গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ ‘লজ্জাজনক কেলেঙ্কারি’: ম্যাক্রোঁ

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য প্রবেশে ইসরায়েলি অবরোধকে ‘একটি লজ্জাজনক কেলেঙ্কারি’ ও ‘নিন্দনীয় ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তার পথ উন্মুক্ত করতে হবে এবং সেখানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে।
সোমবার (৯ জুন) ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিসে-তে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনের ফাঁকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ম্যাক্রোঁ গত তিন মাস ধরে গাজায় সাহায্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টিকারী চলমান বিধিনিষেধের সমালোচনা করেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, “এটি গাজায় একটি কেলেঙ্কারি, যা চলছে। মার্চের শুরু থেকে যা ঘটছে তা লজ্জাজনক।” তিনি যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং মানবিক অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি অবরোধ ভেঙে গাজায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করার সময় ইসরায়েলের হাতে আটক বেসামরিক জাহাজ ম্যাডলিনের পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন।
ত্রাণবাহী জাহাজটিতে ১২ জন আন্তর্জাতিক অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন, যার মধ্যে সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং ফরাসি-ফিলিস্তিনি ইউরোপীয় সংসদের সদস্য রিমা হাসান এবং অন্যান্য ফরাসি নাগরিকও ছিলেন।
ম্যাক্রোঁ বলেন, “ফ্রান্স জাহাজে থাকা তার নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ‘সতর্ক’ ছিল এবং তাদের কনস্যুলার সুরক্ষা ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টতই ইসরায়েলকে বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যাতে তাদের কনস্যুলার সুরক্ষা দেওয়া হয় এবং তারা ফ্রান্সের মাটিতে ফিরে যেতে পারেন।”
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোটও একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, ফ্রান্স শুরু থেকেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছে যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে।
ব্যারোট উল্লেখ করেন, “আমরা অ্যাক্টিভিস্টদের প্রকল্প (গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া) সম্পর্কে জানার পরপরই ঝুঁকি সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করেছিলাম। আমরা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।”
তিনি আরো বলেন, “অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল তাদের ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়ার পর ফ্রান্স তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছে, যাতে তাদের কনস্যুলার সহায়তা প্রদান করে এবং দ্রুত প্রত্যাবর্তন সহজতর করে।”
ইসরায়েলি অবরোধ উপেক্ষা করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে ত্রাণবাহী জাহাজ ম্যাডলিন গত ১ জুন ইতালির সিসিলির কাতানিয়ার সান জিওভানি লি কুটি বন্দর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। গতকাল সোমবার (৯ জুন) জাহাজটিতে থাকা ১২ জন অ্যাক্টিভিস্টকে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী।
জাহাজটি গাজার জনগণের জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহন করছিল, যার মধ্যে ছিল শিশুর ফর্মুলা, আটা, চাল, ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণের কিট, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ক্রাচ এবং শিশুদের প্রস্থেটিক্স।
মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় খাবার, পানি, ওষুধসহ সব ধরনের সহায়তা প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে চরম মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে গাজার বাসিন্দারা। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ