ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দুর্নীতি ও কাজের মানে ই-জিপির প্রভাব নেই: টিআইবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০  
দুর্নীতি ও কাজের মানে ই-জিপির প্রভাব নেই: টিআইবি

দুর্নীতি ও কাজের মানের ওপর ই-জিপির কোনো প্রভাব নেই।  তবে পরিকল্পনামাফিক সমঝোতার ভিত্তিতে দুর্নীতিবাজরা এখন আরও বেশি সংগঠিত বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ই-জিপির কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমীন ও মো. শহিদুল ইসলাম গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করেন।

টিআইবি বলছে, ই-জিপির অন্যতম প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ছিল সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হ্রাস করা ও কাজের মান বাড়ানো। তবে দুর্নীতি ও কাজের মানের ওপর ই-জিপির কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায় না।  ই-জিপি প্রবর্তনের ফলে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ও দরদাতাদের সিন্ডিকেট এখনো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনো স্থানীয় সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক নেতার প্রভাবে নেওয়া হচ্ছে।  যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও দরদাতাদের সিন্ডিকেটও জড়িত। পাশাপাশি কাজ নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া, অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া, এবং কাজ ভাগাভাগির কারণে কাজের মানের ওপরও ই-জিপির কোনো ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায় না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ই-জিপি প্রবর্তনের ফলে ম্যানুয়াল থেকে কারিগরি পর্যায়ে সরকারি ক্রয়ের উত্তরণ ঘটলেও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের একাংশ দুর্নীতির নতুন পথ খুঁজে নিয়েছে। প্রক্রিয়াগতভাবে যেসব দুর্নীতি আগে প্রচলিত ছিল, কারিগরি পর্যায়ে তা এখন সম্ভব না হলেও এই প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে দুর্নীতির নতুন উপায় খুঁজে নিয়েছে।  এক অর্থে দুর্নীতি এখন আরও বেশি সংগঠিত ও পরিকল্পনামাফিক সমঝোতার ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। তবে একে ই-জিপির ব্যর্থতা বলা সঙ্গত হবে না।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-জিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনো কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। এসব সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ ঘটালে ই-জিপির সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে। ২০১১ সালে প্রবর্তনের পর থেকে ধীরে ধীরে এর সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ ঘটছে, প্রায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, বাজেট ও জনবলের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, যা এখনো চলমান।  তবে দেখা যাচ্ছে প্রবর্তনের প্রায় নয় বছর পরও ই-জিপির ব্যবহার এখনো সীমিত- সব প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ক্রয় ই-জিপির অধীনে হচ্ছে না, এবং এর ব্যবহার এখনো ক্রয়াদেশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

দেখা যাচ্ছে, ই-জিপি ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো কোনো কোনো কাজে ম্যানুয়াল পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে দরপত্র মূল্যায়ন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম এখনো কাগজে-কলমে করা হয়।  ই-চুক্তি ব্যবস্থাপনাও এখনো শুরু হয়নি। এসব ক্ষেত্রে এখনো উন্নতির সুযোগ রয়েছে।  ই-জিপির ইতিবাচক প্রভাব বলতে শিডিউল ছাপানো, শিডিউল কেনা ও জমা দেওয়া, নথি সংগ্রহ ও যাচাই করা এগুলো কমে যাওয়ার কারণে সময়ক্ষেপণ কমে গেছে।  দেশের যেকোনো জায়গা থেকে দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।  দরপত্র নিয়ে সব ধরনের হাঙ্গামা, মারামারি, বোমা হামলা, দরপত্র বাক্স ছিনতাই ও চুরি, দরপত্র জমায় বাধা দেওয়া, দরপত্র বাক্স নিয়ে আসতে বাধাসহ টেন্ডারবাজি ইত্যাদি দূর হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

ই-জিপি অনুসরণের বিষয়ে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সবগুলো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) (৫০%)। এর পরে রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ ৪৪ শতাংশ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৩ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৪২ শতাংশ। প্রাপ্ত সার্বিক স্কোর অনুসারে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের অবস্থানই ভালো নয় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

এম এ রহমান/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়