ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যেভাবে হত্যা করা হয় মা-মেয়েকে

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৬ মার্চ ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে হত্যা করা হয় মা-মেয়েকে

মা রিজিয়া খাতুন ও মেয়ে সায়মা নাজনিন নিশাত

রেজাউল করিম
চট্টগ্রাম, ২৬ মার্চ : ২৪ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কথিত প্রেমিক আবু রায়হান এবং স্থানীয় একটি গেস্টহাউসের গাড়িচালক শহীদ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সায়মাদের বাসার সামনে যান।

নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর সড়কের ১২৯ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় সায়মাদের বাসার ডোরবেল টেপেন রায়হান। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেন সায়মা। ভেতরের রুমে কাজে ব্যস্ত ছিলেন সায়মার মা রিজিয়া খাতুন। বাসায় ঢুকে প্রথমে দরজা বন্ধ করে সায়মার মুখ চেপে ধরেন রায়হান। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে রিজিয়া খাতুন দ্রুত ভেতরের রুম থেকে বের হয়ে রায়হানকে বাধা দিলে শহীদ তাকে জাপটে ধরে ফেলেন।

এ সময় রায়হান এসে বঁটি দিয়ে প্রথমে রিজিয়া খাতুনের পায়ের রগ কেটে দেন। রিজিয়া খাতুন মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে পরে শহীদ তাকে ছেড়ে দিয়ে সায়মার মুখ চেপে ধরেন। রায়হান সায়মার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেন। এ সময় সায়মার মা মেঝে থেকে উঠে রায়হান ও শহীদকে বাধা দিলে তারা রিজিয়াকে আবারও কুপিয়ে রক্তাক্ত করেন।

তখন বাইরে থেকে ডোরবেলের শব্দ হয়। শব্দ শুনে দুই ঘাতকই দ্রুত সায়মার পায়ের রগ কেটে দেন। ঠিক এভাবেই মা ও মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার প্রাথমিক বর্ণনা দিয়েছেন মূল হত্যাকারী সায়মার কথিত প্রেমিক আবু রায়হান।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঘাতক আবু রায়হানকে। চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মূল ঘাতকের সহযোগী মো. শহীদকেও। এই দুই খুনি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় বাসায় ঢুকে মা রিজিয়া খাতুন (৫০) এবং তার একমাত্র কন্যা সায়মা নাজনিন নিশাতকে (১৭) হত্যা করে পালিয়ে যান।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক আবু রায়হান জানান, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর শহীদের প্যান্টে রক্তের দাগ লাগে। সায়মাদের বাসাতেই শহীদ দ্রুত প্যান্ট খুলে বিছানার ওপর থাকা একটি লুঙ্গি পরে বাইরে বেরিয়ে যান। তবে বাইরে বেরিয়ে রায়হান ও শহীদ ডোরবেল কারা দিয়েছিল তাদের কাউকে দেখতে পাননি। তারা দ্রুত গিয়ে আগে থেকে বাসার নিচে রাখা সিএনজি অটোরিকশায় উঠে ফয়’স লেক এলাকায় আসেন। এই জোড়া খুনে তারা সময় নেন মাত্র ১৫ মিনিট।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বাবুল আখতার জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর আবু রায়হান ও শহীদ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। খুনের কারণ ও কীভাবে খুন করা হয়েছে, তারও বর্ণনা দিয়েছেন তারা।

গত ২৪ মার্চ সকালে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর সড়কের ১২৯ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় বাসায় ঢুকে মা রেজিয়া খাতুন ও মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়মা নাজনিনকে ছুরিকাঘাত করে, রগ কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র রাইজিংবিডিকে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানায়, চট্টগ্রাম ইউএসটিসির বিবিএর ছাত্র আবু রায়হানের সঙ্গে আগ্রাবাদ গার্লস স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়মা নাজনিন নিশাতের কিছুদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেন  রায়হান। কিন্তু রায়হান বখাটে হওয়ায় সায়মা তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পড়ালেখায় মনোযোগী হন।

একাধিকবার সায়মার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন রায়হান। মূলত প্রেমে ব্যর্থ হয়েই বখাটে যুবক রায়হানের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সায়মা। আর মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণটিও ঘাতকের হাতে তুলে দেন মা রিজিয়া খাতুন।

সায়মার বড় ভাই সাইদ রেজা অভিযোগ করেন, নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা আবু রায়হান দীর্ঘদিন ধরে তার বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। এ নিয়ে সাইদের সঙ্গেও রায়হানের বাগ্‌বিতণ্ডা হয় একাধিকবার।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক রায়হান ও খুলশী এলাকার একটি গেস্টহাউসের গাড়িচালক শহীদ পরস্পর বন্ধু। রায়হান নিয়মিত শহীদের সেই গেস্টহাউসে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকতেন। সেই সুবাদে শহীদের সঙ্গে রায়হানের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আর এই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই দুজন মিলে মা ও মেয়েকে হত্যা করেন।


রাইজিংবিডি/দিলারা/আবু মো.

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়