ঢাকা     সোমবার   ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

‘মায়ের ডাকে’র মানববন্ধন: গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ১২ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১৩:৩৩, ১২ আগস্ট ২০২৪
‘মায়ের ডাকে’র মানববন্ধন: গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি

‘মায়ের ডাকে’র মানববন্ধন

গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি তিন দফা দাবি জানিয়েছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

সংগঠনের অন্য দাবি দুটি হলো-গুমের শিকার ব্যক্তিদের আয়নাঘরের মতো বন্দিশালা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এবং জাতিসংঘ ও নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দ্রুত একটি কমিশন গঠন করা-যা ঘটনার তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার পর্যন্ত করণীয় সবই করবে। পাশাপাশি আয়নাঘরগুলো ভেঙে জাদুঘর করা, যাতে আর কেউ গুম-খুন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে না পারে।

সোমবার (১২ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত মানববন্ধনে লিখিত দাবি পড়ে শোনান সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম।

এ সময় সানজিদা ইসলাম বলেন, স্বজনদের গুম করে আটকে রাখা হয়েছে। তারা জীবিত আছে কি না, ফেরত আসবে কি না, তা আমরা জানি না। আমরা চাই, আমার মা সহ অন্য মায়েরা যেন সন্তান ফিরে পান। মায়ের ডাক’র আরেক সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম জানান, তারা এক যুগ পরে স্বাধীনভাবে শহীদ মিনারে এসে কথা বলতে পারছেন।

মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম ‘মায়ের ডাকে’র আয়োজনে শহীদ মিনারে আসতে পেরেছেন বলে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়া সহজ বিষয় নয়। নতুন সরকারকে সময় দিতে হবে। তবে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।

মানববন্ধনে যোগ দেওয়া স্বজনদের হাতে ছিল গুমের শিকার ব্যক্তিদের ছবি এবং বিভিন্ন দাবি সংবলিত পোস্টার। এদের কেউ হারিয়েছেন সন্তান, বাবা, স্বামী, কেউ ভাই বা পরিবারের অন্য কোনো স্বজনকে। বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বজনদের অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এ সময় একজন অন্যজনকে সান্ত্বনা দিতে দেখা গেছে।

কর্মসূচিতে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের গবেষণা কর্মকর্তা তাসকিন ফাহমিনা জানান, অধিকারের হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনো ১৫০ জনের হদিস পাওয়া যায়নি।

সাংবাদিক সাঈদা গুলরুখ বলেন, গত ২৮ বছরেও জানা যায়নি কল্পনা চাকমা কোথায়। ২৩টি গুপ্ত কারাগারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো দেশে কেন থাকবে, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ছোট শিশু হৃদি বাবাকে দেখে না ১০ বছর। তার বাবা পারভেজ গুমের শিকার হয়েছেন।  হৃদি বলে, ‘১০ বছর ধরে পাপাকে খুঁজছি। আমার পাপা তো নেই। আমার পাপাকে ফিরিয়ে দেন।’ 

আরেক শিশু সাফাও ১০ বছর ধরে জানে না, তার বাবা কোথায়। অন্য শিশুদের মতো সে-ও বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চায়। রাইদার বাবা গুম হয়েছেন ১১ বছর আগে। যারা তার বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সে প্রশ্ন করে রাইদা। আনিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘বাবা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন, এটাও জানা নেই।’

রেহানা মুন্নীর বাসা থেকে ২০১৩ সালে তার ছোট ভাই সেলিম রেজাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তি নেই, ঈদ নেই। আমার ভাইয়ের অপরাধ ছিল সে বিএনপি করতো। আমার বাবা মারা গেছেন আর মা মৃত্যুপথযাত্রী। আমার ছোট ভাই সেলিম রেজাকে ফিরিয়ে দেন।’

/এমএ/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়