নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধেই ভিসানীতি: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা এবং বহুমাত্রিক সম্পর্ক দিন দিন দৃঢ়তর হচ্ছে। সুতরাং কোনো ভিসানীতি বা কিছু নিয়ে কারো পুলকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই নীতি তাদের বিরুদ্ধেই প্রযোজ্য হবে, যারা নির্বাচনে বাধা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। সাম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ সেটিই প্রমাণ করে।’

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অকুতোভয় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‌আজকে বিএনপি নানা ধরণের কথা বলছে। ভিসা নীতি ঘোষণার পর এক কথা বলে, আবার পত্রিকায় গত পরশু দিন খবর আসার পর আরেক ধরণের কথা বলে। এগুলো বলে কোনো লাভ নেই।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু পরাশক্তি আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। কিন্তু সেইসব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। আজকেও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হয়। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৭১ সালে যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই নতুন সংস্করণ হচ্ছে বিএনপি। তাদের সহযোগী হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, তারা দেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করেনি, স্বাধীনতা সংগ্রামে তারা পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র তুলেছিল। এই বিএনপি-জামায়াত চক্র আজকেও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনে যদি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসেন তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। যদি কেউ না আসেন তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। নির্বাচন আমাদের, এই দেশ আমাদের, এখানে নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি আমরা ঠিক করবো। আমাদেরকে কারো গণতন্ত্র শেখাতে হবে না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা আমরা জানি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।

এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দেশবিরোধীদের প্রতিরোধে প্রীতিলতা, সূর্য সেনের মতো বিপ্লবীরা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রথম বাঙালি শহিদ নারী যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আত্মাহুতি দিয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী প্রীতিলতা মেট্রিকুলেশন ও ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামে অপর্ণাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন, সেই স্কুল এখনও আছে।

তিনি বলেন, সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের সদস্য অসীম সাহসী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যখন পুরুষের বেশে ইউরোপীয়ন ক্লাব সফলভাবে আক্রমণ করে ফিরে আসছিলেন, তখন তিনি গুলিবিদ্ধ হন। নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ব্রিটিশরা বিদ্রোহের পরিকল্পনা যেন না জানতে পারে, সে জন্য তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন।

ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রীতিলতার পরণের পোষাকে ৩২ পৃষ্ঠার একটি জবানবন্দি ছিলো। তিনি সেখানে লিখেছিলেন যে, ‘.....অত্যাচার ও স্বার্থসাধনে নিয়োজিত সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ সাধন করিয়া আমি ভারতবর্ষে গণতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তন করিতে ইচ্ছুক। আমি সেই ভারতীয় রিপাবলিকান আর্মির চট্টগ্রাম শাখার একজন সদস্য।....আমার দেশের ভগ্নীরা আজ নিজেকে দুর্বল মনে করেন না। সশস্ত্র ভারতীয় নারী হিসেবে সহস্র বিপদ ও বাধাকে তুচ্ছ করিয়া এই বিদ্রোহ আন্দোলনে যোগদান করিলাম। তাহার জন্য নিজেকে তৈয়ার করিলাম এবং এই আশা লইয়াই আমি আজ আত্মদানে নিজেকে উৎসর্গ করিলাম।’

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী  মনোরঞ্জন ঘোষাল ও ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, ডিইউজে'র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানিক লাল ঘোষ সভায় বক্তব্য দেন।