ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

‘উদ’ আতরের ঘ্রাণ নিতে গুনতে হবে ৮০ হাজার

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২১ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ২৩:৫৮, ২১ এপ্রিল ২০২৩
‘উদ’ আতরের ঘ্রাণ নিতে গুনতে হবে ৮০ হাজার

প্রতীকী ছবি

ঈদের নামাজের জামাতে যাওয়ার আগে পরিপাটি হয়ে নতুন পোশাকের সঙ্গে জুতসই আতর না হলে কি চলে? এজন‌্য সব কেনাকাটার পর ঈদের আগের দিন চাঁদ রাতে সবাই ঢুঁ মারেন আতরের দোকানে। আতরের দোকানে তাই এখন ব‌্যস্ততা।

তবে যদি আপনার পছন্দের ব্র্যান্ড হয় ‘উদ’ তাহলে প্রতি মিলির জন‌্য গুনতে হবে ৮০ হাজার টাকা। দুবাই, আরব বা মধ‌্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ নয়, এই আতর তৈরি হয় বাংলাদেশে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হয়। ‘উদ’ আতরের ঘ্রাণ নিতে চলে যেতে হবে বায়তুল মোকারমের মার্কেটের ভেতরে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে আতর পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ মানুষ আসেন বায়তুল মোকারমের মসজিদের মার্কেটের সামনে। এখানে অনেক অস্থায়ী দোকানে আতর বেশি পাওয়া গেলেও অনেকে একটু ভালো ব্র্যান্ডের আশায় ভিড় জমান মার্কেটের ভেতরে। যদিও এখানে আসেন একটু ধনী শ্রেণির লোকজন।

এখানকার একটি দোকানের মালিক ইউনুছ। তিনি জানান, তার দোকানে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা মূল‌্যের আতরও আছে। ‘উদ’ নামের এই আতর বাংলাদেশের তৈরি। যারা একটু বেশি ধনী শ্রেণির তারা এই আতর কেনেন। তবে এতো দামি আতরের তুলনায় মোটামুটি দামের আতরই বেশি চলে।  

ইউনুছ জানান, হ‌্যাবক, সিকোওয়ান, ইস্কেফ, গোল্ডেন সেন্ট এগুলো বেশি চলে। পারফিউম ফ্লেবারকে বেশি প্রধান‌্য দেন ক্রেতারা।

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। শেষ সময়ে তাই এখন আতর-টুপি আর জায়নামাজের দোকানে ভিড় করছে মানুষ। তবে এবার অন‌্যসব জিনিসপত্রের মতো বেড়েছেও আতরের দামও। দোকানিরা বলছেন, অন্তত দেড়গুণ বেড়েছে এই সুগন্ধির দাম। দাম বাড়ার কারণে কমেছে বেচাকেনাও।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের আতর বিক্রেতা সজল মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবার কেনাবেচা খুবই বাজে অবস্থা। কেনাবেচায় মন্দা। তিনি একটি খালি বোতল দেখিয়ে বলেন, এই বোতল গত বছর কিনেছি ৪ টাকা করে, এখন তা ১৫ টাকা। এরকম সব উপাদানের দামই বেড়েছে। তার দোকানে সবচেয়ে বেশি যে আতরের দাম তা ২ হাজার টাকা।

তবে দামি আতরের তুলনায় দেড়শ থেকে ২’শ টাকার আতরের দিকেই বেশি নজর ক্রেতাদের। বিভিন্ন মডেল ও ব্র্যান্ড ভেদে দাম কম-বেশি জানালেন সজল।

বিভিন্ন নামের মধ‌্যে জেসমিন, হাসনা হেনা, রজনীগন্ধা, এক্সকাচি বেলি, সিলভার, চকোলেট মাক্সসুলতান, আমির আল কুয়াদিরাজা ওপেন, জান্নাতুল ফেরদৌস, রয়েল, সালমমা বকুল, দালাল, ওরেঞ্জ, সফট, লর্ডনিভিয়া মেন, রয়েল ম‌্যারেজজপি, রাসা, আল ফারিসবেস্ট, ফিগো, হাজরে আসওয়াড-প্রভৃতি নানা নামে বিক্রি হচ্ছে এসব আতর। দাম প্রতি মিলি ১’শ থেকে দেড়শ টাকা।

রাজধানীর বায়তুল মোকররম মসজিদ মার্কেট ছাড়ও গুলিস্তান, কাঁটাবন মসজিদ মার্কেট, কাকরাইল মসজিদ মার্কেটসহ ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায় আতর। আতরের পাশাপাশি প্রতিটি দোকানে সাজানো বাহারি সব টুপি-জায়নামাজও। আতর, আতরদানি, সুরমা, পাঞ্জাবি, তসবিহও পাওয়া যায় এখানে।

বায়তুল মোকাররমের গেটের সামনে অস্থায়ী দোকান নিয়ে বাহারি পদের আতর নিয়ে বসেছেন বিক্রতো মোহাম্মদ মানিক। তিনি জানান, রয়েল, কদম, ফেরারী এগুলো বেশি চলে। সবগুলো দামই মিলি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এছাড়া দেশি আতর ছাড়াও বাহারি ডিজাইনের আতরের দানি (বোতল) পাওয়া যায়। কাঁচ, প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন ধাতুর মিশ্রণে তৈরি এসব আতরদানিও বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়।

ঈদের আগের দিন বায়তুল মোকররম মসজিদ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের জামাতে নতুন টুপি কিনতে মার্কেটে এসেছেন অনেকেই। বায়তুল মোকাররম মার্কেটে দেশি টুপি ছাড়াও পাকিস্তান ও চীনের তৈরি টুপি বিক্রি বেশি। কম দামে বৈচিত্রময় ডিজাইনের টুপি হওয়ায় পাকিস্তানি ও চীনা টুপির চাহিদা বেশি।

এছাড়া তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া থেকেও টুপি আসে দেশে। নকশা, কাপড় ভেদে ৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দামের টুপিও পাওয়া যায়। ১৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে চীনা ও পাকিস্তানি  টুপি পাওয়া যায়। চীনা টুপি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ভারতীয় টুপি ৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে চীনের ওয়ানি ৬৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০ টাকা, পাঠান ৪৫০ টাকা এবং ছোট পুতির সঙ্গে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া নেটের তৈরি চীনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কির টুপি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছে দোকানিরা।

এদিকে বৈচিত্র্যময় নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের জায়নামাজে ভরপুর এখানকার দোকান। সুতি, মখমল, সিলিকন, পশমিসহ বিভিন্ন রকম জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, কাশ্মীর, বেলজিয়াম, চীন, সৌদি আরব ও কাতারের জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে। দাম পড়বে ১২০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া কাঠ, প্লাস্টিক, মুক্তা, পাথর, হাতির দাঁত, হরিণের শিং, ক্রিস্টালসহ বিভিন্ন উপাদানে তৈরি তসবিহ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ২৫ গুটি, ৫০ গুটি থেকে শুরু করে ১০০, ২০০, ২৫০ এবং সর্বোচ্চ ৫০০ গুটির তসবিহ পাওয়া যায় বাজারে। আবার ডিজিটাল তসবিহরও বেশ কদর এখন। দাম ৫০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।

রেজা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়