ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আলুর বাম্পার ফলনে অবরোধের থাবা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ২২ মার্চ ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আলুর বাম্পার ফলনে অবরোধের থাবা

হাসান মাহামুদ : ২০১৪ সালের এ সময়ে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল কৃষকরা। এবারো ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকদের মাথায় হাত। কিন্তু অভিযোগ করা যাচ্ছে না নির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে। কারণ আলুর বাম্পার ফলনে এবার থাবা বসিয়েছে অবরোধ-হরতাল নামক বিষফোঁড়া।

 

গত বছর আলুর মৌসুমের শুরুতে ঋণের দায় শোধ করতে ১ টাকা কেজিতেও আলু বিক্রি করতে হয়েছিল কৃষকদের। এ ঘটনায় তারা আক্ষরিক অর্থেই পথে বসে যান। অভিযোগ উঠেছিল, পরে বেশি দামে বিক্রি করবে বলে পাইকাররা কম দামে আলু কিনে হিমাগারে রাখে।

 

এবার অবরোধের কারণে পাইকাররাই ঠিক মতো যাচ্ছে না কৃষকদের কাছে। ফলে কম দামেও আলু বিক্রি হচ্ছে না। চলমান অবরোধ ও হরতালে আলু চাষিদের মুখ মলিন হয়ে গেছে। আলুর বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। লাভ করা তো দূরের কথা, খরচের টাকা ঘরে তুলতেই হিমসিম খাচ্ছেন আলু চাষিরা। তাই কৃষকরা খড় দিয়ে ঢেকে আলু সংরক্ষণ করছে, পরিস্থিতি শান্ত হলে বিক্রি করবে এই  আশায়।

 

এই অবস্থায় সর্বশেষ ভরসা হিসেবে, আলু রপ্তানিকে একমাত্র উপায় হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, গতবার আলু রপ্তানি বাড়ায় কৃষকরা শেষদিকে হলেও কিছু লাভ পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এবারো রপ্তানি না হলে কৃষকদের লোকসান দিয়েই আলু বিক্রি করতে হবে।

 

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ রাইজিংবিডিকে বলেন, বেশির ভাগ কৃষক ধারদেনা করে মৌসুমী শস্য চাষ করে। এক্ষেত্রে আলুকে তারা আর্শিবাদ হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ আলু চাষ থেকেই তারা লাভের আশা করে বেশি। তিনি বলেন, অবরোধের কারণে দেশের প্রায় সকল সেক্টরেই ক্ষতি হচ্ছে। তবে কৃষকদের ক্ষতির দিকটা আমাদের বেশি বিবেচনায় রাখা উচিত। কারণ কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।

 

এদিকে আশা করা হচ্ছে, চলতি রবি মৌসুমে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চলতি মৌসুমে ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। কিন্তু  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য মতে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।

 

একই সঙ্গে এবার আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। গত বছর সারা দেশে ৮৬ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়। এবার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৯০ লাখ টন। আশা করা হচ্ছে, এই লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু উৎপাদন হবে। কিন্তু টানা অবরোধের কারণে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। ফলে এসব আলু কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

 

অন্যদিকে, অবরোধ-হরতালের কারণে এরই মধ্যে আলুর ওপর চাপ পড়ছে। ফলে ভরা মৌসুমেই আলুর দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রমপুর ভান্ডারের পাইকারী আলু ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বাজারে অন্যান্য সবজির উপস্থিতি কম। ফলে এসব সবজির দামও বেশি।

 

তিনি বলেন, অন্যান্য সবজির চেয়ে দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা বাধ্য হয়ে আলু কিনছেন। এতে বাজারে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সে পরিমাণে আলু ঢাকায় আসছে না।

 

এ ছাড়া আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার আলু রপ্তানিও কমে যাবে। আলুর বাম্পার ফলন হলেও মৌসুমে কৃষক দাম পায় না। বাজারে চাহিদা কম থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। এ কারণে গত বছল বাড়তি উৎপাদিত আলু রপ্তানিতে উৎসাহিত করে সরকার। আলুর রপ্তানি বাড়াতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তার ঘোষণাও দেওয়া হয়।

 

এবারো এ ধরনের ঘোষণা থাকবে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হিমাগারেও আগের বছরগুলোর মতো আলু সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় টানা অবরোধ-হরতাল আলু রপ্তানিতেও ধস আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার আলু রপ্তানি হয়। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে আয় হয় ৩ কোটি ৩৮ লাখ ২২ হাজার ডলার। কিন্তু ব্যুরোর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছর এখনো আলু রপ্তানি হয়নি।


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মার্চ ২০১৫/হাসান/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়