ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত, ঝুঁকিতে শিশুরা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ২২ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৩:৪৫, ২২ আগস্ট ২০২২
বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত, ঝুঁকিতে শিশুরা

ছবি ইন্টারনেট

প্রতি বছরের মতো এবারও জুলাই-আগস্ট মাসে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। রাজধানীতে ঢাকা শিশু হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ শিশু। তাদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থার অবনতি হলে, তাদের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের নানা শারীরিক জটিলতা বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহমিনা বেগম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা বেশির ভাগই বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসে। এদের অনেকের মধ্যে ফুসফুসে পানি, শ্বাসকষ্ট ও ইন্টারনাল ব্লিডিং দেখা যায়। ফলে এসব শিশুদের লিভার, ফুসফুস এবং কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ১৩৫ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি

শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ফরহাদ মনজুর বলেন, কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের প্রথম তিনদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। শিশুদের ঘুমানোর সময় দিনেও মশারির ভেতরে রাখতে হবে। বারান্দা বা জানালা দিয়ে মশার ঢুকা বন্ধ করার জন্য নেট ব্যবহার করতে হবে।

আগারগাঁও ঢাকা শিশু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চাপ বেড়েছে। ডেঙ্গু ইউনিটের প্রতিটি বেডেই রোগীতে পূর্ণ। এসব শিশুদের অনেকে ৪ থেকে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিশু ভর্তিসহ সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল। জুলাই মাসে এসে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। জুন মাসে ভর্তি হয়েছে ৪৬ জন। আর ১ থেকে ১৬ আগস্টের মধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছে ৪৫ জনের বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৩ শিশু। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১০ জন। এ বছর চার শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছে।

তিনি জানান, ভর্তি শিশুদের বেশির ভাগই বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে অনেকর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। কেউ কেউ পেট ব্যথায় ভোগে, কারো ফুসফুসে পানি আসে, শ্বাসকষ্ট হয়। কারো কারো আব‌ার ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়। এসব সমস্যার কারণে শিশুদের লিভার, ফুসফুস, কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অরগান ইনভলভ হয়। সে কারণে শিশু রোগীদের অনেকদিন ধরে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে।

শিশু হাসপাতালে ভর্তি সাত বছরের শিশুরোগী আহমেদের মা রিজিয়া খানম জানান, পাঁচদিন ধরে জ্বর আহমেদের। গতকাল (রোববার) চিকিৎসকরা বলেছেন, আমার ছেলের রক্তের প্লাটিলেট কমে ১৭ হাজারে নেমে গেছে। আজ বেড়ে ৩৫ হাজার হয়েছে। এখনও ভয় কাটেনি। চিকিৎসকরা বলেছেন, অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নিতে হবে। আম‌ার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন।

আরেক রোগী ১১ বছরের মাহমুদা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালটিতে। তারও ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রির মধ্যে জ্বর ওঠানামা করছে। এক সপ্তাহ ধরে একই অবস্থা, জ্বর কমছে না। মাহমুদার বাবা জানান, মেয়েকে আইসিইউতে ভর্তি করাতে হতে পারে বলে ডাক্তাররা বলেছেন। 

ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখভাল ভালোভাবে হচ্ছে না। এতে বিভিন্ন জায়গায় যে এডিসের ঘনত্ব ও সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, তা জন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত  উদ্বেগজনক। এডিস মশা সংক্রামক মশা, এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়। তাই আমরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে অধ্যাপক ডা. ফয়জুর রহমান বলেন, কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথম ৩ দিনের মাঝে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিতে হবে। শিশুদের দিনের বেলাও মশারির মাঝে রাখতে হবে। বারান্দা বা জানালায় মশা যাতে না ঢুকতে পারে, সেজন্য মশার নেট ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। অভিভাবকদের বাসার আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা ও বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।

অপরদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে রোববার (২১ আগস্ট) জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৫ জন রোগী। মারা গেছেন একজন। মোট মারা গেছেন ১৯ জন।

/মেসবাহ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়