ঢাকা     রোববার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ক্ষমতা পেলে লাভ পার্ক করব : শফিক রেহমান

ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্ষমতা পেলে লাভ পার্ক করব : শফিক রেহমান

শফিক রেহমান

শফিক রেহমান
ভালোবাসা দিবসের প্রসঙ্গ এলেই যে মানুষটির চেহারা সবার সামনে ভেসে ওঠে, তিনি হলেন শফিক রেহমান। গুণী লেখক-সম্পাদক এবং উপস্থাপক হিসেবে দেশের বাইরেও রয়েছে তার যথেষ্ট সুনাম। মানুষের প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে রয়েছে তার বিস্তর গবেষণা। জনপ্রিয় টিভি শো ‘লাল গোলাপ’ উপস্থাপন করে তিনি এখন খ্যাতির শীর্ষে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব বিশেষ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডিকে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তানজিনা ইভা

রাইজিংবিডি : ভালোবাসা দিবস নিয়ে কাজ করার ভাবনা কেন আসে?

শফিক রেহমান : ব্যক্তিগত জীবনে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি আমি এখনো ভাবতে পারি না, পারিবারিকভাবে বিয়ে করে দুজন নর-নারী কী করে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়! আরো বিস্ময়কর হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, যারা ভালোবেসে বিয়ে করেছেন তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাটা অনেক বেশি। আর যারা পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছেন, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক কম। তাই বলে কি ভালোবেসে বিয়ে করা যাবে না? আমি মনে করি, অবশ্যই ভালোবেসে বিয়ে অর্থাৎ আগে জেনেশুনেই বিয়ে করা উচিত। এই চিন্তা থেকে বলতে পারেন আমি ছোটবেলায় ভালোবাসার প্রতি ঝুঁকে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই ভালোবাসার বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি। অল্প বয়সে ভালোবেসে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে লন্ডনে চলে যাই। আর সেখানে তো ভালোবাসার ছড়াছড়ি! লন্ডনেও ভালোবাসার বিয়েতেও বিচ্ছেদ বেশি।

তখন থেকে ভাবি কী করে মানুষের মধ্যে ভালোবাসাটা ছড়িয়ে দেওয়া যায়। অল্প বয়স থেকেই দেখে আসছি আমাদের দেশে হিংসা-বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত বেশি। এটা কোনো অবস্থাতেই ঠিক না। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে- এটাই স্বাভাবিক। ভালোবাসা দিয়েই মানুষকে জয় করতে হবে। এ জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। সেই চেষ্টা থেকেই ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ ভালোবাসা দিবস ঘিরে শুরু হয় আমার পথ চলা। এ ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

রাইজিংবিডি : আপনার মতে ভালোবাসার সংজ্ঞা কী?

শফিক রেহমান :  আমি সব সময় বলে থাকি, ভালোবাসাটা চিকেন পক্সের মতো। এটা সবারই হয়। যত ছোট বয়সে হয় ততই ভালো। তাতে দাগ থাকে না। যদিও থাকে তা দু-একটা। আর বেশি বয়সে হলে বেশি দাগ থাকবে। ভালোবাসাটা যত দ্রুত হবে ততই ভালো।

রাইজিংবিডি : আপনার জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান লাল গোলাপ। এই অনুষ্ঠানের নাম লাল গোলাপ দিলেন কেন?

শফিক রেহমান : আমি সব সময় গল্প, উপন্যাসসহ সব ধরণের লেখা কিংবা অনুষ্ঠানের নামের ব্যাপারে সচেতন থাকি।  নামটা একটা সাইনবোর্ড। লাল গোলাপ নামটা খুবই সহজ। লাল গোলাপ নাম বললেই একটা কল্পনা আসে। এটা খুবই সাধারণ নাম। এটা সব সময় পাওয়া যায়। আর এর মাধ্যমে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যায় সহজে।

রাইজিংবিডি : প্রেমে মিলন-বিচ্ছেদ দুটোই রয়েছে। যারা সফল হয়নি তাদের উদ্দেশে আপনার মন্তব্য?

শফিক রেহমান : তাদের উদ্দেশে সব বলতে পারি । সন্ধ্যা মুখার্জির একটি গান আছে- ‘হয়তো কিছুই নাহি পাব, তবু দূর হতে তোমায় ভালোবেসে যাব’। এটাতে হয়তো মনে কিছু শান্তি দিতে পারে। একটা কথা আছে, প্রেমে পড়া সহজ কিন্তু ধরে রাখা কঠিন। যারা প্রেম করে বিয়ে করতে পারেন নি তারা একটু ধৈর্য ধরে দেখুন, তার প্রেমিক বা প্রেমিকা এখন কেমন আছেন?

রাইজিংবিডি : আপনার দৃষ্টিতে ঢাকা শহরে প্রেম করার সবচেয়ে ভালো জায়গা কোনটি?

শফিক রেহমান : ঢাকা শহরে প্রেম করার ভালো কোনো জায়গা নেই। ১৪ ফেব্রুয়ারির একটি অনুষ্ঠানে আমি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি এসেছিলেন এবং বলেছিলেন, পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় এলে একটি লাভ পার্ক করে দেবেন। বর্তমান সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, মানুষের জন্য একটি লাভ পার্ক করে দেন। আর ব্যক্তিগতভাবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি রোডের নাম লাভ রোড নামকরণ করেছিলাম আমি। তবে আমি যদি ক্ষমতা পেতাম তাহলে দুইটা জিনিস করতাম। ভালোবাসা দিবসে জাতীয় ছুটি ঘোষণা আর একটি লাভ পার্ক করা। যেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কিন্তু সিসি ক্যামেরা থাকবে না।

রাইজিংবিডি : অনেকেই বলে প্রথম প্রেম কখনো ভোলা যায় না। এটা কি ঠিক?

শফিক রেহমান : সবকিছুর শুরু বা প্রথম বিষয়টি মানুষের মনে গেঁথে থাকে। যেমন প্রথম স্কুল দিন, প্রথম পরীক্ষার দিন, প্রথম ভ্রমণে যাওয়ার দিন ইত্যাদি। আর প্রথম প্রেম- এটা মনে না থাকার তো কোনো কারণই নেই। প্রথম কারো হাত ধরলে মনে থাকবে- এটাই তো স্বাভাবিক।

রাইজিংবিডি : সেকালের প্রেম আর একালের প্রেমের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

শফিক রেহমান : সেকালে কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক প্রেম হতো। তখন বই পড়া ছিল। তখন মননশীলতা ছিল। তাই  গভীরতাটাও বেশি ছিল। আর এখন মোবাইল, ফেসবুক ভিত্তিক যে প্রেম, তার গভীরতা একটু কম। আগে প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে একটি চিঠি পৌঁছে দিতে কত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। আর এখন প্রেমটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। আর যে প্রেম সহজে হয় তা দ্রুত ভেঙেও যেতে পারে।

রাইজিংবিডি : ছেলে এবং মেয়ে কার প্রেমে বেশি গভীরতা থাকে?

শফিক রেহমান : এটা বলা মুশকিল। কথায় বলে, মেয়েরা প্রেম করে ঘর করতে, আর ছেলেরা প্রেম করে রোমান্স করতে। দুজনের মনমানসিকতা এক হলে দুজনের ভালোবাসাও হবে সমান। তবে মেয়েদের প্রেমে গভীরতা একটু বেশি।

রাইজিংবিডি : এবার ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রেমিক-প্রেমিকাদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন?

শফিক রেহমান : সবাইকে বলছি তালা কিনতে। একজন দুইটা করে তালা কিনবেন।  সেই তালা দিয়ে একজন আরেকজনকে আটকে দেবেন। আর চাবিটা ফেলে দেবেন নদীতে। ফুল বেশি দিন টেকে না, পচনশীল। কিন্তু তালাতে দুজনের নাম লিখে উপহার দিতে পারেন। তালা স্থায়ী হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রেওয়াজ আছে। আগে তো গাছের গুঁড়িতে নাম লেখা হতো- ওমুক প্লাস ওমুক। এখন তো আর সেই সুযোগ নেই। আর লিখবেই বা কোথায়! আমি তো ভাবছি এবার আমার স্ত্রীকে একটি তালার মালা উপহার দেব।

রাইজিংবিডি : ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাইজিংবিডির তরফ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

শফিক রেহমান : রাইজিংবিডি এবং এই পরিবারের সদস্যসহ দেশবাসীর প্রতি রইল শুধুই ভালোবাসা আর ভালোবাসা।


রাইজিংবিডি / লিমন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়