ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জাকির চেয়ারম্যানের প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি এমপি-পুলিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৯:১১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
জাকির চেয়ারম্যানের প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি এমপি-পুলিশ

জব্দ করা গাড়ি ও জাকির হোসেন

সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তা, কেউ রেহাই পাননি তার প্রতারণা থেকে। জনপ্রতিনিধির তকমা লাগিয়ে তিন শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে করেছেন প্রতারণা। হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। তবে, শেষরক্ষা হয়নি তার। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মুন্সীগঞ্জের বহুল আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য- প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার আড়ালে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন জাকির হোসেন নামের এক ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি দুই-তিন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—স্বল্পমূল্যে গাড়ি ব্যবসার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে গাড়ি হাতিয়ে নিতেন তিনি। গত কয়েক দিনে ডিবির অফিসে দুই শতাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারলাম, শুধু মুন্সীগঞ্জের একটি গ্রামের ১৫০ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জাকির। তার গাড়ি ২০-২৫টা। সেসব গাড়ি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাইকে দেখাতেন। কয়েকজন এমপি ও সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন। তবে, তাদের কাছে ভাবমূর্তি ঠিক রাখার জন্য মাসিক কিস্তির টাকা ঠিকই মাসে মাসে পরিশোধ করেন জাকির।’

মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘রাজধানীর মুগদা থানায় এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে জাকির চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লা মেঘনা থানা এলাকা তাকে ধরা হয়। এ সময় দুটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। জাকির স্বীকার করেছেন যে, তিনি প্রতারণার টাকায় গ্রামে আলিশান বাড়ি করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান পদে নমিনেশন পেতে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেছেন তিনি। ঢাকা শহরেও তিনি গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন। প্রতারণার টাকায় ছেলেকে আমেরিকায় পাঠিয়েছেন। নভেম্বরে তারও আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব। ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তার সম্পদ জব্দের জন্য প্রয়োজনে সিআইডিতে মামলা হস্তান্তর করা হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগেও জাকিরকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকে বলেছেন, তিনি গ্রেপ্তার হলে মাসিক কিস্তির টাকা পাবেন না। তিনি অধিকাংশ ভুক্তভোগীর মাসিক কিস্তির টাকা পরিশোধ করেননি। মূল টাকা তো নেই, গাড়িও মেরে দিয়েছেন। জাকির চেয়ারম্যান বন্দর থেকে স্বল্প দামে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেন। সেই গাড়ি রেন্ট-এ-কারের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য চুক্তি করেন। একই গাড়ি একাধিক ব্যক্তিকে দেখিয়ে তাদের সঙ্গে ভুয়া চুক্তি করেন। একই রেজিস্টেশন নম্বরসম্বলিত গাড়ি একাধিক জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু দিন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ করে পরে কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়া, বিক্রি করা গাড়ি স্বল্প মূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন জাকির।’

ডিবি প্রধান জানান, জাকির চেয়ারম্যান বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে কিস্তিতে গাড়ি কিনতেন। আবার ব্যাংক থেকে গাড়ির বিপরীতে কাস্টমারকে না জানিয়ে ঋণ নিতেন। দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার প্রায় ৩০০ ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন জাকির।

মাকসুদ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়