ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সংলাপ নিয়ে আপাতত ভাবছি না: কাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ৮ জুন ২০২৩  
সংলাপ নিয়ে আপাতত ভাবছি না: কাদের

আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে সংলাপ নিয়ে ভাবছে না জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিদেশি বন্ধুরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সরকারও সেই ধরনের নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঐতিহাসিক ছয় দফা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।  

সরকারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আনার ষড়যন্ত্র করে বিএনপি নিজেরাই খাদে পড়েছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিলো নালিশ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনবে। নিষেধাজ্ঞার জন্য নালিশ করতে করতে বিএনপি এখন নিজেরাই খাদে পড়েছে। নিজেরাই খাদে পড়িয়া বগা কান্দে রে।

‘এখন তারা নালিশ করে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে ভিসানীতি পেয়েছে। এই ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কে কার প্রয়োজনে কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না- সেই দেশের ব্যাপার। আমরা আমাদের দেশে কাকে ভিসা দেব, কাকে দেবো না- এটা আমাদের ব্যাপার। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কী আছে?’

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভিসানীতিতে আছে, নির্বাচনে যারা বিশৃঙ্খলা করবে, সন্ত্রাস করবে, যারা নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচনে বাধা দেবে- তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। তারা কারা? তারা বিএনপি। সব নেতার গলা শুকিয়ে গেছে।

‘এখন কথার ছলে আমু ভাই (আমির হোসেন আমু) কী এক সংলাপের কথা বলছেন। তারা এটাকে আসল কথা ভেবে, এখন সংলাপের মূলা দেখে আবারও জিহ্বা বেড়িয়ে এসেছে। হবে না। হবে না। আপাতত আমরা ভাবছি না। ভাববো কি না, সেটা পরে দেখা যাবে। আপাতত আপনাদের সংলাপের মূলা ঝুলিয়ে টেবিলে বসাবো? গতবারের কথা মনে আছে? একবার না দু’বার তাদের সাথে সংলাপে বসেছি। রেজাল্ট কী? জগাখিচুড়ি।’

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নমিনেশন বাণিজ্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, নমিনেশন লন্ডন থেকে দেয়, ঢাকা থেকে দেয়, নয়াপল্টন থেকে দেয়, গুলশান থেকে দেয়। তিন জায়গা থেকে নমিনেশন বিক্রি করে। এটাই হচ্ছে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত গতবারের মতো নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্যেই কি এখন খেলাধুলা করছে? অনেক জায়গায় তিন জন, চার জনকে নমিনেশন দিয়েছে।

‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নিশ্চিত ছাড়া সংলাপ নয়’ মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেবের জিহ্বায় পানি আসছে। মনে করছেন ঠিক ঠিকই আওয়ামী লীগ তাদের সংলাপে ডাকবে। ওই সংলাপের কথা আমরা ভাবছি না। আপনার নেত্রী বলছে, শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। আপনি শিশু আর পাগলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজে বের করুন। তারপর দেখা যাবে।

দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরে আসবে না জানিয়ে বিএনপিকে মন না খারাপ করার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

‘এ নিয়ে ভেবে ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই। এটা আর আসবে না। তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে। মরা কিছুকে জীবিত করা চেষ্টা করবেন না। আমরা মারিনি, আদালতের আদেশে মরে গেছে। ফখরুল আপনি কেন বার বার আওয়ামী লীগের নামে এই অপবাদ দেন? আপনাকে সতর্ক করছি। আওয়ামী লীগের কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিষিদ্ধ করেনি। এটা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।’

খালেদা জিয়া আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী আইন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন করেছেন। কাজেই নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপনাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই।

‘আজকে বিদেশি বন্ধুরা চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন। তারা চায় ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের নেত্রী বার বার দেশে-বিদেশে আশ্বস্ত করে বলেছেন সেটা। এ নিয়ে কারও মাথাব্যথার কারণ নেই। আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন করবো।’

বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের পরিস্থিতি কী হবে, সেই বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে কাদের বলেন, তারা নির্বাচনব্যবস্থা গিলে খেয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, স্বাধীনতার আদর্শ গিলে খেয়েছে। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এবার যদি ক্ষমতা ফিরে পায়, তাহলে বিএনপি নামক এই বিষধর সাপের দল গোটা বাংলাদেশ গিলে খাবে। কাজেই দেশের মানুষ সাবধান।

এসময় বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপির কর্মসূচির কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বিএনপির শাসনামলে বিদ্যুতের শোচনীয় অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন।  

‘বিদ্যুৎ নিয়ে ফখরুল সাহেব হঠাৎ পদযাত্রা মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ, মশার কয়েল, পাতিল পাতিল রান্না করে পিকনিক করে....সেই দিন চলে গেছে। কিছুদিন ঝিমিয়ে পড়ে এখন আবার লাফালাফি শুরু করেছে। নিজেরা বিদ্যুৎ দিতে পারেননি, দিয়েছেন খাম্বা।’

তিনি বলেন, সংকট সারা বিশ্বে। এজন্য আমাদের দেশে সংকট হয়েছে। এর আগে কোনও সময় বিদ্যুৎ গেছে? কোনও লোডশেডিং হয়েছে? এটা বাংলাদেশে একটা উদাহরণ, বিরাট দৃষ্টান্ত। আজকে আমরা সময় চেয়েছি। আমরা জনগণকে বলেছি ১০-১৫টি দিন সহ্য করেন। সবাইকে বলছি, শেখ হাসিনা যা বলেন তাই করেন। মুখে যা বলেন কাজে তা করেন। তাজেই তার ওপর বিশ্বাস রাখেন।

এসময় বিএনপি নেতা তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতা কই। অনলাইনে কোনও অভ্যুত্থান হবে না। অনলাইনে জনগণ কারও কথায় আন্দোলন করবে না। সৎ সাহস যদি থাকে জেল খাটার জন্য প্রস্তুত হন। রাজপথে এসে সংগ্রাম-আন্দোলন করে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। সৎ সাহস নেই, তাই পালিয়ে আছেন।   

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

পারভেজ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়