ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চট্টগ্রামে সহিংসতায় চার ধরনের বোমার ব্যবহার

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৩   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রামে সহিংসতায় চার ধরনের বোমার ব্যবহার

ফাইল ফটো / বোমা

রেজাউল করিম
চট্টগ্রাম, ০৮ ডিসেম্বর: চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ব্যবহৃত হচ্ছে চার ধরনের বোমা।

নগরীতে সম্প্রতিক সহিংসতায় ব্যবহৃত বোমার নমুনা সংগ্রহ করে ভিন্ন ভিন্ন এ চার ধরনের বোমা ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বোমা বিশেষজ্ঞ দল।

এসব বোমার মধ্যে রয়েছে সাইন্ড গ্রেনেড, পাইপবোমা, ককটেল বা হাতবোমা এবং পেট্রোল বোমা।

সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হিসেবে রূপ নিয়েছে পেট্রোল বোমা। হাতবোমার চেয়েও বেশি ধ্বংসাত্মক এ ধরনের বোমা। এ জাতের বোমা তৈরিতে খরচও তুলনামূলকভাবে কম।

সিএমপির বোমা বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ চার ধরনের বোমার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য জানা গেছে।

সাউন্ড গ্রেনেড: নগরীর প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাকর্মীদের এ বোমা সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকলেও সাধারণের কাছে তা পরিচিত হয় গত  ২৩ অক্টোবর। ওই দিন নগরীর চকবাজারের রসুলবাগ আবাসিক এলাকায় এ ধরনের একটি বোমা ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা।

ওইদিন রসুলবাগে জামায়াত ইসলামীর সমর্থক শেখ নাসিরুল্লার ১০৯ নম্বর বাড়িতে গভীররাতে প্রচ- শব্দে বোমা বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ও বোমা বিশেষজ্ঞ দল বিপুল পরিমাণ গান পাউডার ও বারুদসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে নাসিরুল্লাহর বড় ভাই আসাদুল্লাহ ও তার স্ত্রীকে।

ওই ঘরে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায় এ বোমা বিস্ফোরণের পর প্রচ- শব্দে ঘরের জানালার কাঁচ উড়ে গেছে। এছাড়া উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দ্রব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোমা বিশেষজ্ঞ দল নিশ্চিত হয়েছেন বিস্ফোরিত বোমাটির নাম ছিল সাউন্ড গ্রেনেড।

পাইপ বোমা: চট্টগ্রামে পাইপ বোমা তৈরির সন্ধান মেলে নগরীর লালখান বাজারের হেফাজত নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম পরিচালিত মাদ্রাসায়।

গত ৭ অক্টোবর ওই মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে পাইপবোমার নাম।

ওই দিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করে পরীক্ষার পর বিস্ফোরিত গ্রেনেডগুলো ‘পাইপ বোমা’ বলে চিহ্নিত করেন পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞরা।

ককটেল বা হাতবোমা: চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতার কাজে যে বোমাগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে তার নাম ককটেল বা হাত বোমা। গোয়েন্দা পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞ ও সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত ককটেল কারিগরদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ককটেল তৈরিতে কয়েক ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে সালফার, পটাশিয়াম নাইট্রেট ও ফসফরাস অন্যতম।

মাত্র ১২ হাজার টাকায় এক কেজি সালফারে বড় আকারের ৬০ থেকে ৭০টি ককটেল ও ছোট আকারের হলে ১০০টির মতো ককটেল বোমা তৈরি হয়।

ককটেল বোমার শক্তি বাড়াতে পটাশিয়াম নাইট্রেট ও ফসফরাসের সঙ্গে মিশ্রণ করা হয় কাঁচের টুকরো, লোহার টুকরো, জালের কাঁঠি, পেরেকসহ নানা শক্ত উপাদান।

সব কাঁচামালের সংমিশ্রণের ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের এক একটি ককটেল তৈরি করা হয়। ছোট ককটেলের দাম পাঁচ থেকে সাতশ’ টাকা আর বড়গুলোর দাম ১২শ’ টাকা পর্যন্ত।

পেট্রোল বোমা: হরতাল, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ককটেল বা হাতবোমার বিস্ফোরণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। তবে এবার ককটেল ও হাতবোমার পাশাপাশি নতুন আতঙ্কের নাম পেট্রোল বোমা। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ককটেল ও হাতবোমার আঘাতের তুলনায় আরো  বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে বোমাটি। ককটেলের চেয়েও কম শব্দে বিস্ফোরিত হয় এটি।
গত কয়েকদিনের অবরোধে চট্টগ্রামে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন তিন চালক।

এছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে চলন্ত গাড়ি লক্ষ্য করে পিকেটারদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অনেকে।


গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বোতলে পেট্রোল জাতীয় যে কোন ধরনের পদার্থ ভরে তার মধ্যে সুতা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করা যায়।


যে লক্ষ্যবস্তু উদ্দেশ্য করে এটি নিক্ষেপ করা হয়, তাতে আগুন ধরে যায়। বোমা নিক্ষেপকারীরা বোতলের ওপর সুতায় আগুন ধরিয়ে ছুড়ে দেয়। এরপর আগুন পেট্রোল পর্যন্ত পৌছার পর বিস্ফোরণ ঘটে।

হাতবোমা নিক্ষেপের তুলনায় পেট্রোল বোমা ছোড়া অনেক নিরাপদ। কারণ পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীর নিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুব কম থাকে বলে এর ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে।

 

রাইজিংবিডি / রেজাউল করিম / রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়