রং-তুলিতে পুলিশ বক্স সাজাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, রাঙাচ্ছেন নগরী
ছবি: মেহেদী হাসান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিরপুর ২ নম্বরে অবস্থিত পুলিশ বক্সটি হামলার শিকার হয়। শিক্ষার্থীরাই এখন রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে ওই পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা। শিক্ষার্থীদের করা ক্যালিওগ্রাফি-গ্রাফিতিতে চোখ আটকে যাচ্ছে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সবার।
দেখা গেছে, কাঠফাটা রোদে শিক্ষার্থীদের এক হাতে রংয়ের কৌটা, অন্য হাতে তুলি। শরীর বেয়ে বেয়ে চুয়ে পড়ছে ঘাম। তবু, চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের।
সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় উৎসবের সময়ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার স্থাপনা আক্রান্ত হয়। আবার অনেক দেয়ালে ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক অশোভনীয় স্লোগান। বিভিন্ন দেয়াল নানা পণ্যের বিজ্ঞাপনের কারণে ছিল শ্রীহীন।
মঙ্গলবার থেকে এসব দেয়াল ও স্থাপনায় রঙ করছেন শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অঙ্কনের কাজ। এলাকার বিভিন্ন দেওয়ালে ক্যালিওগ্রাফি করতে সকাল থেকেই নানা প্রান্ত থেকে হাজির হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন প্রতিটি দেওয়াল কালো, সাদা, লাল, নিল, হলুদসহ নানা রঙে রাঙাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও হাতে ছিল রঙ-তুলি। তাদের সাহায্য করছেন অন্য শিক্ষার্থীরা। কোথাও শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, দেশাত্মবোধক গানের অংশবিশেষ, কোথাও নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, কোথাও বিদ্রোহী কবির সেই আগুনঝড়া কবিতার ‘বল বীর, বল বীর, বল উন্নত মম শির’। সবার মুখেই যেন ছিল বিজয়ের হাসি।
শিক্ষার্থীদের এসব কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন রাজধানীবাসী। অনেক পথচারী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আর কর্মতৎপরতা দেখছেন।
এদিকে, গত দুই দিনের ধারাবাহিকতায় আজও আনসার বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের রাজধানীর বিভিন্ন সিগন্যালে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিও।
রাস্তায় সিগন্যালের পাশাপাশি তারা ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠা-নামা ও গণপরিবহনগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে থামার নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের বাধ্য করছেন তারা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই ভূমিকায় খুশি পথচারী ও গণপরিবহনের চালকরা।
তারা বলেন, পুলিশ নেই, তবু সড়কে শৃঙ্খলা আছে। শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। খুব বেশি যানজট হচ্ছে না।
হাসান/রফিক