ঢাকা     শুক্রবার   ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২২ ১৪৩১

পশ্চিমা অস্ত্র রাশিয়ায় আঘাত করলে ‘গুরুতর পরিণতি’ হবে, পুতিনের সতর্কবার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৯ মে ২০২৪   আপডেট: ১১:২৩, ২৯ মে ২০২৪
পশ্চিমা অস্ত্র রাশিয়ায় আঘাত করলে ‘গুরুতর পরিণতি’ হবে, পুতিনের সতর্কবার্তা

ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো যদি ইউক্রেনকে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালাতে দেয় তাহলে ‘গুরুতর পরিণতি’ হবে। উজবেকিস্তানে এক বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর এনডিটিভির।

ন্যাটোর কিছু সদস্য এবং জোটের প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ দুই বছরেরও বেশি যুদ্ধের পর ইউক্রেনকে রাশিয়ার মাটিতে হামলা চালানোর জন্য তাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানোর প্রতিক্রিয়ায় পুতিনের এ মন্তব্য এলো।

পুতিন বলেন, ‘এই ক্রমাগত উত্তেজনা বৃদ্ধি গুরুতর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

রুশ নেতা বলেন, ‘ইউরোপে, বিশেষ করে ছোট দেশগুলোতে, তারা কী নিয়ে খেলছে সে সম্পর্কে তাদের সচেতন হওয়া উচিত। ইউরোপীয় অনেক দেশের ‘ছোট অঞ্চল’ এবং ‘ঘন জনসংখ্যা’ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবং এই বিষয়টি, যা তাদের মনে রাখা উচিত রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে আঘাত করার কথা বলার আগে, এটি একটি গুরুতর বিষয়।’

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইউক্রেনের বাহিনী হামলা চালালেও এর দায়ভার পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহকারীদের ওপর বর্তাবে।’

পুতিন আরও জানান, তিনি বিশ্বাস করেন, পশ্চিমা সামরিক প্রশিক্ষকরা ইতিমধ্যে ইউক্রেনে ভাড়াটে হিসেবে গোপনে কাজ করছেন। এখন ফ্রান্সের মতো দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পাঠালে তা উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

পুতিন বলেন, ‘এটি ইউরোপে একটি গুরুতর সংঘাতের দিকে, একটি বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে আরেকটি পদক্ষেপ।’

ইউক্রেনের শীর্ষ কমান্ডার সোমবার ঘোষণা করেছেন, কিয়েভে সামরিক প্রশিক্ষক পাঠানোর বিষয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের ভূখণ্ডে যারাই থাকুক না কেন, আমরা যা প্রয়োজন মনে করি তাই করব।’

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল ব্রাসেলসে ইইউ প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের পর জানিয়েছেন, ইউক্রেনে সামরিক প্রশিক্ষক পাঠানোর বিষয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো বিভক্ত।

জার্মানিসহ আরও কিছু দেশ এমন পদক্ষেপ নেওয়ার বিরোধিতা করেছে। দেশগুলোর আশঙ্কা, এটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘাত কাছাকাছি টেনে আনতে পারে।

ইইউ দেশগুলো ২০২২ সাল চালু করা একটি ব্লক-ওয়াইড মিশনের অধীনে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বাইরে ৫০ হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য জুনে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি সম্মেলন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভের সামরিক ও শিল্প ক্ষমতায় ক্রমাগত হামলার অভিযোগ এনে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানার জন্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য উপাদান সরবরাহ করার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের চাপ দিচ্ছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তৃতীয় বছরে পড়েছে। চলমান রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেন অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংকটে ভুগছে জানিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আরও অস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে, বিশেষত করে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অভাব মোকাবিলায় সাহায্য চেয়েছে।

এখনও পর্যন্ত কিয়েভের মিত্ররা দাবি করছে, তাদের অস্ত্র রাশিয়ার মাটিতে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করা হবে না।

তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি মনে করেন ইউক্রেনকে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানার অনুমতি দেওয়া উচিত।

হোয়াইট হাউস অবশ্য মার্কিন সরবরাহকৃত অস্ত্রের জন্য এমন সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন নেই। আমরা রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য মার্কিন সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহারকে উৎসাহিত বা সক্ষম করি না।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার সাম্প্রতিক ইউরোপ সফরে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশ্বকে এই যুদ্ধে ক্লান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ধৈর্য হারা হলে রাশিয়া জিতে যাবে।’ 

জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনীয়দের জন্য এটা নিশ্চিত হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্ব যেন ক্লান্ত না হয়। অন্যথায় কোনো ন্যায়বিচার হবে না, পৃথিবী বদলে যাবে, পুতিনের মতো মানুষদের দ্বারা পৃথিবী বদলে যাবে।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘বিশ্ববাসীর বুঝা উচিত, রাশিয়ার শুরু করা যুদ্ধে ইউক্রেনের মানুষ ক্লান্ত নয়।’ 

জেলেনস্কি আগামী মাসে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শান্তি সম্মেলনে কিয়েভের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করার চেষ্টা করছেন। তিনি এই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রুর সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘যদি (বাইডেন) উপস্থিত না হন, তাহলে বিষয়টি পুতিনের প্রশংসা করার মতোই হবে।’ 

জেলেনস্কির দাবি, পুতিন ‘খুব ভীত’ এই শান্তি সম্মেলন নিয়ে; যেটির উদ্দেশ্য সংঘাতের অবসান ঘটাতে প্রয়োজনীয় শর্তাবলীতে একমত হওয়া। জেলেনস্কি মতে, পুতিন এই শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছেন। 

এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের যে কোনো সম্মেলন ‘আশাহীন’।

/ফিরোজ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়