ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গাজা শহর দখলে নতুন অভিযান, নিহত আরো ৮১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ২১ আগস্ট ২০২৫  
গাজা শহর দখলে নতুন অভিযান, নিহত আরো ৮১

গাজা শহর দখলে নতুন অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি হামলার কারণে অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরালো হলেও ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা শহর দখলের পরিকল্পিত অভিযানের প্রথম ধাপ শুরু করেছে। গাজা শহরে এখনও প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আছেন।

বুধবার (২০ আগস্ট) ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে অন্তত ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিন অনাহারে মারা গেছে আরো তিন জন। ফলে এ পর্যন্ত না খেতে পেরে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৯ জনে, যাদের মধ্যে ১১২ জন শিশু। খবর আলজাজিরার। 

আরো পড়ুন:

দক্ষিণ গাজায় বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে বোমা বর্ষণে তিন জন নিহত হন। এছাড়া, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গুলিতে ফিলিস্তিনের জাতীয় বাস্কেটবল দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় মোহাম্মদ শালান নিহত হন। বুধবারই অন্তত ৩০ জন ত্রাণসন্ধানী ইসরায়েলি গুলিতে প্রাণ হারান।

ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ ও হামলার কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজাজুড়ে অপুষ্টি দ্রুত বাড়ছে। ডব্লিউএফপি বলেছে, “এটা শুধু ক্ষুধা নয়, এটা অনাহার।”

সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, অপুষ্টি হলো নীরব ঘাতক, যা আজীবন বিকাশগত ক্ষতি ঘটায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। ফলে সাধারণ অসুখও মরণঘাতী হয়ে ওঠে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজা শহরে প্রতি তিন জন শিশুর মধ্যে অন্তত একজন এখন অপুষ্টিতে ভুগছে।

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন গিশা জানিয়েছে, গাজার সর্বত্র চলমান অনাহার সংকটকে হালকা করে দেখানো এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েলি সরকার। সংগঠনটির দাবি, সামরিক অভিযানের প্রথম দিন থেকেই ‘ইসরায়েল ত্রাণ প্রবেশাধিকারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।’
গিশা বলেছে, “ইসরায়েল এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং করে চলেছে, যা গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে।”

এদিকে, ইউএনআরডব্লিউএ আবারও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থার চিকিৎসক ডা. হিন্দ বলেছেন, “আমরা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে কাজ করছি।” 

আরেক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, অনেক সময় কর্মীদের প্রচণ্ড রোদে দীর্ঘ পথ হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়, তারপর তারা জরুরি সহায়তা দিতে কাজ শুরু করেন।

গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, ভয়াবহ জ্বালানি সংকট তাদের উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। তারা বলেছে, অনেক সময় গাড়ি অভিযানের পথে বন্ধ হয়ে যায়—কোথাও জ্বালানির অভাবে, কোথাও রক্ষণাবেক্ষণের যন্ত্রাংশ না থাকায়। 

সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, “চলমান ইসরায়েলি গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যে আমরা বিশাল মানবিক সংকটের মুখোমুখি।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা আগামী কয়েক সপ্তাহে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকবে গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। এরইমধ্যে শহরের জাইতুন এলাকা ও উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় হামলা আরো জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, এ অভিযান আরেক দফা বৃহৎ বাস্তুচ্যুতির কারণ হবে, যেসব মানুষ যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের স্বজনরা গাজা শহর দখলের পরিকল্পনায় সরকারের অনুমোদনকে নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করা পরিবারগুলোর জন্য হৃদয়ে ছুরিকাঘাতের মতো।

হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই অগ্রযাত্রা প্রমাণ করে তারা নিরীহ বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংস যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনি শহর ধ্বংস করে অধিবাসীদের উচ্ছেদ করতে চায়। সংগঠনটি আরও বলেছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে নেতানিয়াহুর সাড়া না দেওয়া প্রমাণ করে তিনি বন্দিদের মুক্তি নিয়ে আন্তরিক নন।
এদিকে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চলছে। সর্বশেষ প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে বন্দি বিনিময় এবং ত্রাণ সরবরাহের পথ প্রসারিত করার কথা বলা হয়েছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি আগেই বলেছেন, যেকোনো চুক্তি নিশ্চিত করতে হবে যে “সমস্ত বন্দিকে একবারে মুক্তি দেওয়া হবে এবং আমাদের শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে।” 

আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, “আরব রাষ্ট্রগুলোর উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়া, যাতে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।”

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়