ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অবাক পাখি নীলাভ কান মাছরাঙ্গা

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ৯ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৫:৫৭, ৯ আগস্ট ২০২১
অবাক পাখি নীলাভ কান মাছরাঙ্গা

লেখক ছবিটি শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল থেকে তুলেছেন

হবিগঞ্জ জেলার বাইক্কা বিল। খুব একটা দূরে নয়। যখনই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছবি তুলতে যাই তখন শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলেও যাওয়া হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে হাঁসজাতীয় পরিযায়ী পাখির ছবি তুলতে বাইক্কা বিলে গিয়েছিলাম। বিলের প্রবেশ মুখে করিডোরে বসে কালিম পাখির খাবার খাওয়া দেখছিলাম। এরই মধ্যে বিলের তদারককারী জামাত মিয়া চা নিয়ে এলেন। চা-পান শেষে তাকে সঙ্গে নিয়ে বিলের ভেতর গেলাম। বেশ কয়েক প্রজাতির জলজ পাখির এদিক-ওদিক  ছুটে চলা দেখে আনন্দে মনটা ভরে গেলো। গয়ার,বালিহাঁস, কমনকুট, পিয়াং হাঁসসহ হরেক প্রজাতি পাখির ছবি তুললাম। বেগুনী বকের ছবি তোলার জন্য নৌকা ঘুরিয়ে দ্বিতীয় টাওয়ারের দিকে রওনা হলাম।

নৌকা থেকে নেমে বিলের পাড় ধরে হাঁটছি। এমন সময় শুকনা একটি ডালে মাছরাঙা প্রজাতির একটি পাখি উড়ে এসে বসলো। ফটোগ্রাফির শুরু থেকে ছোট মাছরাঙার প্রতি দুর্বল ছিলাম। তাই যত বার পাখিটির দেখা পেয়েছি তত বার ছবি তুলেছি। ফ্রেম ও কম্পোজিশন ভালো লাগায় ছোট মাছরাঙা ভেবেই বেশ কিছু ছবি তুললাম। ক্যামেরার মনিটরে পাখিটিকে অন্যরকম লাগলো। তখন মাথা না ঘামিয়ে অন্য পাখির ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

বাইক্কা বিল থেকে ঢাকা ফিরে বাসায় কম্পিউটারের মনিটরে পাখিটিকে দেখে চমকে গেলাম। বাইক্কা বিলে এই পাখির দেখা পাবো কল্পনায় ছিলো না। বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগ ও সুন্দরবনে পাখিটির বিচরণ। অথচ পাখিটিকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সুন্দরবনে কতোই না খুঁজেছি। এক কথায় পাখিটি ছিলো আমার স্বপ্নের পাখি।

নীলাভ-কান মাছরাঙ্গা Alcedo গোত্রীয় এবং Alcedininae পরিবারের অন্তর্গত ১৬- ১৮ সেমি দৈর্ঘ্য ও ২৫-২৭ গ্রাম ওজনের একটি তুখোর মাছ শিকারী পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ঘন নীল ও দেহের নিচ গাঢ় কমলা রঙের। গালের চারপাশ, ঘাড় ও ডানা বেগুনি-নীল। পিঠের নিচ থেকে লেজ সমেত নীল। গলা ও ঘাড়ের পাশে সাদা পট্টি দেখা যায়। কান উজ্জ্বল নীল রঙের। চোখ বাদামি। পা, পায়ের পাতা ও নখ কমলা রঙের। ঠোঁট দুই বর্ণের। উপরের অংশ কালো ও নিচের অংশ মুখসহ বাদামি-কমলা। 

ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। নীলাভ কান মাছরাঙা পাহাড়ি নদী, প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন, জোয়ার-ভাটায় সিক্ত খাল ও সুন্দরবনে বিচরণ করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকে। পানির উপরে ঝুলন্ত ডালে মাছ শিকারের জন্য এরা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে। সুযোগ পেলেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ ও জলজ পোকামাকড়। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। এরা নদীর তীরে গর্ত খুঁড়ে প্রজননকালে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখিটি ৬- ৮টি ডিম পাড়ে।

নীলাভ-কান মাছরাঙা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। এ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বাংলা নাম: নীলাভ কান মাছরাঙ্গা
ইংরজি নাম: Blue-eared Kingfisher
বৈজ্ঞানিক নাম: Alcedo meninting (Horsfield, 1821)

হাসনাত/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়