধ্যায়ে নারী লেখকদের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসকে তথ্যের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অধিকাংশ লেখক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতালব্ধ। তবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দীর্ঘ গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের পর উপন্যাস রচনায় ব্রতী হয়েছেন এমন লেখকও আলোচনায় স্থান পেয়েছেন। এই অধ্যায়ে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বীরাঙ্গনা ও সর্বহারা নারীদের জন্য তাঁর আন্তরিক মমত্ববোধ ইত্যাদি প্রসঙ্গের সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জনের সময় ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কালে নারীর অবস্থা ও অবস্থান নির্ণয়ের একাধিক প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
চতুর্থ অধ্যায়ের শিরোনাম বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা- বিবৃতি -ভাষণে নারীযোদ্ধা। এই অধ্যায়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভাষণে নারীযোদ্ধাদের প্রসঙ্গ পর্যালোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায় ‘বাংলাদেশের নারীযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।’ এই অধ্যায়ে যুদ্ধাহত নারী, পরিত্যক্ত নারী, স্বজনহারা নারী ও শিশুদের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যে সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বইটি একুশে গ্রন্থমেলায় পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকা/হাসান/নাসিম