‘আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আদালতের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’
রোববার (১ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও ঢাকার আশপাশের জেলা শাখা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করতে এই সভা ডাকা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলছেন। কিন্তু এই অবস্থায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে হলে সংবিধান, প্রচলিত আইন, সরকারি কোনও কর্তৃপক্ষ কিংবা নির্বাহী বিভাগের হাতে কোনও ক্ষমতা প্রদান করেনি।’
‘এই অবস্থা তাকে বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’
সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগের এই ধরনের কোনও নজির দেশে-বিদেশে নেই জানিয়ে আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে পাকিস্তানের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সেদেশে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুর্নীতির দায়ে তার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তিনিও লাহোর হাইকোর্টের আদেশে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অনেকে আ স ম আব্দুর রবের কথা বলেছেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে। আ স ম রবের বিচার হয়েছিলো সামরিক আদালতে। প্রচলিত আদালতে নয়। দেশে তখন কোনও সাংবিধানিক সরকারব্যবস্থা চালু ছিলো না। আ স ম আব্দুর রব, কর্নেল তাহেরের সাথে একই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে দেশের উচ্চ আদালত কর্নেল তাহেরের সেই প্রহসনের বিচার সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনীকে বেআইনি, অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। সে কারণে আ স ম রবের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি কোনও প্রকার উদাহরণ হিসেবে এই প্রসঙ্গে বিবেচিত হতে পারে না।’
এসময় আরও উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের উচ্চ আদালত সম্প্রতি সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে একমাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ প্রদান করেছে। হাজী সেলিম তিনি ৩০ দিনের মধ্যেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। আদালতের রায়ে তার পাসপোর্ট বাতিল কিংবা ৩০ দিনের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার কোনও প্রকার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এক্ষেত্রে আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি।’
দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সার্বিক অবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ সংবেদনশীল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ উদারতা ও মানবিকতা দেখিয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন সংবিধান ফৌজধারী কার্যবিধি যতোটুকু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছে তার সর্বোচ্চটুকু তিনি খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত করে নিজ বাসায় থেকে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সেবা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। মানবিকতার এমন নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি দেখানো খুবই কঠিন।’
এসময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি বিএনপির ‘শত্রুভাবাপন্ন আচরণের’ কথা স্মরণ করে বলেন, ‘যেখানে একজন রাষ্ট্রনায়ক তার প্রধান প্রতিপক্ষের প্রতি এমন আচরণ। এটা এমন এক প্রতিপক্ষ যেই প্রতিপক্ষ আমাদের প্রতিপক্ষ ভাবে না। আমাদের শত্রুপক্ষ ভাবে।’
‘আমাদের জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, যারা একুশে আগস্ট স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং তাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। যা আমার মনে হয় এসব বিষয় আমাদের দরদ দেখানোর মানবিকতা দেখানো আমাদের নিজেদের প্রতি তাদের আচরণটাও মনে করা উচিত’, বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভয়েস অব আমেরিকার বক্তব্য শুনেছি। আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও বিস্তারিত কথা বলেছি। আইনের ব্যাখ্যা চেয়েছি। শুধু দেশের জনগণ নয় আমাদেরও এটা জানা উচিত। এটাই আমাদের পার্টির বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’
এ বিষয়ে আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত মেনে বক্তব্য বিবৃতি দিতে দায়িত্বশীল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজালুর রহমান, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সারোয়ার, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পারভেজ/এনএইচ