বিএনপিকে সীমার মধ্যে কথা বলার পরামর্শ কাদেরের
অক্টোবরে সরকারের পতন ঘটানোর বিষয়ে বিএনপির মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে দলটির নেতাদেরকে সীমারেখার মধ্যে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘যারা আমাদের পতন দেখছে, এই অক্টোবরে তাদেরই পতন হয় কি না? নিজেদের পতনের জন্য অপেক্ষা করুন। ভুলের রাজনীতি আপনাদের পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
রোববার (১ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, ঢাকার আশপাশের জেলা শাখা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এ যৌথসভা করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বন্ধুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় বসেনি। আওয়ামী লীগকে যারা ভয় দেখাচ্ছে, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ, এখন অক্টোবরের আল্টিমেটাম। অক্টোবর মাসেই পতন ঘটাবে। পতন ঘটাতে ঘটাতে নিজেরাই যে কতবার খাদে পড়েছে।
‘একটা রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা সীমারেখার মধ্যে থাকা উচিত। প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণবিধি আছে। সাধারণ আচরণবিধি লঙ্ঘন করা কারো উচিত না। অক্টোবর এখন চলছে, অক্টোবর আরও আসবে। ১৫ বছরে অনেক অক্টোবর এসেছে। এই সময়ে অনেকবার সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন, আওয়াজ শুনেছি।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্য এখন মানবিক আচরণের কথা, তাকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর তো শুনেছি, খালেদা জিয়া দেশ চালাবে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ৯ মাস চলে গেছে। এখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া দরকার। এতদিন তিনি তো ক্ষমতায় থাকতেন। কোনো বিষয়ে অহঙ্কারের প্রকাশ উচিত নয় কোনো রাজনৈতিক দলের।’
‘আমরা কখনো কাউকে সময় দেইনি। মির্জা ফখরুল কখনো বলে ১০ সিটও পাবো না, কখনো বলে ৩০ সিটও পাবো না। আপনার বাপ-দাদার দেশ? আপনাকে দাসরত দিয়ে দিয়েছে কে? কে আপনাকে এই সিটের তত্ত্বকথা জানিয়েছে। আপনার নেত্রীও বলেছিল ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সরকারি দল তো দূরের কথা, শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। এসব দম্ভের কথা, অহঙ্কারের উচ্চারণ আমরা অনেক শুনেছি। আমরা কিন্তু কাউকে বলিনি, এত সিটও পাবে না। কখনো আমরা দম্ভ করিনি, এই ধরনের প্রচারনা করিনি। জনগণের সম্মতি ছাড়া, রায় ছাড়া আমাদের কোনো বলার সুযোগ নেই।’
বিএনপিকে নিজেদের পতনের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা আমাদের পতন দেখছে এই অক্টোবরে, তাদেরই পতন হয় কি না? নিজেদের পতনের জন্য অপেক্ষা করুন। ভুলের রাজনীতি আপনাদের পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শেকড় মাটির অনেক গভীরে। ধাক্কা দিলেন আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেলো, সেটি ওই ধরনের দল নয়।’
‘বারবার চেষ্টা করেছেন, পারেননি। শেখ হাসিনাকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। ওই গ্রেনেড যদি ফাটত শেখ হাসিনাসহ ট্রাকে থাকা পুরো লিডারশিপ রক্তের স্রোতে চলে যেতো। সেটা তো পারেননি। ইনশাল্লাহ, পারবেন না আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে।’
দলের নেতাদের বেফাঁস কথা না বলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দল শুধু ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং বেফাঁস কথা না বলা। যার যার মুখে আসে, বলে দেয়। চিন্তা করে না। এই কথাটা আমাদের কতটা উপকারে আসছে আর কতটা ক্ষতি করছে। সুতরাং বক্তব্য-বিবৃতিতে সতর্ক থাকা উচিত। সময়টা খারাপ। একজন নেতার একটা কথা, একটা উচ্চারণ অনেক ক্ষতি করতে পারে।
এ সময় নেতাদের বিলবোর্ড প্রচারণা নিয়ে নিজের অস্বস্তি এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোর হাতে বলছি, দয়া করে বিলবোর্ডের খেলা বন্ধ করেন। এই বিলবোর্ডের দরকার নেই। এসিআর শেখ হাসিনার কাছে আছে, সবার রিপোর্ট তার কাছে জমা হচ্ছে। দেখি বিলবোর্ড আর বিলবোর্ড। কিছু কিছু নেতা মিটিং অর্গানাইজের চেয়ে দেখি বিলেবোর্ডে আগ্রহী বেশি। ধানমন্ডি থেকে আসতে দেখি কত যে নেতা, আতি নেতা, পাতি নেতা, সিকি নেতা…। এসব নেতা ক্ষমতা চায়, এমপি হতে চায়। এত সোজা না। এমপি হবে রিপোর্টের ভিত্তিতে, নেত্রীর কাছে যে এসিআর জমা আছে, তার ভিত্তিতে। বিলবোর্ড দেখিয়ে নেতা হওয়া যাবে না।’ এ সময় ঢাকা শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দেন তিনি।
বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সরকারকে বিপদে ফেলতে চায়, অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন তারা চাইবে সন্ত্রাস করতে। সরকারকে বিপদে ফেলতে, কোণঠাসা করতে। ঘেরাও করবে, অবরোধ করবে, লংমার্চ করবে। এসব সন্ত্রাসের প্রোগ্রামের দিকে তারা যাচ্ছে।’
‘আমাদের শপথ নিতে হবে, এসব সন্ত্রাস আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকবিলা করব। বাংলার মাটিতে নির্বাচন হবে। সহিংসতা আমরা ঐক্যবদ্ধ মোকাবিলা করব। কোনো সহিংসাতাকে আমরা প্রশয় দেবো না।’
তিনি বলেন, ‘লন্ডন থেকে বসে বসে নাটাই ঘোরাচ্ছে। এসব ২০১৪, ১৩তে যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চক্রান্ত আছে। ষড়যন্ত্র দেশে আছে, বিদেশেও আছে। শেখ হাসিনার এত উন্নয়ন-অর্জন তাদের সহ্য হয় না। কেন বাংলাদেশ কিভাবে এত এগিয়ে গেলো, এটা অনেকেরই সহ্য হয় না। ১/১১ এর মতো, ২০০১ সালের মতো অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার একটা সুগভীর চক্রান্ত আছে—ক্ষমতায় না যাই, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হবে। তাদের শত্রুই হচ্ছে শেখ হাসিনা। তাদের টার্গেটই হচ্ছে শেখ হাসিনা। এজন্য তারা চক্রান্ত করছে।’
সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজালুর রহমান, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্ল বড়ুয়া, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসবেক লীগের সভাপতি মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সারোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পারভেজ/রফিক