ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আলোহীন বইমেলার প্রবেশপথ 

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
আলোহীন বইমেলার প্রবেশপথ 

ছবি: মেসবাহ য়াযাদ

প্রতিবারই বাড়ছে বইমেলার পরিসর। বাংলা একাডেমি থেকে বইমেলা ছড়িয়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এবার বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অথচ, পরিসর বাড়লেও প্রবেশপথে কোনো আলোর ব‌্যবস্থা করা হয়নি।

বিশেষ করে টিএসসির প্রবেশ পথ অন্ধকারে ঢাকা। ভৌতিক অবস্থা বিরাজমান এই প্রবেশ পথে। আলো না থাকার বিষয়টি নিয়ে দর্শনার্থী-লেখক- পাঠককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আর আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি থেকে বলা হয়েছে, শিগগিরই আলোর ব‌্যবস্থা করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ছিলো মেলার দ্বিতীয় দিন। এবার মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য রয়েছে চারটি প্রবেশপথ। গতবার ছিলো তিনটি। প্রথমটি টিএসসির পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট। আরেকটি বাংলা একাডেমির উল্টাদিকের (কালি বাড়ি) গেট। তৃতীয়টি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের পাশের গেট। এবারে অবশ্য নতুন করে দোয়েল চত্বর এলাকায় আরেকটি প্রবেশ পথ করা হয়েছে। 
প্রতিবারের মতো এবারও প্রবেশ পথের পাশেই রয়েছে মেলা থেকে বের হওয়ার গেটগুলোও।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা গেছে, টিএসসির পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট থেকে মেলার গেট পর্যন্ত পুরোটা পথ এবং এর চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দর্শনার্থীরা টিএসসি প্রধান সড়কের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে এসে থমকে দাঁড়াচ্ছেন। এরপর ইতস্তত করে সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে ঢুকছেন। মূল গেট থেকে বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের গেট প্রায় ৫০০ গজ দূরে। এই পথ অন্ধকারে ছেয়ে আছে। কোনো বাতি নেই। বইমেলার প্রবেশ পথেও অপর্যাপ্ত আলো। পাশেই বেরিয়ে যাওয়ার পথ, তাও অন্ধকারে ঢাকা!

আলো না থাকা প্রসঙ্গে গেটের দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মেলার প্রবেশ পথে বা গইটে আলো থাকা না থাকার বিষয় আসলে আমাদের এখতিয়ারে নেই। এটা সত্যি যে, এলাকাটা বেশ অন্ধকার। তবে এই এলাকায় যেনো কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। আমাদের অনেক সদস্য বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে ডিউটি করছেন।’

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলার ভেতরেও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশক বলেন, ‘প্রতি বছরই মেলার প্রথম সপ্তাহে এরকম ঘটনা ঘটে। আলোচনা, সমালোচনা, পত্রিকা, টেলিভিশনে এসব নিয়ে লেখালেখির পর সব ঠিক হয়। আশা করি, এবারও  ঠিক হয়ে যাবে। আশা করছি, বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়াই সুন্দরভাবে মেলা সম্পন্ন হবে। তবে গেটে আলো না থাকার বিষয়টা সত্যি দুঃখজনক।’

পেশাগত কারণেই প্রতি বছর প্রথম দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত প্রতিদিন মেলায় যান গণমাধ্যমকর্মী মাম‌ুন সোহাগ। গেটে আলো না থাকা এবং মেলা প্রাঙ্গণে আলোর স্বল্পতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কেমন ব্যাপার হলো? মেলার ভেতরে স্বল্প আলো, আবার গেটেও আলোর ব্যবস্থা নেই। মেলায় ঢুকতে গিয়েই মানুষজন তো নিরাপত্বাহীনতায় ভুগবে। যত দ্রুত সম্ভব মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে আলোর ব‌্যবস্থা করা দরকার। তাছাড়া মেলার ভেতরেও আরও বেশি আলোর ব্যবস্থা করা উচিৎ।’

মেলায় দেখা হয় লেখক, সাংবাদিক গিয়াস আহমেদের সঙ্গে। মেলার গেটে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পুরুষরা না হয় অন্ধকার গেট দিয়ে মেলায় ঢুকবেন। কিন্তু নারী ও শিশুরা টিএসসি গেট দিয়ে ঢুকতেই ভয় পাবেন। তারপর অনেকটা পথ অন্ধকারের মধ্যদিয়ে পার হয়ে তাকে মেলায় ঢুকতে হবে। এসব দেখে তো সন্ধ্যার পর ভয়েই মানুষজন মেলায় আসবেন না।’ 

এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মেলা কমিটির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেখানকার কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। যোগাযোগ করলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টা দেখছি। যত দ্রুত সম্ভব, আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘খুব দ্রুত গেটে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট।

মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় রয়েছে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন। লিটলম্যাগ চত্বরে ঠাঁই পেয়েছে ১৫৩টি স্টল।

ছুটির দিন ছাড়া মেলা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে দর্শক, ক্রেতা, পাঠকদের রাত সাড়ে ৮টার পর মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ছুটির দিনে বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর একুশে ফেব্রুয়ারির দিন মেলার গেট খুলে দেওয়া হবে সকাল ৮টায়।

এবার মেলায় প্রবেশ পথ রয়েছে ৪টি। টিএসসি, কালী মন্দির গেট, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে রয়েছে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ। বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

/মেসবাহ/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়