আলোচনায় সাংবাদিক নেতারা
ব্যাংক খাতে লুটপাটের উদাহরণ সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে লুটপাট ও নৈরাজ্য চলছে, তারই উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। সাংবাদিকরা সরকারের সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকেন। আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে এখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশের বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে।
বুধবার (১৫ মে) ইআরএফ কার্যালয়ে ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অবহিতকরণ’ শীর্ষক সভায় এসব কথা বলেন সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা।
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সম্পাদক আবুল কাশেম।
বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, ডিইউজের অপর অংশের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন, ইআরএফের সাবেক সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক সোহেল মঞ্জুর, ইআরএফের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, জিয়াউর রহমান, এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ভোরের কাগজ সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, এখন ব্যাংক খাত থেকে একজন পি কে হালদার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাবেন অথচ কিছু বলা যাবে না, এটা হতে পারে না। একজন ব্যক্তি সাত থেকে আটটি ব্যাংকের মালিক কীভাবে হন? সরকারের উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিকরা। সামনে বাজেট আসছে। এমন সময়ে কেনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। হলমার্কসহ সবগুলো আর্থিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করে সরকারকে সহযোগিতা করেছে গণমাধ্যম।
তিনি বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন এ বিষয়টি (প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে কাজ করছেন। তবে আমাদেরও এ বিষয়টি শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তারই একটি অংশ হচ্ছে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে না দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যে ৮ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে, এতে কি চোরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে হয়েছে? এই ৭-৮টা ব্যাংকের মালিক একটা গ্রুপ। তারা সম্প্রতি আরও একটি ব্যাংক নিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলাও কঠিন, কারণ তাদের পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন আছে।
বিএফউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ব্যাংক রিপোর্টাররা আজ সমস্যায় পড়েছেন, এটা আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দলমতের বাইরে এসে পেশাদারত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সব সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়ে আগাতে হবে। অতীতেও আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করেছি। শেয়ারবাজার, ডলারের বাজারে যেসব অপকর্ম করা হয় এগুলো তো কর্মকর্তারাই ঘটান, সাংবাদিকরা শুধু তা লিখে তুলে ধরেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন গভর্নরকে বসানো হয়েছে তিনি তার যোগ্যই নন। তার যে দুর্বলতা আছে সেটি ঢাকার জন্যই তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। বর্তমান গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সূচকেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই ডলারের দাম একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দিলেন কীসের ভিত্তিতে? কিছু পির-আওলিয়া-দরবেশদের সুবিধা দিতে গিয়েই সাংবাদিকদের এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা দরজায় খিল দিয়েছে কিন্তু দরজা বন্ধ করতে পারেনি। প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটে অবস্থান নেবো। গভর্নরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে দেবো না। আমাদের অধিকার আদায় করেই আমরা ছাড়বো।
এনএফ/এনএইচ