ঢাকা     সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৮ ১৪৩২

আদালতে কাঁদলেন শাজাহান খান, জানালেন মামলার কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১৭ মার্চ ২০২৫   আপডেট: ১৩:৪৪, ১৭ মার্চ ২০২৫
আদালতে কাঁদলেন শাজাহান খান, জানালেন মামলার কারণ

আদালতে নেওয়ার পথে শাজাহান খান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডায় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় রিমান্ড শুনানি চলাকালে আদালতে কেঁদেছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। আদালতকে জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কারণ।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে তার রিমান্ড শুনানি হয়।

সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে শাজাহান খানকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। তখন তিনি আইনজীবীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করেন। এ সময় তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।

সকাল ১০টা ৮ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শাজাহান খানের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক শফিউল আলম।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে মিজানুর রহমান (বাদশা) রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

রিমান্ড শুনানিকালে ১০টা ২৭ মিনিটের দিকে শাজাহান খান বলেন, “মাননীয় আদালত আমাকে একটু সময় দিন কথা বলার। আমি কথা বলতে চাই।” 

আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন শাজাহান খান। তিনি বলেন, “পিপি সাহেব বলেছেন, আন্দোলনে পুলিশ গুলি করেছে। সে অর্ডার তো দিতে পারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গুলি চালানোর অর্ডার তো আমি দিতে পারি না। আমি জড়িত না। কেন আমার বিরুদ্ধে এ মামলা হলো? শুধু আমার বিরুদ্ধে না, আমার বড় ছেলে আসিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। সে এখন জেলে।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাজাহান খান বলেন, “পাঁচ মাস ধরে আমার ছেলের সঙ্গে দেখা নেই। আমার ছেলে কী করেছে? আমি ঢাকায় থাকলেও ছেলে থাকত মাদারীপুরে। আপনি এখনই চেক করতে পারেন। আর সিরাজুল ইসলাম কে?”

তখন বিচারক বলেন, “আপনার বিষয়ে আইনজীবী কথা বলেছেন।” তবু, শাজাহান খান দুই হাত জোর করে কথা বলার জন্য সময় চান। বলেন, “একটু সময় দিন। উনারা (আইনজীবী) ভালোভাবে বিষয়টা বলতে পারেননি। সিরাজুল চেয়ারম্যান ছয়টা হত্যা মামলার আসামি। আমি তার পক্ষে ছিলাম না। তাই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলা দিয়েছে।”

পরে আদালত শাজাহান খানের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে দুই চোখ মুছতে থাকেন শাজাহান খান।

শুনানি শেষে ১০টা ৪০ মিনিটে হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরিয়ে আদালত থেকে বের করা হয় শাজাহান খানকে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেন। তখন তিনি বলেন, “কথা বলা নিষেধ? কথা তো বলতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশ।”

এরপর শাজাহান খান বলেন, “এ দেশের মায়েরা, বোনেরা এখন রাস্তায় নামছেন উপদেষ্টার পদত্যাগের জন্য।“ পুলিশ সদস্যরা তাকে দ্রুত হাজতখানায় নিয়ে যান।

গত বছরের ১৯ জুলাই বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডা বিসমিল্লাহ হোটেলের পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন রফিকুল ইসলাম। সেখানে গুলিতে আহত হন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিহতের মামা পরিচয়ে লুৎফুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। 

শাজাহান খানের আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেছেন, মামলার বাদীকে চিনেন না রফিকুল ইসলামের মা ও স্ত্রী। তাকে দেখেনও নাই। তাদের বাড়ি শাজাহান খানের সংসদীয় আসন এলাকায়। লুৎফুর রহমানের শ্বশুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। সিরাজুল ইসলাম মার্ডার কেসে পড়েন। শাজাহান খানের কাছে যান মামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তখন শাজাহান খান জানান, আইনের বাইরে কিছু বলা যাবে না। এ কারণে মামলায় তাকে এবং তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।

ঢাকা/মামুন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়