ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার সময়ের দাবি

এন আই আহমেদ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৫ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১০:৩৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার সময়ের দাবি

আজ দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে যারা বাঙালি জাতির কপালে এই কলঙ্কের তীলক পরিয়েছিল তাদের অনেকের বিচার হয়েছে। তবে ঘটনার নেপথ্যে অনেকেই ছিলেন যারা আজো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। বিশেষ করে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা মদদ দিয়েছেন তাদের স্বরূপ উন্মোচন শুধু নয়, তাদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করার সময় এসেছে।

আজ এ কথা দিনের আলোর মতো যে, জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই বেদনাবিধূর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে তিনিও ছিলেন। নতুন অনেক তথ্যে সেসব কথা উঠে আসতে শুরু করেছে। ফলে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার আজ সময়ের দাবি।

১৯৭৬ সালের ২ আগস্ট যুক্তরাজ্যের আইটিভিতে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে মেজর ফারুক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার কথা প্রথম স্বীকার করেন। কর্নেল ফারুকের স্বাক্ষরে ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকায় একাধিক নিবন্ধেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। এছাড়া মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ তার একটি বইতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেন।

আরো পড়ুন:

বঙ্গবন্ধুর হত্যায় ক্ষমতার পালাবদল ও পট পরিবর্তন উভয়ই ঘটেছে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। তবে নিয়তি আড়ালে মুচকি হেসেছে এবং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাকেও পৃথিবী ত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু না, ক্ষমতা দখলই শেষ কথা নয়, শত্রুরা জানতো, ইতিহাস খুব ভয়ঙ্কর। একে নিজ গতিতে চলতে দেওয়া যায় না। তাই ইতিহাস মুছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা আমরা দেখেছি। জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া দল এবং এর পরিচালনাকারীদের বিতর্কিত কার্যক্রম সে কথারই সাক্ষ্য দেয়। তারা ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের সব পথ রুদ্ধ করে দেয়। এ থেকেই কি প্রমাণিত হয় না এই হত্যাকাণ্ডে তাদের কতটা মদদ ছিল? এখানেই শেষ নয়, তারা এরপর ইতিহাসকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপচেষ্টায় মেতে ওঠে। শুরু হয় নতুন নাটক। আর এই নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম বেগম খালেদা জিয়াল ভুয়া জন্মদিন পালন।

জন্মদিন পালন নিয়ে তার নাটকের উদ্দেশ্য মূলত সাধারণ জনগণ; বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত তরুণদের মধ্যে এই দিন সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভুল মেসেজ দেওয়া। যে দিনটি বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল, সে সম্পর্কে যেন তরুণ প্রজন্ম কিছু জানতে না পারে এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। অথচ আজ এ কথা সবাই জানে, ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন নয়। তার জন্মদিন নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি তারিখ পাওয়া গেছে। এবং এই ঘটনা শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে গড়িয়েছে। তার এসএসসির নম্বরপত্রে জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬। বিবাহ নিবন্ধনে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৯ অগাস্ট ১৯৪৪। ২০০১ সালে নেওয়া তার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে জন্ম তারিখ ৫ অগাস্ট ১৯৪৬। তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রতিবেদনে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ৮ মে ১৯৪৬। অথচ তিনি জন্মদিন পালন করেন ১৫ অগাস্ট, জাতীয় শোক দিবসে। এই উদযাপনে মিশে থাকে প্রতিহিংসা, মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতি।

দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন। তবে কেক কেটে দিনটি তিনি উদযাপন শুরু করেন ১৯৯৬ সাল থেকে। মিন্টো রোডে নিজ বাসভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেশ ঘটা করে ঐ বছরের ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন পালন ভিন্ন মাত্রা পায়। এ ঘটনায় কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। প্রথমত, ১৯৯১ সালের আগে তিনি কি নিজের জন্মদিন কখনও পালন করেননি? দ্বিতীয়ত, করে থাকলে দিনটি কবে এবং তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এলো না কেন? তৃতীয়ত, নাকি ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে শুধু বঙ্গবন্ধু বিদ্বেষের উগ্রতার প্রকাশ ঘটাতেই খালেদা জিয়াসহ তার নেতাকর্মীদের এই আয়োজন?

বেগম জিয়া শুধু বিএনপি নেত্রী হিসেবেই নন, তার অন্য একটি পরিচয়ও আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যাসম। বঙ্গবন্ধু বিশাল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন, তেমনি ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আজ এ কথা ইতিহাস সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। জিয়াউর রহমান কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাঠিয়েছিলেন তাকে সেখান থেকে বের করে আনার জন্য। কিন্তু খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান বেগম জিয়াকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু দম্পত্তি। দুজনের দাম্পত্য সংকট সমাধানে বঙ্গবন্ধু স্নেহশীল পিতার যথার্থ ভূমিকা পালন করেন। এর বদৌলতে টিকে যায় বেগম খালেদা জিয়ার সংসার। তখন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্য জীবিত। ছোট্ট রাসেল এবং অন্যান্যদের খুব কাছ থেকেই বেগম জিয়া দেখেছেন। রাজনৈতিক মিথ্যাচার এবং ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি বাদে ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতাবোধের জায়গা থেকেও পিতৃসমতুল্য যিনি নৃশংসভাবে সপরিবারের নিহত হয়েছেন, সেই দিন তার জন্মদিনের কেট কাটতে একবারও হৃদয় কেঁদে ওঠেনি! এ ঘটনা শুধু আত্মপ্রতারণা নয়, চরম অকৃতজ্ঞতার উদাহরণ। 

পরিশেষে বলতে চাই, আজ সময় এসেছে পঁচাত্তর পরবর্তী এ ধরনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করার। শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খুনীরাই নয়, যারা এই খুনের মদদদাতা, পর্দার আড়ালের মানুষ তাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাদের স্বরূপ জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। কেন একজন প্রধানমন্ত্রী তার জাতির পিতার মৃত্যুদিনে আনন্দে উল্লসিত হয়ে জন্মদিনের কেক কাটেন এর পেছনের কারণ নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না এই ষড়যন্ত্রের জাল খুব সূক্ষ্ম এবং অধীক বিস্তৃত। 

লেখক: উপ-তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক (আইটি) সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
 

ঢাকা/তারা


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়