আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে পদত্যাগ করেছেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
সংসদে আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ওয়ুন-এরদেন লুভসান্নামসরাই পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (৩ জুন) দেশটির গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে দেশটির দূতাবাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
মঙ্গোলীয় সংবাদমাধ্যম আইকন অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী ওয়ুন-এরদেন লুভসান্নামসরাই ৪৪টি ভোট পেয়েছেন, যা প্রয়োজনীয় ৬৪টি ভোটের চেয়ে অনেক কম।
দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ুন-এরদেনের বিরুদ্ধে রাজধানী উলানবাটরে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার ভোরে এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটের আগে, ওয়ুন সতর্ক করে বলেছিলেন, “ভোটের ফলে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে এবং মঙ্গোলিয়ার নতুন গণতন্ত্রকে নাড়া দিতে পারে।”
তিনি বলেন, “যদি শাসনব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে আসতে না পারে, তাহলে এটি সংসদীয় শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা হারাতে পারে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থাকে পতনের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।”
তিনি তার সততার পক্ষে কথা বলেন কিন্তু একটি ভুল স্বীকার করেছেন যে, “বড় প্রকল্পগুলোতে খুব বেশি সময় ব্যয় করা এবং সামাজিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে পর্যাপ্ত মনোযোগ না দেওয়া।”
ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর পার্লামেন্টে ওয়ুন-এরদেন বলেন, “মহামারি, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক চাপের সময় দেশের ও জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য ছিল এক গর্বের বিষয়।”
মঙ্গোলিয়ার সংসদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ওয়ুন-এরদেন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, যা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
ওয়ুন-এরদেন চার বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গত বছর, নির্বাচনী সংস্কারের পর সংসদের আসন সংখ্যা ৭৬ থেকে বাড়িয়ে ১২৬ করা হয়েছিল। এর ফলে একটি জোট সরকার গঠিত হয়।
রাশিয়া ও চীনের মধ্যে স্থলবেষ্টিত মঙ্গোলিয়া তার দলীয়-রাষ্ট্র যুগের পরে আরো গণতান্ত্রিক হওয়ার জন্য লড়াই করে আসছে।
দেশটির অনেক নাগরিক বিশ্বাস করেন, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা কয়লা খনি খাতের উল্লম্ফনের সুফল সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী ভোগ করছে। আর সাধারণ জনগণ হচ্ছে বঞ্চিত।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ওয়ুন-এরদেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে মঙ্গোলিয়ার দুর্নীতি আরো বেড়েছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভারত ও উদীয়মান এশিয়ান অর্থনীতির ডেপুটি ডিরেক্টর এবং সিনিয়র ফেলো এরিন মারফির মতে, “গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করা খুবই কঠিন, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন মঙ্গোলিয়াকে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোও মোকাবিলা করতে হবে, যা জনগণের হতাশার একটি প্রধান উৎস।”
তিনি বলেন, “আমাদের এখন দেখতে হবে পরবর্তীতে কী ঘটে এবং নতুন সরকার কীভাবে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করে।
মারফি বলেন, “যদিও মঙ্গোলিয়ায় গণতন্ত্র এখনো বিকশিত হয়নি, কিন্তু এটি শিকড় গাড়ছে।”
ঢাকা/ফিরোজ