ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যে কারণে আটকে আছে গণটিকা কার্যক্রম

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ৩ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১১:৫২, ৪ আগস্ট ২০২১
যে কারণে আটকে আছে গণটিকা কার্যক্রম

ফাইল ছবি

দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের বিস্তার বেড়েই চলেছে। আক্রান্ত ও মৃত‌্যুর হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ অবস্থায় দেশের নাগরিকদের গণ টিকার আওতায় এনে শতভাগ টিকা নিশ্চিতকরণ খুব জরুরি। 

তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা মজুত থাকার পরও কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় এই কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ইপিআই কর্মীদের প্রশিক্ষণ এখনো শেষ হয়নি। প্রশিক্ষণ শেষ হতে দেরি হওয়ার কারণে দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ রোধে গৃহীত সব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ কমাতে সরকার সারা দেশে এক সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনার অধীনে ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে ৬৯ হাজার ৩১৮ সেশনে এক কোটি ৩৪ লাখ ৪২ হাজার টিকাদানের সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে সক্ষমতা আছে তিন লাখ ডোজের; কিন্তু দেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার। এ অবস্থায় এক সপ্তাহে এক কোটি টিকা দেওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইপিআই কর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষ না হওয়ায় ব্যাপক হারে টিকা দেওয়ায় দেরি হচ্ছে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।’ 

তিনি বলেন, ‘কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত যায়গা আছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরাও নেই। সেখানে মাল্টিপল বুথ করে টিকা দিতে চাই। প্রশিক্ষণ শেষ করে ৭ আগস্ট থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে। দেশে করোনার টিকাদান কেন্দ্র আরও বাড়বে। সিটি করপোরেশন এবং গ্রামের ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, হাসপাতাল থেকে টিকা কেন্দ্র বের করে আনতে। হাসপাতালগুলোয় টিকাদান কেন্দ্র শুরু করার কারণ ছিল, টিকা নেওয়ার পর কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে ইমিডিয়েট হাসপাতাল সাপোর্ট লাগতে পারে, এসব ভেবে। গত কয়েক মাসে সেরকম বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।’ 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা ছাড়া সংক্রমণ রোধ সম্ভব নয়। এটা জানার পরও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কেন আগে থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো না, তা বোঝা যাচ্ছে না। প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকলে আরও আগে গ্রামে টিকা ছড়িয়ে দেওয়া যেত। ফলে বর্তমানের মতো পরিস্থিতির এত অবনতি ঘটত না। এখন যত আগে এই গণটিকা কার্যক্রম শুরু করা যাবে, ততই মঙ্গল। দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক সংক্রমণ চলছে। প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যু হচ্ছে দুইশরও বেশি মানুষের। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এই মুহূর্তে গণহারে টিকাদান ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোদের আরও কোনো উাপায় নেই বলেও মনে করেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. ফরহাদ মঞ্জুর বলেন, ‘চলমান টিকাদান প্রক্রিয়ায় বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মতো টিকা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, সরকারের লক্ষমাত্রা হিসেবে সপ্তাহে এক কোটি টিকাদান সম্ভব কি না, সেটিও ভাবার বিষয়। দেশের মানুষকে সচেতন করা না গেলে, টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব মতে, এ পর্যন্ত দেশের মোট ৪ দশমিক ১৬ ভাগ মানুষ এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগের ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।  

অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬ জন। ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫০ হাজার ২২৫ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১৪৬৪ জন। সিনোফার্মের প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২২ লাখ ৪৮ হাজার ১০৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬ জন। এছাড়া মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮১ জন, তবে এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ এখনো দেওয়া শুরু হয়নি। 

আগামী ৭ আগস্ট থেকে সারা দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক। 

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আমরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া শুরু করেছি। কিন্তু টিকার স্বল্পতায় ১৫ লাখ ২১ হাজার ৯৪৭ জন দ্বিতীয় ডোজ থেকে বাদ পড়েছিলেন।’

ইতোমধ্যে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৩২০ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া গেছে। আরও ছয় লাখ ডোজ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) হাতে এসে পৌঁছাবে। প্রথমে যে দুই লাখ ৪৫ হাজার টিকা এসেছিল, সেগুলো রাজধানী এবং ঢাকা বিভাগের জেলায় বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ডা. মো. শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘‘আশা করছি সোমবার (৯ আগস্ট) থেকে ঢাকার সব জেলা ও সিটি করপোরেশনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ থেকে যারা বাদ পড়েছিলেন, তাদের সেই টিকা দিতে পারব।

‘এছাড়া ৭ আগস্ট থেকে আমরা সারা দেশে আগের কেন্দ্রগুলোয় দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারব। একই সঙ্গে ৭ থেকে ১২ আগস্ট ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি চলবে। তবে যারা যে এলাকায় নিবন্ধন করবেন, সেই এলাকায় টিকা নিতে হবে। অন্য এলাকা থেকে টিকা নিলে তার তথ্য সঠিকভাবে পাওয়া যাবে না। সনদ পেতেও বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন।’

ঢাকা/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়