ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

মহাসমাবেশ: পুলিশের অভিযানের ঘোষণায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২৫ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ২০:১৪, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
মহাসমাবেশ: পুলিশের অভিযানের ঘোষণায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি

বিএনপির মহাসমাবেশের আর মাত্র দু’দিন বাকি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন টানটান উত্তেজনা, তেমনই সাধারণ মানুষ বিশেষ করে রাজধানীবাসীর মধ্যেও এক ধরনের ভীতি কাজ করছে।

সবার দৃষ্টি এখন ২৮ অক্টোবরের দিকে। কেবল দেশের নয়, সারাবিশ্বেরও নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। সবার ভাবনা একটাই, কী ঘটতে যাচ্ছে ২৮ তারিখে?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বেশ তৎপর রয়েছে দিনটিকে ঘিরে। রাজনৈতিক সমাবেশ-মহাসমাবেশের কারণে যাতে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ প্রশাসন।

দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেকে আগেভাগেই এসে পৌঁছেছে।

যারা এখনও আসেনি, তারাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আজ বা কালকের মধ্যে ঢাকায় আসার জন্য বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের টিকিটও কেটে রেখেছে। ঢাকায় আসার পথে বাধা বা গণপরিবহন বন্ধ হলে কীভাবে ঢাকা আসবে, তারও সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সবমিলিয়ে ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায় দলটি।

অন্যদিকে, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে গতকাল (২৪ অক্টোবর) রাত থেকে অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছে ডিএমপি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতা, নৈরাজ্য বা ধ্বংসযজ্ঞ এবং সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুজব ও অপপ্রচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালানো হতে পারে। তাই, কোনো সন্ত্রাসী- নাশকতাকারী বা জঙ্গি গ্রুপ যাতে কোনো বাসা, আবাসিক হোটেল, মেস, বস্তিসহ কোনো এলাকায় অবস্থান করতে না পারে; সেজন্য এলাকাভিত্তিক ব্লকরেইড, তল্লাশি ও চেকপোস্ট কার্যক্রম এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে ডিএমপি।

বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা মহানগর এলাকায় ডিএমপি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করে এলাকাভিত্তিক চেকপোস্ট, মেস ও বাসাবাড়িতে অপরিচিত লোকজনকে যাচাই-বাছাই করা হবে। আবাসিক হোটেলগুলোতে প্রতিদিনই তল্লাশি করা হবে। রাতে অলি-গলিতেও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে বলে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল (২৪ অক্টোবর) ডিএমপি কমিশনার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এমন ঘোষণার পর পরই গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও বিএনপি’র হাইকমান্ড থেকে ইতোমধ্যে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার এড়াতে, নেতাকর্মীদের মেস বা হোটেলের পরিবর্তে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঢাকার বাইরে থেকে মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকায় অবস্থানরত নেতাদের বাসাবাড়িতেও অবস্থান নিতে বলা হয়েছে বলে বিএনপি’র একটি সূত্র জানিয়েছে।

গত ২২ অক্টোরব ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও খিলগাঁও থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইউনুস মৃধাকে আটক করা হয়।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইদুর রহমান মিন্টু এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ২১ থেকে ২২ অক্টোবর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শুধু মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ধরপাকড়, মামলা, হামলার পরও সমাবেশ উপলক্ষ্যে ঢাকার বাইরে থেকে আসা, ঢাকায় অবস্থান করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ঢাকাতে বিএনপি বেশ কয়েকটা সমাবেশের সময় বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল বা মেস থেকে সেসব নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। সেজন্য আগামী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় অবস্থান নিতে মহাসমাবেশের ৩-৪ দিন আগেই নেতাকর্মীদের ঢাকায় চলে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে এবার হোটেল বা মেসে থাকার পরিবর্তে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

বিএনপি’র একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নেতাকর্মীদের বাধাহীনভাবে ঢাকায় আসতে হলে কমপক্ষে তিন দিন আগে আসতে হবে। বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে ২৫ অক্টোবরের মধ্যেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে পারে; এটা জানা কথা। এক্ষেত্রে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসতে যত ধরনের কৌশল আছে, তা গ্রহণ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা অনুযায়ী, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিগত দিনগুলোতে সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে, নেতাকর্মীরা যাতে সমাবেশে যোগ দিতে না পারে; সেজন্য রাস্তায় বিভিন্নভাবে হয়রানি, গ্রেপ্তারসহ গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তাই, আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আগেভাগেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে।

সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি ও তার শরিকদের কর্মসূচির পাশাপাশি একই দিনে রাজধানীর শাপলা চত্বরে আলাদা কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যদিও জামায়াতে ইসলামীকে শাপলা চত্বরে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি।

অন্যদিকে, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করে বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো যাতে রাজধানী অচল করে দিতে না পারে, সেজন্য বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একই দিনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর একাংশ।

বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার (২৫ অক্টোবর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলেন তিনি বলেন, সরকারি ষড়যন্ত্রের একচেটিয়া নির্বাচন দেশে আর হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য জনগণ এবার লাঠি, গুলি, টিয়ার গ্যাসের সামনে বুক পেতে লড়াই করবে। সকল কিছু মোকাবিলা করেই জনগণ এবার একচেটিয়া নির্বাচন প্রতিহত করবে।

রিজভীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও টিআইবির চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সরকার চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে, এই ব্যাপারে সরকারের ভাষ্য হবে; নিরাপত্তার জন্য চালাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শুধু যারা বিরোধীদলে রয়েছেন তারাই নয়, সাধারণ মানুষও মনে করে এই চিরুনি তল্লাশি করা হচ্ছে যাতে করে সমাবেশস্থলে মানুষজন আসতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতি যেহেতু এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এটা দুই দলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে জনগণের কোনো ভূমিকা নেই। একমাত্র আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া। এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। রাজনীতির এই পরিণতি কখনো চাইনি, এরকম চেহারাও কখনো দেখতে চাইনি। নিজেদের মধ্যে যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে সরকার এবং বিরোধী দল সাংঘর্ষিক অবস্থান থেকে সরে এসে আলাপচারিতা, আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে একটা সুন্দর পরিস্থিতি আমাদের জন্য তৈরি করবেন। যা হবে সবার জন্যই মঙ্গলজনক।

২৮ তারিখের মহাসমাবেশ বিষয়ে ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, ঢাকা শহরে একসময় একাধিক রাজনৈতিক দল সমাবেশ করতে না পারলেও বর্তমানে একই দিনে তিন-চারটি সমাবেশ হচ্ছে। প্রত্যেকটি সমাবেশস্থলে পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। নিকট অতীতে বড় বড় কয়েকটি সমাবেশ হয়েছে, কোথাও কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। আগামী ২৮ অক্টোবরও কোনো নাশকতার আশঙ্কা নেই। আমরা আশা করি কোনো কিছু ঘটবে না। ডিএমপি সমাবেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবে, এ ব্যাপারে আমরা সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই। পাশাপাশি, ঢাকায় আমাদের চেকপোস্ট থাকবে, অভিযান চলবে, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারসহ আমাদের রুটিন কাজও চলমান থাকবে।

মেয়া/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়