ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অমর্ত্য সেনের ৮৮তম জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৩ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:০২, ৩ নভেম্বর ২০২০
অমর্ত্য সেনের ৮৮তম জন্মদিন

১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাঙালিদের মন জয় করেছিলেন অমর্ত্য সেন। দারিদ্র এবং দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণার জন্য পৃথিবী জুড়েই তিনি শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।

প্রথম নোবেলজয়ী এই বাঙালি অর্থনীতিবিদের ৮৮তম জন্মদিন আজ। জন্ম ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর শান্তিনিকেতনে মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের বাড়িতে। শান্তিনিকেতনের আচার্য অধ্যাপক ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের একজন পণ্ডিত এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগী।

তিনি নিজেকে ঢাকা এবং কলকাতা দুই শহরেরই সন্তান হিসাবে গণ্য করেন। অমর্ত্য সেন নোবেল ওয়েবসাইটে তার আত্মজীবনী শুরু করেছিলেন এই বলে যে ‘আমার জন্ম একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবং সারা জীবনই আমি ঘুরে বেড়িয়েছি এক ক্যাম্পাস থেকে আরেক ক্যাম্পাসে।’

কর্মসূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের সঙ্গে তার জীবন জড়িয়ে গেলেও, তিনি বলেছেন শিকড়ের টান তিনি সবসময়ই অনুভব করেছেন।

ওয়েবসাইটে তিনি লেখেন- ‘আমার পৈত্রিক বাড়ি হচ্ছে পুরনো ঢাকার ওয়ারি অঞ্চলে- রমনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছেই।  আমার বাবা আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রি পড়াতেন।’

বাবা আশুতোষ সেন ১৯৪৫ সালে পরিবার নিয়ে পাকাপাকিভাবে চলে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে।

অমর্ত্য সেনের প্রথম স্কুল ছিল ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিস্। তারপর লেখাপড়া শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে। শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া শেষ করে অমর্ত্য সেন পড়তে যান কলকাতায়।

অমর্ত্য সেন আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘শান্তিনিকেতনে প্রধানত রবীন্দ্রনাথের স্কুলেই শিক্ষার ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গী প্রথম একটা রূপ লাভ করে। সেখানে ছেলে মেয়ে একসঙ্গে পড়ত, শিক্ষার পরিবেশ ছিল অনেক উদার।’

নোবেল পুরস্কার জয়ের খবর ঘোষণার পর নিউ ইয়র্কে মেয়ে ইন্দ্রানী ও ছেলে কবিরের সঙ্গে অমর্ত্য সেন

নোবেল পাওয়ার সময় অমর্ত্য সেন ইংল্যাণ্ডে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের কোন কলেজের তিনিই প্রথম এশীয় প্রধান।

১৯৫১ সালে আইএসসি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তিনি ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। তারপর অর্থনীতি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন ইংল্যাণ্ডে কেম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে।

মেধা ও নিজস্বতায় অমর্ত্য সেন কলকাতার মন জয় করেছিলেন সেই ছাত্রাবস্থাতেই। তার প্রেসিডেন্সি কলেজের সহপাঠী বরুণ দে বলেন, কলেজে যখন এলেন দেখতে লম্বা, সুন্দর চেহারা, লোককে মুগ্ধ করার মতন কথাবার্তা বলার ধরনধারণ। অমর্ত্য যেখানে সবাইকে জয় করলেন, মেয়েরা তো একেবারে কুপোকাত ছিল তাকে দেখে।

বিতর্কে অমর্ত্য সেনের তুখোড় দক্ষতা ছিল।  এমনকী তার প্রথম স্ত্রী নবনীতা দেবসেন বলেছেন, তাদের দুজনের প্রথম আলাপও ছিল বিতর্কের সূত্রে।

অমর্ত্য সেন শিক্ষকতা শুরু করেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং লণ্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সে অধ্যাপনার মধ্যে দিয়ে তিনি আরোহন করেছেন শিক্ষকতার জগতে একটার পর একটা চূড়ায়।

বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রোতাদের ভোটে শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় ১৪তম স্থানে ছিলেন অমর্ত্য সেন। 

দারিদ্র এবং দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণাই তার জীবনে নোবেল প্রাপ্তির মতো বড় সাফল্যটি এনে দেয়। বাংলায় ১৯৪৩-এর মন্বন্তর প্রত্যক্ষ করেছিলেন অমর্ত্য সেন। ওই দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর গবেষণার সূত্রপাত।

সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অতিমাত্রায় বঞ্চিত হওয়া নিয়ে অমর্ত্য সেনের চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে, খাদ্যবঞ্চনা ও দুর্ভিক্ষের বিশ্লেষণ। দুর্ভিক্ষের বিশ্লেষণ করে অমর্ত্য সেন যে দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন, তা হলো: ক. ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্ভিক্ষ হওয়ার মতো খাদ্যস্বল্পতা সাধারণত হয় না, যদিও ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক দেশেও দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্যস্বল্পতা হতে পারে। খ. দুর্ভিক্ষ যে কেবল খাদ্য সরবরাহে ঘাটতির কারণে হয় তা নয়, বরং গরিবের ‘খাদ্য প্রাপ্তির অধিকারহীনতা’র কারণেও ঘটে। এ ছাড়া দুর্ভিক্ষ রোধে গণ-আলোচনা, গণমাধ্যমের প্রচার—এসবের গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন তিনি। সে জন্য গণতন্ত্র তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়