ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভূমিকম্পে মরক্কোর মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে যে গ্রাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২২:৫২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ভূমিকম্পে মরক্কোর মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে যে গ্রাম

ধ্বংসস্তূপের দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন এক নারী। তিনি একজন মা কিন্তু এমন একজন মা যিনি তার দুই কন্যাকে হারিয়েছেন। গত শুক্রবার ২০ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে কী ঘটেছে তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম।

ওই নারী তার দুই মেয়েকে তাদের দাদার বাড়িতে রেখে এসেছিলেন। দাদা-দাদির আদর ও তাদের কাছে গল্প শুনে ঘুমাতে পছন্দ করতো তার দুই মেয়ে। যখনই দাদার বাড়িতে বেড়াতে যেত, প্রতিটা মুহূর্ত আনন্দে কাটাতো। অথচ তারা সবাই এখন মৃত।

স্বজন হারানোর এমন শোকের দৃশ্য মরক্কোর টেনজির্ট গ্রামের প্রতিটি পরিবারে। অন্যান্য দিনের মতোই গ্রামবাসী শুক্রবার রাতে ঘুমিয়েছিল। কিন্তু ২০ সেকেন্ডের যে কম্পনে তাদের ঘুম ভাঙে, সেই কম্পন তাদের গ্রামকে মরক্কোর মানচিত্র থেকেই মুছে দিয়েছে।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে মরক্কোর মারাকেশ শহর ও এর আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ইতিমধ্যে দুই হাজার ছাড়িয়েছে। বেশির ভাগ প্রাণহানি ঘটেছে পাহাড়ি এলাকায়, যেখানে দ্রুত পৌঁছানোটা কঠিন। আহত হয়েছে কমপক্ষে দুই হাজার মানুষ। 

মারাকেশ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে দুর্গম আটলাস পাহাড়ে অবস্থিত টেনজির্ট। ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকারীরা গ্রামটির দিকে তেমন মনোযোগ দিতে পারেননি। কারণ দুর্গম পথ ও পাহাড়ের উপরে অবস্থিত হওয়ায় গ্রামটি খুঁজে বের করাটা কঠিন। পাহাড়ি রাস্তার এমন এক সরু বাঁকে গ্রামটির অবস্থান যে, সেদিকে দৃষ্টি না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। 

মারাকেশ বা অন্যান্য শহর থেকে কাজের সন্ধানে বা ভূমিকম্পের পর স্বজনদের খোঁজখবর নিতে যারা এখানে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন যানবাহনের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন। কারণ টেনজির্টে যাওয়া-আসার জন্য কোনো পরিবহন নেই। পুরো গ্রামের মধ্যে কেবল একজনের কাছে মাত্র একটি ট্রাক রয়েছে। আর সেই ট্রাকটির অবস্থায়ও খুব ভালো নয়। এখন ভূমিকম্পে আহতদের মারাকেশ হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার কাজে তিনি ট্রাকটি ব্যবহার করছেন।

মোহাম্মদ নামে গ্রামের এক বাসিন্দা বেদনার্ত কণ্ঠে বলেন, ‘টেনজির্ট ছিল। কিন্তু এখন আর এখানে কিছুই নেই।’

তিনি জানান, গ্রামটিতে ১১০টি বাড়ি ছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষজনকে বের করে আনার মতো যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেগুলো এই গ্রামে নেই। গ্রামবাসীরা হাতের কাছে যা পেয়েছেন, তা দিয়েই উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন। এখানকার ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়িগুলো ইট ও পাথর দিয়ে এমনভাবে তৈরি যে, এগুলো শক্তিশালী ভূমিকম্পে টিকে থাকার উপযোগী নয়। তাই ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর এসব ঘর-বাড়ির বেশির ভাগই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। 

গ্রামটিতে ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষজন এখন রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমায়। গ্রীষ্মকাল হওয়া সত্ত্বেও রাতে এখানে তীব্র শীত অনুভূত হয়।

আবদ আল-রহমান নামে গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত রাতে, আমরা ঠান্ডায় প্রায় মারা যাচ্ছিলাম। নারী ও শিশুদের আমরা কম্বল দিয়ে রক্ষা করতে পেরেছিলাম, আর পুরুষরা সকাল পর্যন্ত কম্বল ছাড়াই ঠান্ডার হাত থেকে বেঁচে থাকার লড়াই করেছিল।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘যেটা আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় তা হলো, শিশুদের কান্না। রাতে অসহনীয় ঠান্ডা পড়ে। ঠান্ডার কারণে আমরাও কান্নাকাটি করি, কিন্তু তা নীরব চিৎকার।’ 

গ্রামবাসীরা ত্রাণ সহায়তার দীর্ঘসূত্রিতায় খুবই অসন্তুষ্ট। রোববার সন্ধ্যা নাগাদ কেবল একজন সরকারি কর্মকর্তা পরিদর্শনে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা। ব্যক্তি উদ্যোগে দান করা কিছু সামগ্রী তাদের কাছে পৌঁছেছে, তবে এখনও আশ্রয়, পানি, খাবার এবং ওষুধের তীব্র অভাব রয়েছে তাদের।

ঢাকা/ফিরোজ/শাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়