জাকাত যাকে দেবেন, যেভাবে দেবেন
টিপু || রাইজিংবিডি.কম
শাহ মতিন টিপু : জাকাত ইসলামের পাঁচটি ফরযের একটি। কালিমায়ে শাহাদাত ও সালাতের পর জাকাতের স্থান। জাকাতের ব্যাপারে যে কৃপণতা করল অথবা কম আদায় করল সে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত ও আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত’। সূরা আলে-ইমরান: (১৮০)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অতঃপর সে তার জাকাত প্রদান করল না, কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপ সৃষ্টি করা হবে, যার দুটি চোঁয়াল থাকবে, যা দ্বারা সে তাকে কিয়ামতের দিন পেঁচিয়ে ধরবে, অতঃপর তার দু’চোয়াল পাকড়ে বলবে: আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত ধন’। (সহীহ বুখারি)
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর‘। সূরা আত-তওবা: ৩৪-৩৫।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘হালাল উপার্জন থেকে যে খেজুর পরিমাণ সদকা করল, আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত গ্রহণ করেন না, আল্লাহ তা ডান হাতে গ্রহণ করেন, অতঃপর সদকাকারীর জন্য তা বৃদ্ধি করতে থাকেন, যেমন তোমরা অশ্বশাবক লালন কর অতঃপর পাহাড়ের ন্যায় পরিণত হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
জাকাত দ্বারা আল্লাহ পাপসমূহ দূরীভূত করেন, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘সদকা পাপ মোচন করে দেয়, যেমন পানি আগুন নির্বাপিত করে দেয়।’ (সুনানে তিরমিযি)
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তাদের সম্পদ থেকে সাদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।‘ (সূরা তওবা: (১০৩))
যাকাতে সামাজিক যে বড় উপকারটি সাধিত হয়, তা হচ্ছে- জাকাত গরীবদের অন্তর থেকে ধনীদের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। কারণ গরীবরা যখন দেখে ধনীরা তাদের সম্পদ দ্বারা যাবতীয় প্রয়োজন পুরো করে, কিন্তু তাদের সম্পদ থেকে তারা কোনভাবে উপকৃত হয় না, এতে অনেক সময় ধনীদের প্রতি তাদের অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষের জন্ম নেয়। কিন্তু ধনীরা যদি বছর শেষে গরীবদের জাকাত দেয়, তাহলে তাদের অন্তর থেকে তা দূরীভূত হয় এবং উভয় শ্রেণির মধ্যে মহব্বত ও ভালবাসার সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে যাকাতের ফলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় ও তাতে বরকত হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘কোন সদকা সম্পদ হ্রাস করেনি।’ (মুসলিম, তিরমিযি, আমহদ) অর্থাৎ সদকার ফলে যদিও সম্পদের অংক কমে, কিন্তু তার বরকত ও ভবিষ্যতে তার বৃদ্ধি কমে না, বরং আল্লাহ তার সম্পদে বরকত দেন ও তার বিনিময়ে অধিক দান করেন।
জাকাত নিদিষ্ট সম্পদের উপর ওয়াজিব হয়, যেমন- স্বর্ণ ও রূপা। শর্ত হচ্ছে, এর নিসাব পূর্ণ হতে হবে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, আর রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ অর্থের মালিক হলে জাকাত ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ ও রূপা অলংকার বা যে অবস্থাতে থাক, তাতে জাকাত ওয়াজিব হবে। অতএব নারীর পরিধেয় অলংকারের উপর জাকাত ওয়াজিব যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়, সে নিজে পরিধান করুক বা অন্যকে পরিধান করতে দিক।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, জনৈক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করে, তার হাতে ছিল স্বর্ণের দু’টি চুড়ি, তিনি বললেন: ‘তুমি এগুলোর জাকাত দাও?’। সে বলল: না। তিনি বললেন: ‘তুমি কি পছন্দ কর আল্লাহ এগুলোর পরিবর্তে তোমাকে জাহান্নামের দু’টি চুড়ি পরিধান করান?। সে তা নিক্ষেপ করে বলল: এগুলো আল্লাহ ও তার রাসুলের জন্য। (আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি)
আরো যেসব জিনিসের উপর জাকাত ওয়াজিব তন্মধ্যে রয়েছে, ব্যবসার জন্য রক্ষিত সম্পদ যেমন- জমিন, গাড়ি, চতুষ্পদ জন্তু ও অন্যান্য সম্পদ। এগুলোতে এক-দশমাংশের চার ভাগের এক ভাগ জাকাত ওয়াজিব, অর্থাৎ চল্লিশ ভাগের একভাগ। কিন্তু যেসব সম্পদ সে নিজের প্রয়োজন অথবা ভাড়া দেয়ার জন্য রেখেছে, তাতে জাকাত ওয়াজিব হবে না।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘মুসলিমের উপর তার গোলাম ও ঘোড়ার সদকা নেই’। (বুখারি, মুসলিম, কিতাবুয জাকাত) তবে ভাড়ার উপার্জনে জাকাত আসবে, যদি বছর পূর্ণ হয়।
যাদের ওপর জাকাত ফরজ : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর মালিকানায় নগদ আদায়যোগ্য ঋণের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলে পূর্ণ এক চন্দ্রবছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার)
যেদিন চন্দ্রবছর হিসেবে এক বছর পূর্ণ হবে, সেদিন সঞ্চিত সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়ে যায়। তাই জাকাত ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব না করে আদায় করে দেয়া উত্তম। জাকাত আদায়ে অধিক বিলম্ব করা গুনাহ। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)
যেসব জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ নয় : নিজের ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর জাকাত ফরজ নয়। গৃহের আসবাবপত্র : খাট-পালং, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গৃহসামগ্রী : যেমন হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির ওপর জাকাত ফরজ নয় তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, আদ্দুররুল মুখতার) পরিধেয় বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে, তবুও তাতে জাকাত ফরজ হবে না। (রদ্দুল মুহতার )
যাদের জাকাত দেয়া যাবে : পবিত্র কোরআনে যাকাতের খাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এসব খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। ইরশাদ হয়েছে- জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এটি আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তাওবা : ৬০)
যে ব্যক্তির কাছে কোনো সম্পত্তি নেই অথবা নিসাবের সমমূল্যের প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনো সম্পত্তিও নেই, এমন লোক শরিয়তের দৃষ্টিতে মিসকিন বা গরিব। তাকে জাকাত দেয়া যাবে। যে ব্যক্তি এমন ঋণগ্রস্ত যে, ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে জাকাতযোগ্য বা ফিতরাযোগ্য কোনো সম্পদ নিসাব পরিমাণ থাকে না, তাকে জাকাত দেওয়া যাবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া)
যে ব্যক্তির নিজ বাড়িতে বা অন্য কোথাও নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কিন্তু সফরে এসে মালসামানা চুরি হয়ে গেছে কিংবা কোনো কারণে একেবারে রিক্তহস্ত হয়ে গেছে, বাড়ি থেকে মাল নিয়ে আসা বা ঋণ নেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই, তাকেও জাকাত দেয়া যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে)
জাকাত শুধু মুসলমানদের দেয়া যাবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না। জাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হলো কোনো ধরনের বিনিময় ছাড়া নিঃস্বার্থভাবে উপযুক্ত ব্যক্তিকে জাকাতের পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেয়া। (রদ্দুল মুহতার)
বাড়ির কাজের ছেলে বা কাজের মেয়েকে জাকাত দেয়া জায়েজ- যদি তারা জাকাত নেয়ার উপযুক্ত হয়। তবে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে জাকাতের অর্থ দিলে জাকাত আদায় হবে না। তাই তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেওয়ার পর জাকাতের অর্থ দেয়া যাবে। পবিত্র কোরআনে বর্ণনা রয়েছে- আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালন ও তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই জাকাত দিতে হবে। জনসমর্থন অর্জন, লোকদের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য কিংবা অন্য কোনো জাগতিক উদ্দেশ্যে জাকাত দেয়া হলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। (সুরা বাকারা)
কোন লোকদেরকে জাকাত দেওয়া যায় : এ সম্পর্কে হযরত মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন প্রণীত ‘আহকামে জিন্দেগী’ কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে-
১. ফকির অর্থাৎ যাদের নিকট সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন সমাধা করার মত সম্বল নেই অথবা যাদের নিকট জাকাত ফেতরা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই। ২. মিসকিন অর্থাৎ যারা সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত অথবা যাদের জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা নেই। ৩.ইসলামী রাষ্ট্র হলে তার জাকাত তহবিলের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। ৪. যাদের উপর ঋণের বোঝা চেপেছে। ৫. যারা আল্লাহর রাস্তায় শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত। ৬. মুসাফির ব্যক্তি ( বাড়ীতে সম্পদশালী হলেও) সফরে রিক্তহস্ত হয়ে পরলে। ৭.জাকাত দাতার ভাই-বোন, ভাতিজা- ভাতিজী, ভগ্নিপতি, ভাগ্না- ভাগ্নী, চাচা-চাচী, খালা-খালু, ফুফা-ফুফী, মামা-মামী, স্বাশুড়ী, জামাই, সৎ বাপ ও সৎ মা ইত্যাদি (যদি এরা গরীব হয়)। ৮. নিজের গরিব চাকর-নওকর বা কর্মচারীকে দেওয়া যায়। তবে এটা বেতন বাবদ কর্তন করা যাবে না।
যাদেরকে জাকাত দেওয়া উত্তম : ১.দ্বীনি এলেম পড়নে ওয়ালা এবং পড়ানে ওয়ালা যদি জাকাতের হকদার হয়, তাহলে এরূপ লোককে জাকাত দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। ২. তারপর জাকাত পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা। ৩.তারপর বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা। ৪. তারপর জাকাতের অন্যান্য প্রকার হকদারগণ।
যাদের অথবা যে যে খাতে জাকাত দেওয়া যায় না : ১. যার নিকট নেসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ আছে। ২.যারা সাইয়েদ অর্থাৎ হাসানী, হুসাইনী, আলাবী, জা`ফরী ইত্যাদি। ৩. জাকাত দাতার মা, বাপ, দাদা, দাদী, পরদাদা, পরদাদী, পরনানা, পরনানী ইত্যাদি উপরের সিঁড়ি। ৪. জাকাত দাতার ছেলে মেয়ে, নাতী, নাতনী-পোতা, পৌত্রী, ইত্যাদি নীচের সিঁড়ি। ৫. জাকাত দাতার স্বামী বা স্ত্রী। ৬. অমুসলিমকে জাকাত দেওয়া যায় না। ৭. যার উপর জাকাত ফরজ হয় এরূপ মালদার লোকের নাবালক সন্তান। ৮. মসজিদ, মাদ্রাসা বা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মাণ কাজের জন্য। ৯. মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের জন্য বা মৃত ব্যক্তির ঋণ ইত্যাদি আদায়ের জন্য। ১০. রাস্তা ঘাট, পুল ইত্যাদি নির্মাণ ও স্থাপন কারজে যেখানে নির্দিষ্ট কাউকে মালিক বানানো হয় না। ১১. সরকার যদি জাকাতের মাসালা অনুযায়ী সঠিক খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় না করে, তাহলে সরকারের জাকাত ফান্ডে জাকাত দেওয়া যাবে না। ১২. জাকাত দ্বারা মসজিদ মাদ্রাসার স্টাফকে( গরীব হলেও) বেতন দেওয়া যায় না।
জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে প্রাণহানির মতো ঘটনার জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তি, সমাজ এবং সরকার সমানভাবে দায়ী। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে জাকাত আদায় করা হয় তা শরিয়তসম্মত কোনো পন্থা নয়; বরং এটা লোক দেখানো । জাকাত দেয়ার পদ্ধতি হচ্ছে জাকাত নির্দিষ্ট করে তা তার প্রাপকদের কাছে নিজে সরাসরি অথবা নিজের লোক দিয়ে পৌঁছে দিতে হবে। আর শাড়ি লুঙ্গি জাকাত দেওয়ার কোনো বিধান ইসলামে নেই। জাকাত দেয়ার নিয়ম হলো এমনভাবে জাকাত দিতে হবে যে, সারা বছরে বছরের জন্য তার যেন দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জাকাততো এভাবে দেওয়া ঠিক নয়। জাকাত দেয়ার একটা পদ্ধতি আছে। জাকাততো গরিব মানুষ গিয়ে নেবে না। বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসতে হবে। ধনী হলে তার দায়িত্ব হলো তার টাকা পয়সার মধ্যে আল্লাহতায়ালা আড়াই শতাংশ গরিবের হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই টাকাটা ধনীরা দরিদ্রদের কাছে দিয়ে আসবে। প্রত্যেকে নিজের এলাকায় যদি আত্মীয়স্বজন এদের মধ্যে জাকাত দেয় তাহলেতো সব এলাকার লোক একত্র হওয়ার দরকার পড়ে না।’
জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল ও তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার প্রধান মুফতি ড. মাওলানা খলিলু রহমান মাদানী বলেন, ‘জাকাত প্রদানের বর্তমান পদ্ধতি সরাসরি অনৈসলামিক কর্মকান্ড। জাকাত এভাবে দেওয়ার বিধান ইসলামি শরিয়তে কখনো ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো দান দিতে হবে ডান হাত দেবে বাম হাত জানবে না। আর জাকাততো হলো এটা এখরাজুল মাল। জাকাততো আপনাকে বের হয়ে দিয়ে আসতে হবে। নেওয়ার জন্যতো লাইন ধরানোর দরকার নেই। প্রত্যেকে যার যার জাকাত নিজস্ব চিন্তা অনুযায়ী বিভিন্ন হকদারের কাছে পৌঁছে দেবে।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জুলাই ২০১৫/টিপু
রাইজিংবিডি.কম