চিংড়ি শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের আহ্বান 

চিংড়ি শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। 

তিনি বলেছেন, মালিক যদি শ্রমিকদের স্বার্থ না দেখেন, তাহলে শ্রমিকরাও মালিকদের স্বার্থ দেখবেন না। সবাই মিলে সমস্যা সমাধানে সঠিক কৌশল বের করতে হবে।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ আয়োজিত জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। 

‘চিংড়ি শিল্পের নারী শ্রমিকদের অবস্থান: বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য বেগম শামসুন নাহার, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প কর্মকর্তা হালিমা বেগম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল বাবুল, একাত্তর টিভির সহযোগী প্রধান বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান, স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, অক্সফ্যামের প্রতিনিধি শাহাজাদী বেগম, ডিওয়াইডিএফ’র সিইও অমিয় প্রাপন চক্রবর্তী, সিমভী’র অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা ইসাহাক ফারুকী, কাপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক, শিক্ষকনেতা অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, সাতক্ষীরার ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু সালেহ বাবু, ইউপি সদস্য জি এম আব্দুর রউফ ও নিপা চক্রবর্তী এবং চিংড়ি শ্রমিক রেখা রানী মৃধা ও শেফালী বিবি।

সংলাপে ডেপুটি স্পিকার বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম চিংড়ি খাত নানা হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, এই খাতে জড়িত নারী শ্রমিকরা নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে পিছিয়ে থাকা এসব নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর প্রতি বিদ্যমান সকল বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।

উপমন্ত্রী হাবিবুর নাহার বলেন, নানা ষড়যন্ত্রের মুখে দেশের চিংড়ি খাত। এর মধ্যে অন্যতম শ্রমিক সঙ্কট, বিশেষ করে নারী শ্রমিক। মজুরি কম ও পুরুষের চেয়ে বেশি সময় কাজ করার কারণে দিনে দিনে এ খাতের নারী শ্রমিক কমে যাচ্ছে। চলমান সঙ্কট দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের মাধ্যমে নারী শ্রমিকদের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

সংলাপে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করলেও মজুরি বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে শত চেষ্টার পরও বের হতে পারেনি চিংড়ি শিল্পের নারী শ্রমিকরা। বৈষম্যের কারণে একজন নারী শ্রমিক বছরে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা কম আয় করেন। ফলে, তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যা নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটি বড় অন্তরায়।

জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের নারী চিংড়ি শ্রমিকদের সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণে আয়োজিত সংলাপ থেকে কয়েক দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে বলা হয় পুরুষ শ্রমিকের মতো নারী চিংড়ি শ্রমিকদের সমান মজুরি দিতে হবে। চিংড়ি খামারে স্বাস্থ্যকর ও কাজের উপযুক্ত শালীন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। টয়লেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। খামারে বিশ্রাম নেওয়া মতো ছায়াযুক্ত স্থান ও খাবার পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। বজ্রপাতের সময় তাৎক্ষণিক আশ্রয়ের জন্য শেডের ব্যবস্থা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।