ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মানবিকতার মূল্যবোধ না জাগলে পরিবর্তন আসবে না: পার্বত্য উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১১, ১৩ আগস্ট ২০২৪  
মানবিকতার মূল্যবোধ না জাগলে পরিবর্তন আসবে না: পার্বত্য উপদেষ্টা

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষকরা তাদের পণ্যের সঠিক মূল্য পান না। মিডলম্যানরা তা শুষে নিচ্ছে। মানুষের মধ্যে মানবিকতার মূল্যবোধ থাকতে হবে। মানবিকতার মূল্যবোধ না জাগলে কোনোকিছুতেই পরিবর্তন আসবে না।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্ররা সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন।

সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, সমাজকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তুলতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে ইমোশনের কোনো জায়গা নেই। ভুল করারও সুযোগ নেই। উপদেশ হলো—অনেক কাজ হয়েছে। এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের পাশে সাহসী লোকজন আছে। এ দেশটা আমার-আমাদের। ভেদাভেদ বলতে কিছু নেই। কোয়ালিটি দরকার। আমাদের কর্মক্ষম লোক দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে কোনো পরামর্শ থাকলে আমাদের দেবেন।

উপদেষ্টা বলেন, সকলের মধ্যে কনফিডেন্স গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকে ভাই ভাই সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সকলের মনে ইকুইটি গড়ে তুলতে প্রয়োজন লিডারশিপ। ‍

‘আমাদের শিক্ষার প্রতি বেশি নজর দিতে হবে। আমাদের আগের পলিসি সংস্কার করে নতুন পলিসি করা প্রয়োজন। সকল পলিসিই হতে হবে মানুষের কল্যাণে,’ বলেন তিনি।

খাগড়াছড়িতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এফিলিয়েটেড ভার্সিটি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা। অতি সহজেই একজন পাহাড়ের ছাত্র যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট লাভ করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় এখন উচ্চফলনশীল ও উপকারী গাছ লাগাতে হবে। পরিবেশ ও সামাজিক ভারসাম্য ঠিক রেখে বনায়ন করতে হবে। 

বাঁশ চাষের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, বাঁশ পরিবেশবান্ধব। আমাদের খাল, নদী, ঝিরিগুলোর প্রবাহকে সচল রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে আমাদেরকে বেশি বেশি ইক্ষু, কফি, কাজু বাদাম, আঙ্গুর ও তুলা চাষ করতে হবে। এছাড়া, আম-কাঁঠালের বাগান সৃজন করতে হবে। প্রথমেই আমাদের পরিবেশকে ঠিক করতে হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অবদান রাখা ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হতে কিছু স্কিম গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য তিন জেলার রাস্তার উভয় পাশে ফলের চারা লাগানো দরকার। রাস্তার পাশের ফলের মালিকানার অংশীদার হবেন রাস্তার পাশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এজন্য পরিচর্যা বাবদ তারা ভাতাও পাবেন। 

সচিব আরও প্রস্তাব করেন, গরিব প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলা থেকে অর্থের একটি থোক বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। নবজাতক শিশুদের জন্য একটি গিফট বক্স রাখা যেতে পারে।

এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, আমরা নতুন ও আধুনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়তে চাই।

ছাত্ররা উপদেষ্টার কাছে পার্বত্য অঞ্চলের পানির সঙ্কট নিরসন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, শিক্ষাব্যবস্থায় লবিং ও দুর্নীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মনোযোগ দিয়ে ছাত্রদের কথা শোনেন এবং এসব বিষয়ে কাযর্কর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাম্মদ এরফানুল হক, শাহাদাৎ ফরাজী, মিনহাজ মুরশীদ, থোয়াইচিংমং চাক, রফিকুল ইসলাম, জিয়াদ, রামখুমলিয়ান মংপা বম, মো. রাসেল মাহমুদ, ইরফান ও মিনহা ত্বৌকি উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম, যুগ্ম সচিব সজল কান্তি বনিক, উপ-সচিব কংকন চাকমা, উপ-সচিব মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হাসান/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়