ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঢাকা এখন ফাঁকা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ৯ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১৭:৪২, ৯ জুলাই ২০২২

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। তারপরই পালিত হবে ঈদুল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেতে হাজারো কষ্ট স্বীকার করেও রাজধানী ছেড়েছে লাখো মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনে যাত্রীদের যে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে, আজ তা আর নেই। ঢাকা যেন ফাঁকা হয়ে গেছে।

রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা চলছে। গরুর হাট, বিভিন্ন বিপণিবিতান এলাকা, বাস স্টেশন ছাড়া পুরো রাজধানীই ধীরে ধীরে নীরব হয়ে আসছে। ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে কমেছে গণপরিবহন, অটো, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন। কমেছে মানুষের আনাগোনাও। রাস্তার পাশে থাকা বেশিরভাগ দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট ঈদের ছুটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফেরা মানুষজন পড়েছেন নতুন বিপাকে। রাস্তায় কমেছে গণপরিবহনের সংখ্যা। বাস স্টেশন বা রেল স্টেশনে যাওয়ার জন্য চাহিদামতো সিএনজি অটো বা রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না রাস্তায়। শহর ছাড়ছেন না কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হয়ে দীর্ঘসময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহন পাচ্ছেন না অনেকে। মাঝেমধ্যে কিছু গণপরিবহন পাওয়া গেলেও সেগুলো এখন তাদের রুট পাল্টে বাস ও ট্রেন স্টেশনমুখী যাত্রীদের বহন করছে। 

শনিবার (৯ জুলাই) রাজধানীর নিউ মার্কেট, এলিফেন্ট রোড, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, মালিবাগ, কাকরাইল, বিজয় সরণী ও রামপুরা এলাকা ঘুরে, ভোগান্তিতে পড়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এমন অবস্থার কথা জানা গেছে।

এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। ফাঁকা রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও অনেক কম। রিকশা, অটোরিকশাসহ গণপরিবহনের সংখ্যাও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। মাঝেমধ্যে কয়েকটির দেখা মেললেও সেগুলো অল্প দূরত্বের যাত্রীদের নিচ্ছে না। বিশেষ কাজে রাস্তায় বের হওয়া মানুষদের দীর্ঘসময় রাস্তায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। রাস্তায় গণপরিবহন কম থাকার সুযোগে সিএনজি ও রিকশাচালকরা বেশি ভাড়া আদায় করছেন বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।

দীর্ঘ সময় নিউ মার্কেট এলাকায় পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মোস্তফা কামাল। তিনি সায়েদাবাদ এলাকা থেকে বাসে নোয়াখালী যাবেন। আধাঘণ্টারও বেশি সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। সিএনজি-অটো পাচ্ছেন না। এমনকি, উবার কল করেও পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি; সায়েদাবাদ যাওয়ার মতো কোনও গাড়ি পাচ্ছি না। প্রতি ঈদের সময়ই এমন অবস্থা হয়।

ফার্মগেটে এক যাত্রী ট্রেনে করে সিলেট যাবেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর অবশেষে একটা সিএনজি অটো পেয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে ১৫০-১৭০ টাকার ভাড়া হলেও আজ ৩০০ টাকায় যাচ্ছেন ফার্মগেট থেকে কমলাপুর। তিনি বলেন, সময়মতো যেতে না পারলে ট্রেন ধরতে পারবো না। তাই ডাবল ভাড়া দিয়েও যেতে বাধ্য হচ্ছি। 

মনিপুরি পাড়ার বাসিন্দা মোতালেব আহমেদ। তিনি কল্যাণপুর থেকে বগুড়া যাবেন বাসে। দীর্ঘসময় ধরে রাস্তায় অপেক্ষা করেও কল্যাণপুর যাওয়ার মতো কোনও পরিবহন পাচ্ছেন না। মোতালেব বলেন, এই সমস্যা হবে জানি। তাই ৪-৫ দিন আগে পরিবারের সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি আজ যাচ্ছি। একা বলে কষ্টটা গায়ে লাগছে না। হয়তো হেঁটেই কল্যাণপুর যেতে হবে। 

কাওরান বাজারে প্রচুর যাত্রী। ট্রান্সসিলভা বাস কেবল সায়েদাবাদ বা যাত্রাবাড়ীর যাত্রী ছাড়া অন্য যাত্রীদের বাসে উঠতে দিচ্ছে না। বাসের চালক মজনু মিয়া বলেন, লোকাল যাত্রী নিলে এখন পোষাবে না। ডাইরেক্ট সায়েদাবাদ বা যাত্রাবাড়ীর যাত্রী নিচ্ছি। যেখানে যাক, ভাড়া ৫০ টাকা। অন্যসময়ের ভাড়া ৩০ টাকা হলেও এখন ঈদের বকশিসসহ ভাড়া ৫০ টাকা বলেও জানালেন মজনু মিয়া। 

এদিকে, রাজধানীর সড়কে বিভিন্ন রুটের বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় বেশ খুশি এবং ফুরফুরে মেজাজে আছেন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা। তারা বলছেন, ঈদের সময় অনেকেই বাড়ি যান না। তখন রিকশা আর সিএনজি যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। তাছাড়া ঈদের আগে পরে মিলিয়ে ৬-৭ দিন রাস্তা ঘাটে জ্যাম থাকে না। সব রাস্তায় রিকশা চলতে পারে। সবাই কিছু না কিছু বেশি ভাড়া দেয়। এই সময় তাদের আয় বেশ ভালো হয় বলে জানান রিকশা ও অটোর একাধিক চালক। 

কাওরান বাজারে যাত্রী নামিয়ে কাঁধের গামছায় ঘাম মুছতে মুছতে রিকশাচালক খোকন মিয়া বলেন, গত তিন বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। ঈদের সময় বাড়ি যাই না। ঈদের সপ্তাহ খানেক বেশি খেপ মারা যায়, টাকাও ভালো আয় হয়। এসময় রাস্তাঘাট থাকে পুরা ফাঁকা, রাস্তায় যানজট কম। রিকশা চালাতে খুব মজা লাগে। ঈদের এক সপ্তাহ পরে গ্রামে যাই। যেতেও শান্তি, ফিরে আসতেও।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়