ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জুলাই সনদ: আশার স্বাক্ষর, অনিশ্চয়তার ছায়া

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১৭ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১৩:০২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই সনদ: আশার স্বাক্ষর, অনিশ্চয়তার ছায়া

ফাইল ফটো

আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুরু হতে যাচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ‑২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এটি ব্যাপক আলোচনায় পরিণত একটি রাজনৈতিক নির্দেশক দলিল, যার বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি নানা ধরনের প্রশ্ন ও অবস্থান নিয়ে উত্তাল অবস্থানে রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন। ঐকমত্য কমিশন এ সনদকে একটি ‘নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যদিও স্বাক্ষর আজ সম্পন্ন হওয়ার কথা, এই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, আইনগত ভিত্তি ও গণভোটসহ আরো অনেক দিক এখনো বিতর্কের তালিকায় আছে।

আরো পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশন ও প্রস্তুতি
ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে এসেছে। ১৩টি কমিশন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়া ছক, ভাষাগত ও শব্দগঠন সংশোধনের জন্য দলগুলোর নোট অব ডিসেন্ট গ্রহণ করে সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুসভা ও আয়োজন প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে দাবি করা হয়েছে, তবু দলের অংশগ্রহণ ও স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ ও দ্বিধা রয়েছে। 

এ বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আজ যদি কোনো দল স্বাক্ষর না করতে পারে, তারপরও তারা পরবর্তী সময়ে স্বাক্ষর করতে পারবে।”

উল্লেখ ছিল, আদেশ ও আইনগত ভিত্তি নির্ধারণ করা হবে কমিশনের মেয়াদকালের মধ্যে। মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। 

দলগুলোর অবস্থান ও আপত্তি

বিএনপি ও মিত্র দলসমূহ: বিএনপি–মিত্র গোষ্ঠী স্বাক্ষরের ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, নোট অব ডিসেন্ট হিসেবে যেসব আপত্তি রয়েছে সেগুলো যদি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তারা স্বাক্ষর করবে।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “কোন প্রশ্নের উত্তরে শুক্রবার (আজ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ আগেই বলেছিলেন, বিএনপি স্বাক্ষরের পক্ষে রয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন আজ হবে।

জামায়াত: জামায়াত বলেছে, তারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে কিন্তু স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি। 

দলেরসেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “সনদে স্বাক্ষর করার আগে তার আইনগত ভিত্তি স্পষ্ট হওয়া উচিত।”

এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি): এনসিপি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না, যদি আইনগত ভিত্তি দেওয়া না হয়। 

এ বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আইনি ভিত্তি ছাড়া স্বাক্ষর হলে এটি মূল্যহীন হবে। স্বাক্ষরের আগে খসড়া আদেশ এবং বিধানগুলোর বিষয়বস্তু প্রকাশ করা উচিত।”

বাম জোট (সিপিবি, বাসদ, বাসদ- মার্ক্সবাদী, জাসদ): এই চার দল একসঙ্গে ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা আজ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না এবং সনদে সই করবে না। 

তাদের অভিযোগ, খসড়ায় তাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট যথাযথভাবে স্থান দেওয়া হয়নি এবং ইতিহাস, স্বাধীনতা ঘোষণা, সংবিধান সংশোধন বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। 

বিতর্ক ও প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়সমূহ: গণভোট কখন হবে? দলগুলোর মধ্যে দ্বিধা রয়েছে যে গণভোটের সময়সূচি সংসদ নির্বাচন সংযুক্ত করা হবে না বা নভেম্বরেই আলাদা হবে। 

সংবর্ধনা ও আইনগত ভিত্তি: এনসিপি দাবি করছে, যেকোনো আদেশ বা আইনগত ভিত্তি ছাড়া স্বাক্ষর করা হলে সনদ শূন্য হবে। 

নোট অব ডিসেন্টের গুরুত্ব: বিএনপি, বাম দল ও অন্যরা দাবি করছে, তাদের আপত্তি সনদে সন্নিবেশিত করতে হবে যেন স্বাক্ষর কার্যকর হয়। 

সংবিধান সংশোধন ও সনদ প্রক্রিয়া: বাম দলগুলোর অভিযোগ, স্বাধীনতা ঘোষণা ও ইতিহাস বিষয় সম্বন্ধে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন ৬ষ্ঠ ও ৭ম তফসিল, ১০৬ অনুচ্ছেদ ইত্যাদি। 

পরবর্তী স্বাক্ষর সুযোগ: কমিশন বলেছে, আজ স্বাক্ষর না করলেও পরে সব দল স্বাক্ষর করতে পারবে। 

নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ প্রভাব: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে; সেটি পরিবর্তনযোগ্য হবে না।”

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বলেছেন, “সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশ একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু করবে। যদি সনদ এবং তার বাস্তবায়ন একসাথে না এগোয়, তাহলে রাজনৈতিক স্থবিরতা ও নতুন বিতর্কের উদ্ভব ঘটতে পারে।” 

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও ঢাকা-৮ আসনের ভোটার মো. জাহিদুর রহমান বলেন, “আজকের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তির ঘোষণা, অত্যন্ত গুরুত্ববহভাবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত দলগুলোর আপত্তি ও নোট অব ডিসেন্ট নিষ্পত্তি না হয়, স্বাক্ষর কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হবে কি হবে না, তা রাজনৈতিক প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।”

তিনি বলেন, “সকল দল যদি স্বাক্ষর করে, তাহলে এই সনদ একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে। আবার কোনো বড় দল যদি সই না করে, তাহলে উদ্যোগের গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতা প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে পড়ে যাবে।”

ঢাকা/এএএম/এস

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়