ঢাকা     রোববার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইসরায়েলকে সোমালিল্যান্ডের স্বীকৃতি প্রত্যাহারের দাবি সোমালিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ০৯:৩৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসরায়েলকে সোমালিল্যান্ডের স্বীকৃতি প্রত্যাহারের দাবি সোমালিয়ার

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহির সঙ্গে ভিডিও কল করে স্বীকৃতি ঘোষণা করেন

সোমালিয়া তাদের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ‘সোমালিল্যান্ড’-কে দেওয়া ইসরায়েলের স্বীকৃতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এই পদক্ষেপকে ‘আগ্রাসন যা কখনোই সহ্য করা হবে না’ হিসেবে অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটি।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমালিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলি ওমর বলেন, সরকার এই ‘রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন’ এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করবে।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েল বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার একদিন পর এই কড়া প্রতিক্রিয়া এলো। এই ঘটনাটি আফ্রিকা ও আরব দেশগুলোর মধ্যে তীব্র নিন্দার ঝড় তুলেছে। পাশাপাশি, এই পদক্ষেপটি ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার কথিত কোনো ইসরায়েলি পরিকল্পনার অংশ কি না- তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

১৯৯১ সালে একটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর সোমালিল্যান্ড সোমালিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। স্বঘোষিত এই প্রজাতন্ত্রটি নিজস্ব মুদ্রা, পতাকা এবং সংসদ গঠন করলেও এর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে।

সোমালিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ওমর বলেন, “আমাদের সরকার এবং জনগণের কাছে এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য বা সহনীয় হবে না। আমরা আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সরকার ইসরায়েল রাষ্ট্রকে তাদের এই বিভাজনমূলক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার জোরালো পরামর্শ দিচ্ছে।”

সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি (সিরো) গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে, একটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি খুব সন্নিকটে। তবে তিনি তখন কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সোমালিল্যান্ডের রাজধানী হারগেইসার মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছিল, যেখানে বাসিন্দাদের জানানো হচ্ছিল যে, স্বীকৃতি আসছে।

সোমালিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ওমর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের আরো বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যেই ইসরায়েল সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “অন্যতম একটি আকাঙ্ক্ষা হলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করা। এই ইস্যুতে ইসরায়েলের লক্ষ্য এখন সবার জানা।”

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সোমালিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে। তারা মনে করিয়ে দিয়েছে যে, ইসরায়েল এর আগে সোমালিল্যান্ডকে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যা একটি ‘রেড লাইন’।

অন্যদিকে, শনিবার সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সিরো ইসরায়েলি পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এটি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয় এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য কোনো হুমকিও নয়।

শুক্রবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামনি নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সোমালিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি বিবৃতি জারি করে। সেখানে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ সোমালিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ এবং একটি অবৈধ পদক্ষেপ। সোমালিল্যান্ড সোমালি ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।’

নেতানিয়াহু এই কূটনৈতিক সাফল্যকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর চেতনার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং জানিয়েছেন যে, সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি সোমালিল্যান্ডের পক্ষে কথা বলবেন। নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট সিরোকে ইসরায়েল সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং সিরো তা গ্রহণ করেছেন।

তবে ট্রাম্প এই ইস্যুতে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র নেতানিয়াহুর থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। নিউ ইয়র্ক পোস্টকে ট্রাম্প জানান, তিনি ইসরায়েলের এই পথ অনুসরণ করবেন না। সোমালিয়ার গণপূর্ত মন্ত্রী আইয়ুব ইসমাইল ইউসুফ ট্রাম্পের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “সমর্থনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট।”

আফ্রিকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী ইউসুফ সোমালিল্যান্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির যেকোনো উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে। আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইতও এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে একে একটি আরব ও আফ্রিকান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর ‘উস্কানিমূলক ইসরায়েলি আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও, সোমালিল্যান্ডে হাজার হাজার মানুষ শুক্রবার আনন্দ মিছিল করেছে। ৩০ বছরের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান হিসেবে তারা একে উদযাপন করছে। শহরের জাতীয় জাদুঘরে ইসরায়েলি পতাকা প্রদর্শন করা হয়।

উল্লেখ্য, ঐতিহাসিকভাবে সোমালিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তিক্ত। এর মূলে রয়েছে সোমালিয়ার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইথিওপিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়