ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

তুবা এখন বুঝতে পারে মা আর নেই

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২০ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ১০:৪২, ২০ জুলাই ২০২৩
তুবা এখন বুঝতে পারে মা আর নেই

ছোট্ট তুবা বড় হচ্ছে। এখন সে রাজধানীর একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। খালামনি আর খালুকে মা-বাবা ডাকে। তবে সে এখন কিছুটা বুঝতে পারছে তার মা আর পৃথিবীতে নেই। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সন্তানকে ভর্তি করার খোঁজখবর নিতে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হন তুবার মা তাসলিমা বেগম রেনু।

রেনুকে যখন হত‌্যা করা হয় ছেলে মাহির তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে জানে মাকে কেমনভাবে হত্যা করা হয়েছে। মাকে হারিয়ে চঞ্চল মাহির অনেকটাই নীরব হয়ে গেছে। এখন আর আগের মত দুষ্টুমি করে না। সারাক্ষণ মন মরা হয়ে থাকে।

মাহির এখন উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে হোস্টেলেই থাকে। আর তুবা মহাখালী শিশুমেলা স্কুলের ক্লাশ ওয়ানে পড়ছে। সে বড় হচ্ছে খালা নাজমুন নাহার নাজমার কাছেই।

রেনু হত‌্যার ঘটনায় অজ্ঞাত পাঁচশ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।  

২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন।

ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের আদালতে ১৩ জনের মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৫ জুন এ মামলায় এক ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। আগামী ২৪ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। এদিকে দুই শিশুর মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক সাবেরা সুলতানা খানমের আদালত বিচারাধীন। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।

আরও পড়ুন: চার বছরেও শেষ হয়নি রেনু হত‌্যা মামলার বিচার

তুবা-মাহির বিষয়ে কথা হয় খালা নাজমুন নাহার নাজমার সাথে। তিনি বলেন, রেনুর মৃত্যুর পর প্রতিদিনই দুই ছেলে-মেয়ে তাদের মায়ের কথা বলে। মাহির তার মায়ের কথা চিন্তা করতে করতে পড়ালেখা পিছিয়ে যাচ্ছে। সে যেভাবে এক্টিভ মাইন্ডের ছিলো এখন আর তেমন নেই। মাহির তার মায়ের ছবি, ভিডিওগুলো দেখে আর কান্নাকাটি করে। এখন সে সবকিছু বুঝে গেছে।

তিনি বলেন, ওদের দুই ভাই-বোনকে নিয়ে আমাদের সব সময় মেন্টাল ট্রমা কাজ করে। বাবা-মা ছাড়া দুই ছেলে-মেয়ে লালন পালন করা কত কষ্টের। এই চারটা বছর আমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। মাহির হোস্টেলে থাকলে ভালো থাকে, কিন্তু বাড়িতে আসলে আবার মায়ের ছবি নিয়ে পড়ে থাকে। আর তুবা এখনো বুঝার মত বুদ্ধিজ্ঞান হয়নি। তুবা আমাকে আর আমার স্বামীকে বাবা-মা বলে ডাকে। তবে তুবা এখন কিছুটা বুঝতে পারে তার মা আর নেই পৃথিবীতে। স্কুলের ছেলে-মেয়ে মাঝেমধ্যে বলে ফেলে তুবার মা  মারা গেছে। স্কুল শেষে বাসায় ফিরে খুব মন খারাপ করে, তখন আমারও অনেক কষ্ট হয়। আমরা অনেক কষ্টে আছি। দুইটা বাচ্চা ঢাকা শহরে রেখে পড়ালেখা করানো অনেক খরচ। এছাড়া, আমারও দুইটা বাচ্চা আছে। আমার মা কিছুদিন আগে বোনের শোকে দুনিয়া থেকে চলে গেছে। আমার বোন কেন মারা গেছে সে এটা জেনে যেতে পারলো না। বিনাদোষে কোনো কারণ ছাড়া তাকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো। যারা এই নিরপরাধ মানুষকে খুন করলো তাদের আইন অনুসারে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

মামলার বাদী নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, আমাদের মতো ওদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তাদের একটা সুন্দর জীবন গড়ার চেষ্টা করছি। আমরা সবাই ওদের সন্তানের মতোই বড় করছি। মাহির হোস্টেলে থাকলে ভালো থাকে। বাসায় থাকলে সারাক্ষণ মাকে নিয়ে চিন্তা করে। ওর রেজাল্টও খারাপ হচ্ছে। তাই ওকে হোস্টেলে রাখার চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়