লাভের টাকায় পাইপ লাইন করছে বিপিসি
এনআর || রাইজিংবিডি.কম
সংসদ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লাভের টাকা পাইপ লাইন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের অনির্ধারিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
হাজী সেলিম বলেন, ‘গোটা দুনিয়ায় তেলের মূল্য কমলেও আমাদের দেশে কমার কোনো লক্ষণ নাই। এই সংসদে বারবার বলার পর পরও কোনোকিছু হচ্ছে না। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বসে আছেন, তার মনে হাওয়া-বাতাস কিছুই লাগছে না। বাংলাদেশে শুধু ডিজেল আমদানি হয়, পেট্রোল আমদানি হয় না। পেট্রোলের চাহিদা বাড়ানোর জন্য এর দাম ৩০ টাকা কমানো যেতে পারে। এতে সিএনজির ব্যবহার কমে যাবে। যে গাড়িতে আমরা সিএনজিতে গ্যাস নেই, এতে এটা কমে যাবে। তখন এটা আমরা শিল্পতে ব্যবহার করতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে হাজী সেলিম আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে গিয়ে বলেছেন, আমরা ব্যবসা করি না। সরকার ব্যবসা করে না। সরকার ব্যবসাবান্ধব। কিন্তু এখানে উল্টো। কারণ, তেলের দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করছে। তাই মনে করি, জ্বালানি তেলের দাম কমানো হোক।’
হাজী সেলিমের বক্তব্যের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি একটু ব্যাখা করতে চাই- তেল এবং গ্যাসের কী অবস্থা? তেল আমরা ইমপোর্ট করি। বাংলাদেশে যে গ্যাস উৎপন্ন হয়, এই গ্যাস ফিল্ড থেকে কনডেনসার নামে একটি প্রোডাক্ট চলে আসে। সেটাকে আমরা রিফাইন করে পেট্রোল পাই। পাশাপাশি পেট্রোলের সাথে কিছু কেরোসিন ও ডিজেল পাই। এই কনডেনসারটাকে যদি আমরা আরো কিছুটা রিফাইন করি তাহলে অকটেন পাই। অর্থাৎ কিছু অকটেন আমরা বাংলাদেশে উৎপাদন করি। বাকিটা ইমপোর্ট করি। পেট্রোল আমরা একদমে ইমপোর্ট করি না। যেটা মাননীয় সংসদ সদস্যই বলেছেন। প্রেট্রোলের ব্যবহার বাংলাদেশে কমে গেছে। কারণ অধিকাংশ গাড়ি এখন সিএনজিতে চলে। প্রেটোল আর কেউ ব্যবহার করতে চায় না। বাংলাদেশে আমরা ২ লাখ ৮০ হাজার টন পেট্রোল উৎপন্ন করতে পারি। কিন্তু সেখানে এখন ১ লাখ ২০ হাজার টন উৎপন্ন করছি। এখানে আমাদের ব্যবহারটা বাড়ানো উচিত। আরেকটি বিষয় হল যদি আমরা সিএনজি থেকে গ্যাসটা শিল্পে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে শিল্পেতে আমাদের কর্মসংস্থান পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বৈদেশিক টার্নিং বাড়বে।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন আপাতত প্রবলেম নেই। বাসা-বাড়িতে এখন গ্যাস নিয়মিত হয়ে গেছে। কিছুদিন গ্যাসের পাইপ লাইনে ময়লা দেখা গিয়েছিল, এ কারণে সেটা পরিস্কার বা মেইনটেনেন্সের জন্য গ্যাসের প্রেসারটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে আমাদের গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে, এভাবে ব্যবহার করলে গ্যাস আর ১০ থেকে ১২ বছর চলবে। যদি নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস পাইপ লাইনে না আসে, তাহলে আমাদের এই মজুদকৃত গ্যাস উল্লিখিত বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে আমরা বিকল্প হিসেবে একটি পরিকল্পনা নিয়েছি। আবাসিক খাতে পাইপ লাইনের ১২ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে। বাকিরা সবাই সিলিন্ডার বা লাকড়ি ব্যবহার করে। সকলে যাতে সুনিশ্চিতভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য আমরা একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছি। কারণ আগামীতে আবাসিক খাতে আমরা কী ধরনের জ্বালানি দেব।
এটা ধীরে ধীরে আগামী তিন বছরের মাথায় সারাদেশে ৭০ শতাংশ আবাসিক খাতে এলপিজিতে চলে যাবে এবং এটা দেওয়া হবে সাশ্রয়ী মূল্যে। কারণ আমরা আরবান খাতে পাইপ লাইনের যে গ্যাস ব্যবহার করি তার মূল্য মাসে ৬০০ টাকা। আর এলপিজি যারা ব্যবহার করে তাদের প্রতি মাসে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা লাগে। তাই আরবান এবং রুরালের মধ্যে এই বৈষম্য সমন্বয় করার অ্যাকশন প্ল্যান নিয়েছি।
জ্বালানি তেলে অবশ্যই অতিরিক্ত মুনাফা হচ্ছে। বিপিসি ৩২ হাজার কোটি টাকা দেনা ছিল। বর্তমানে এটা কিছুটা কমে এসেছে। গত বছর ১০ হাজার কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত পেয়েছি। সেখান থেকে ৭ হাজার টাকা চারটি ব্যাংকের দেনাসহ ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করেও দুই-আড়াই কোটি হাজার টাকা রয়েছে।
বিপিসির নতুন পাইপ লাইন ইনফ্রাকটাচার উন্নয়ন চলছে। এই টাকাগুলো আমরা পকেট রেখে দেই নাই। বা বিপিসি কোনো জায়গায় রেখে দেয় নাই। আমরা পাইপলাইন করার জন্য এই টাকাগুলো ব্যবহার করছি।
আমরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি যদি পাইপ লাইন করতে পারি, তাহলে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারব। হরতালে যানবাহন বন্ধ থাকে এবং নৌযান বন্ধ থাকে। তখন এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। তেলের যে ভেজাল করা হয়, সেখান থেকেও তেলকে সেভ করতে পারব। দুটি পাইপ লাইন করার চুক্তি করেছি। সেগুলো একনেক সভায় পাস হয়ে গেছে। এতে আমাদের সরকার বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলার সেভ করতে পারবে। যখন তেলের দাম অতিরিক্ত ছিল, তখন কিন্তু সরকার একসময় ভতুর্কি দিয়ে সবাইকে তেল সাপ্লাই দিয়েছে। এখন তেলের দাম কমে গেছে, আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কিন্তু সরকার লাভবান হচ্ছে না, ভর্তুকি পরিশোধ হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় কিন্তু আমাদের ভতুর্কি দেয় না। আমাদের লোন দিয়ে সুদসহ তারা টাকা নিয়ে নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় গত ১৬ মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোকসান কমিয়েছে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এনআর/রফিক
রাইজিংবিডি.কম