ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আমরা বাঙালি, আমরাই পারি

কবীর চৌধুরী তন্ময় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমরা বাঙালি, আমরাই পারি

বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘… সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবা না।’

জাতির পিতার ওই উদ্যোমী বক্তব্য শুধু সাত কোটি মানুষকেই মন্ত্রমুগ্ধ করেনি, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের মরণ-পণ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম দিতে ত্রিশ লাখ মানুষ বুকের তাজা রক্ত এদেশের সবুজ জমিনে ঢেলে দিয়েছে। দুই লাখেরও বেশি নারী পাকিস্তানিদের পাশবিক অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ ভূমিষ্ঠ করেছে।

পিতা মুজিব তাঁর জীবনের ২৩ বছর জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করে আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, একটি স্বাধীন জাতিগোষ্ঠীর নাম-পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনা তলাবিহীন রাষ্ট্রকে প্রথমে মাথা তুলে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের করেছেন উদ্যোমী। সেই বলে বলীয়ান হয়ে আজ আমরা বলতে পারি- হ্যাঁ! আমরাই পারি। আমরাই বাঙালি। এই বাঙালিকে সব পারার অনুপ্রেরণাদাতা বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনা।

শুধু তাই নয়, পৃথিবীজুড়ে একমাত্র শেখ হাসিনার মতো রাষ্ট্রনায়ক শত-সহস্র অপপ্রচার উপেক্ষা করে, ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক মন্তব্য শুনেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে দেশ ও জাতির জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এজন‌্য তাঁকে একবার, দুবার নয়, উনত্রিশবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। প্রতিবারই তিনি মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে এগিয়ে চলেছেন আগামী প্রজন্মের জন‌্য ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র‌্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। তাহলে এ প্রজন্ম কেন উদ্যোমী হবে না। কেন গর্ববোধ করবে না। কেন বলবে না- আমরা বাঙালি। আমরাই পারি।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশের যুবারা। গতকাল মাঠে বোলিং, ফিল্ডিং, ব‌্যাটিং তিন জায়গাতেই তারা দুর্দান্ত ছিল। লক্ষ্যটাও ছিল স্থির। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ছিল দারুণ। খেলার মাঠে নানান নাটকীয়তার মাঝে টাইগারদের একেবারে খাঁদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন‌্য ছিল  আত্মপ্রত্যয়ী চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা। এটি এক কথায় অসাধারণ। এই লড়াকু মনসিকতার সঙ্গে পেরে ওঠেনি ভারত। তাদের হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।

৯ ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য সত্যিই স্মরণীয় দিন। এমন দিন কখনও আসেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ, গৌরবান্বিত হওয়ার কৃতিত্ব। ক্রিকেট উন্মাদনার এই রেকর্ড অর্জনে- আমরা বাঙালি, আমরাই পারি- এই ভাবনা প্রচণ্ডভাবে কাজ করেছে। চারবারের রেকর্ড ট্রফিজয়ী ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অভূতপূর্ব সাফল্যের দিন আসলে আমাদের পারার দিন, আমাদের বাঙালির দিন। মুজিববর্ষের প্রাক্কালে এই জয়ে খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই খেলোয়াড়ী মনোভাব ধরে রেখে এভাবেই ভবিষ্যতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

পাঠক লক্ষ‌্য করুন, লেখার শুরুতেই ‘আমরাও পারি’ এই সাহস আর আত্মপ্রত্যয়ের কথা বলেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনাও তাঁর অভিনন্দন বার্তায় এই মনোভাবের কথা বলেছেন। এবং আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এই জয়ে অভিনন্দন বার্তায় ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও। বিশ্বের ক্রিকেট তারকারাও বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি। সাবেক ভারতীয় স্পিনার হরভজন আকর্ষণীয় ফাইনাল দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দুর্দান্ত একটা ফাইনাল ছিল এটা। অভিনন্দন, বিসিবি টাইগার্স বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। টিম ইন্ডিয়ার চিন্তার কোনো কারণ নেই, তোমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই খেলেছ।’

অন্যদিকে এই ট্রফি আকবরদের প্রাপ্য বলে মন্তব‌্য করেছেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। ভুলে যায়নি ভারত ক্রিকেট বোর্ড। তারা অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশকে, ‘ভালো লড়াই করেছ টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপের ফাইনালে দারুণ সমাপ্তি, অভিনন্দন বাংলাদেশ।’ পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শোয়েব মালিকও প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বিজয়ী হওয়ার জন্য অনেক অভিনন্দন। আমি টুর্নামেন্টটি খুব কাছ থেকে দেখেছি এবং দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বের অনেক তরুণ প্রতিভা এখান থেকে উঠে আসছে। তাঁদের অগ্রগতি দেখতে আমি উন্মুখ হয়ে আছি। তবে আপাতত ছেলেরা উদযাপন করুক।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, গবেষক ও সকল শ্রেণিপেশার মানুষসহ গ্রামের ছোট্ট কিশোরও বাংলাদেশের এই জয়ে আবেগ আটকে রাখতে পারেনি।

আমাদের আটকে রাখা সম্ভব নয়। আমরা দুর্দান্ত। আমরা উদ্যোমী। আমরা উড়ে যাব দেশ থেকে দেশান্তরে। আমরা জয় করব আমাদের স্বপ্ন। আমাদের পূর্বের নারী-পুরুষদের সর্বস্ব ত্যাগে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। মুক্তিযোদ্ধার বাংলাদেশ, আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে আমরাই গর্ববোধ করব। কারণ, আমাদের আছে শেখ হাসিনার মতো রাষ্ট্রপ্রধান। আমরা তাঁর উত্তরসূরী। পিতা মুজিব আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন, বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালিরা একত্রিত হয়ে সকল কিছু জয় করতে পারে। যে বাঙালি তাঁদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে সমবেত হয়ে অধিকার অর্জন করতে পারে, যে জাতি সকল অন্ধকারের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেই জাতি এগিয়ে যাবেই।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ জয়ের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর বাঙালির জয় হয়েছে। জয় হয়েছে আমাদের আত্মপ্রত্যয় ও সাহসের। এই প্রাপ্তি বাঙালি জাতিকে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব বিজয়ের গৌরব। অভিনন্দন টাইগার্স। অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট। আসুন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বাংলা মায়ের বিজয়ে সমস্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান গাই:

‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।।’

 

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়