ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আজ অফিস ছুটির আগেই বের হওয়ার দিন 

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২ জুন ২০২৩  
আজ অফিস ছুটির আগেই বের হওয়ার দিন 

ছবি: ইন্টারনেট

নাগরিক জীবনে শুধু অফিস করলেই চলে না। অফিস সময় শেষের আগেই নানা কাজ পড়ে যায়। কাজের চাপ, বসের ঝাড়ি ও চাকরি-সংক্রান্ত নানা জটিলতা এড়াতে কেউ কেউ আগে বের হওয়ার সাহস পান না।

একবার কল্পনা করুন, আপনি আপনার অফিসের ডেস্কে বসে আছেন। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে আছেন কখন অফিস সময় শেষ হবে? সময় যেনো কিছুতেই কাটছেই না। এদিকে বাইরের আবহাওয়া বেশ লোভনীয়। এই লোভনীয় আবহাওয়া কেটে গেলে অন্ধকার হয়ে আসবে। অফিস সময় শেষ করে অফিস থেকে বের হলে সেই আবহওয়া উপভোগ করাও হবে না। আপনি কোন কাজেও মনযোগ দিতে পারছেন না বরং তখন আপনি প্রচণ্ড বিরক্ত হবেন। আপনার মনে আক্ষেপ তৈরি হবে অফিস সময়ের আগে বের না হতে পারার জন্য।

তবে আজ কোনো দ্বিধা নয়। আজকের দিনটি কেবল আপনার জন্য। অফিসে ছুটির আগেই বের হয়ে পড়ুন। কারণ আজ আগেভাগেই অফিস থেকে বের হওয়ার দিন। বিশ্বব্যাপী ২ জুন পালিত হয় সময়ের আগে অফিস থেকে বের হওয়ার দিন হিসেবে।

২ জুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ‘ন্যাশনাল লিভ দ্য অফিস আর্লি ডে’ বা অফিসে সময়ের আগেভাগে অফিস থেকে বের হওয়ার দিন হিসেবে এই বিশেষ দিনটি ২০১২ সাল থেকে পালন করা হয়। তবে এই দিনে কেউ কাজে ফাঁকি দেয় না। বরং এই দিনে সবাই খেয়াল রাখে দিনের কাজ যেনো সবাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সম্পাদন করে। যাতে অফিস ছুটির আগেই সবাই কাজ শেষ করতে পারে। প্রত্যেকে নিশ্চিত করে যে, তারা স্বাভাবিক বন্ধের সময়ের আগে যেসব কাজ করা দরকার সবই করে কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে গেছে।

কিন্তু এই ছুটির ইতিহাস কি এবং কেন এটি পালন করা হয়? যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শ্যানন টেলর বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অফিসে যথা সময়ে কাজ শেষ করতে পারেন না, তারা অফিসে খারাপ আচরণের শিকার হন। তারা বাড়িতেও একই রকম আচরণ করেন। যদি কর্মীরা বসের কাছে অপমানিত বা খারাপ আচরণ পান, তখন তাদের সেই হতাশা বাড়ির সদস্যদের ওপর চাপানোর প্রবণতা দেখা যায়। তারা অফিস থেকে পালিয়ে বাঁচতে চান। এজন্য অফিস ছুটি দ্রুত হলে তারা পরদিনের কাজ উৎসাহ নিয়ে সম্পাদন করেন। ’

অফিসের কর্মীরা একটানা কাজ করে নিজেকে ক্লান্ত-শ্রান্তবোধ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে উৎপাদনের হার কমে যায়। সমীক্ষা অনুসারে, আমেরিকানরা ইউরোপীয়দের তুলনায় বেশি সময় কাজ করে। এর কারণ হলো আমেরিকানরা অফিস নিয়ে যত বেশ রিলাক্স থাকে, ইউরোপীয়রা ততটা থাকে না। সাধারণ ৮-ঘণ্টা কর্মদিবস অনেক অফিসের একটি নিয়ম হয়ে উঠেছে। কিন্তু অফিসের কর্মীদের জন্য একটি দিন তো আছে; যেদিন তারা ৮ ঘণ্টার আগেই অফিসের কাজ শেষ করে বের হয়ে যেতে পারেন। এইদিনটি আপনাকে অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং ক্লান্তির চক্র ভাঙতে সহায়তা করতে পারে। এটিকে ‘ন্যাশনাল লিভ দ্য অফিস আর্লি ডে’ বলা হয়।

আমেরিকার একটি মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের মধ্যম সারির মানবসম্পদ কর্মকর্তা লরা স্ট্যাক প্রথম এই দিনটির ধারণা অবতারণা করেন এবং তিনি তার অফিসে প্রথম এটির প্রচলন করেন। এইদিনটি ‘দ্য প্রোডাক্টিভিটি প্রো’ নামেও পরিচিত।

এই দিনটি সম্পর্কে এর প্রতিষ্ঠাতা লরা স্ট্যাক বলেন, এই দিনের ফোকাস অফিস থেকে আগেভাগে বের হওয়া নয়। বরং এর লক্ষ্য হলো অফিসের বাধা ধরা সময়ের সীমার পরিবর্তে সময় ব্যবস্থাপনা, উৎপাদনশীলতা এবং কর্মীদের দক্ষতার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো। এই বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে, কেউ কম সময়ে চমৎকার ফলাফল পেতে পারে। এটি কর্মীদের কাজের সময় কমিয়ে আনতে এবং একটি ভালো কর্মজীবনের ভারসাম্যের ওপর ফোকাস করতে দেয়।

এমন একটি দিনের প্রচলন করার কারণ হিসেবে লরা স্ট্যাক বলেন, কর্মচারী সুখ অগ্রাধিকার একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।  ‘ন্যাশনাল লিভ দ্য অফিস আর্লি ডে’ প্রচার করার মাধ্যমে আপনি সাহসের সাথে বলেন যে, আপনি আপনার কর্মীদের স্বাস্থ্য এবং সুখকে অগ্রাধিকার দেন। এইদিনটি পালনের মাধ্যমে কর্মীদেরকে মানুষ হিসবে বিবেচনা করা ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখে। আপনি আপনার কর্মচারীদের কাছে প্রদর্শন করেন যে, তারা কর্পোরেট চাকার অংশের চেয়ে বেশি; তারা এমন মানুষ যাদের কাজের বাইরে জীবন রয়েছে যারা আপনার মনোযোগ এবং যত্মের যোগ্য। আপনি এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলছেন যা উৎপাদনের চেয়ে লোকেদের অগ্রাধিকার দেয়। যা আপনার কর্মীদের প্রতি আপনার কোম্পানির উৎসর্গ সম্পর্কে সচেতন করে। এছাড়া কর্মচারীদের মনোবল, ব্যস্ততা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে এই দিনের বিশেষ ভূমিকা আছে।

তাই, ‘ন্যাশনাল লিভ দ্য অফিস আর্লি ডে’ উদযাপন করা আপনার নিয়োগকর্তার ব্র্যান্ডের শক্তি উন্মোচন করতে পারে, আপনাকে প্রতিভার বাজারে আলাদা করে তুলতে পারে এবং আপনার কোম্পানিকে সেরা প্রতিভার জন্য সেরা বাছাই হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়