ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তাদের কী অপরাধ ছিল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ৫ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৬:৫২, ৫ এপ্রিল ২০২৫
তাদের কী অপরাধ ছিল?

গত সপ্তাহে গাজা উপত্যকার রাফা শহরের বাইরে বুলডোজার দিয়ে খননের পর একটি গর্তে ১৫ জন প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এই প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীরা জানতেন যে তারা অন্যদের বাঁচানোর জন্য তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। তবে ২৩ মার্চ ভোরে তাদের জন্য যা অপেক্ষা করছিল তার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না।

৪৫ বছর বয়সী রেড ক্রিসেন্ট অ্যাম্বুলেন্স অফিসার এবং প্যারামেডিক সালেহ মোয়ামার দুইবার মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন।

সালেহ এর ভাই বিলাল জানান, যুদ্ধের শুরুতে সালেহকে হাসপাতালে রোগী পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যখন তার গাড়িটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে আক্রান্ত হয়েছিল। চালক তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হন এবং সালেহর বুকে একটি গুলি হৃদপিণ্ডের কাছে বিদ্ধ হয়। নিজের প্রাথমিক চিকিৎসা ওই অবস্থাতেই নিজে করার পর তিনি তার আসনের নিচে নেমে যান এবং তার সহকর্মীদের রেডিওতে দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে গাড়িটিকে গোলাগুলির বাইরে সরিয়ে আনেন।

সালেহ তিন মাস হাসপাতালে কাটিয়ে তারপর কাজে ফিরে আসেন। কিছুদিন পরেই রাফার কাছে একটি উদ্ধার অভিযানে তার অ্যাম্বুলেন্সে আবার গুলি চালানো হয়। ওই সময় সালেহ ডান কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন। 

বিলাল বলেন সুস্থ হয়ে হয়ে কাজে ফেরার আগে সালেহ বলেছিল, “তার জন্য যা কিছু নির্ধারিত, তাই ঘটবে।”

২২ মার্চ রাতের শিফটে বের হওয়ার আগে, সালেহ তার স্ত্রী, তাদের ছয় সন্তান এবং তার ভাইয়ের দুই সন্তানের জন্য প্রচুর পরিমাণে গৃহস্থালি জিনিসপত্র কিনেছিলেন।

বিলাল বলেন, “সে বলেছিল যে এটি ভবিষ্যতে তাদের উপকার করবে। মনে হচ্ছিল যেন তার মনে হচ্ছে সে আর ফিরে আসবে না।”

২৩ মার্চ ভোরে যখন রাফাহর তেল আল-সুলতান এলাকায় বিমান হামলায় লোকজন আহত হওয়ার খবর আসে, তখন সালেহ একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। হতাহতের সংখ্যা দেখে তিনি আরো অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিলেন, আহতদের উদ্ধার করেছিলেন এবং হাসপাতালে ফিরে এসেছিলেন। ফিরে এসে তিনি জানতে পারেন, ঘটনাস্থলে যাওয়া একটি অ্যাম্বুলেন্সের রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সালেহের সহকর্মী মুস্তফা খাফাজা ওই অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। ইসরায়েলিদের তীব্র গুলিবর্ষণের শিকার হয়েছিল এবং ভোর ৪ টা ৩০ মিনিটে যখন তিনি শুনতে পান  খাফাজা এবং তার সহকর্মী প্যারামেডিক এজ্জ আল-দিন শাত নিখোঁজ। খাফাজা ও এজ্জ আল-দিন শাত ইতিমধ্যেই মারা গেছেন সেই তথ্য তখনো জানতে পারেননি সালেহ।

ভোর হওয়ার আগে সালেহ রেড ক্রিসেন্ট অ্যাম্বুলেন্স, একটি উজ্জ্বল লাল সিভিল ডিফেন্স ফায়ার ট্রাক এবং জাতিসংঘের একটি গাড়িসহ উদ্ধারকারী কাফেলা তৈরি করেন। সব মিলিয়ে ১৩ জন প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মী তাদের নিখোঁজ সহকর্মীদের খুঁজতে যান।

হানশিন এলাকায় যাওয়ার পরে সালেহসহ ১৩ জনকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে। ইসরায়েলি বুলডোজার দিয়ে গর্ত খনন করা হয়। ওই ১৩ জনকে হত্যার পরে গাড়িসহ সেই গর্তে চাপা দেওয়া হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার এক সপ্তাহ পরে লাশের সন্ধান পায়।

দুজন প্রত্যক্ষদর্শী গার্ডিয়ানকে বলেছেন, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সালেহকে বেঁধে রেখেছিল। অন্যান্যদেরও হাত বা পা বাঁধা ছিল।”

ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ বিলাল বলেন, “এই প্যারামেডিকরা মানবিক সেবা প্রদান করছিলেন। তারা কোনো হুমকি বা অস্ত্র বহন করতেন না। তাদের কী অপরাধ ছিল যে তাদের এভাবে হত্যা করা হল?”

ঢাকা/শাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়