ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২০, ৮ জানুয়ারি ২০২৪  
‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন বর্জন করে এদিন হরতাল পালন করেছে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলো। সাধারণ মানুষকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এসব দল।

বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রহসনের এ নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করেছে। স্বতন্ত্র ও ভিন্ন দলের প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তারাও ঘুরে-ফিরে নৌকার লোক। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তবে, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাননি, এটাই বড় অর্জন। এজন্য দেশের আপামর জনসাধারণকে ধন্যবাদ।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন দল ও জোটের নেতারা ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা’ ও ‘ডামি’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, যেখানে ৫ শতাংশ ভোট পড়েনি, সেখানে নির্বাচন কমিশন জোর করে ৪১.৮ শতাংশ বলছে। জনগণ ও বিশ্ববাসী বুঝে গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনটি পাঁতানো এবং প্রহসনমূলক।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের ইতিহাসে অন্যতম ‘ভুয়া নির্বাচন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। 

বাংলাদেশের মানুষ এ সরকারকে বর্জন করেছে, দাবি করে তিনি বলেন, গতকাল জনগণ শুধু ভোট বর্জনই করেনি, তারা আওয়ামী লীগের বিদ্যমান কর্মকাণ্ডকেও বর্জন করেছে। বিএনপি জনগণের দল এবং জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা রাজপথে ছিলাম এবং থাকব, যতদিন জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে না পারবো। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। 

মঈন খান বলেন, ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে আমরা দেশের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের ছবি সংগ্রহ করেছি। কেন্দ্রগুলোতে ভোটার-শূন্যতাই প্রমাণ করে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছে। কিছু কিছু ভোট কেন্দ্রের সামনে কিছু লোককে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এদের দেখলেই বোঝা যায়, তারা ভোটার নয়। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানুষকে ভয়-ভীতি-লোভ দেখিয়ে, নগদ টাকা দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এটাই হচ্ছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ক্ষমতাসীনদের পাঁতানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনগণ অভূতপূর্ব রায় দিয়ে ডামি নির্বাচন বর্জন করেছে। সরকার ফেলারি হত্যা দিবসে পাঁতানো নির্বাচন করে ফেলানির মতোই গণতন্ত্রকে কাঁটাতারে ঝুলিয়েছে। তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য এই সাজানো নির্বাচন করছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচন বর্জন করছেন এবং মিডিয়াতে বলেছেন, নৌকার প্রার্থীরা তাদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছেন। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না। তারা সব সময় ভোট ডাকাতির নির্বাচন করে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সারা দেশের জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে ৭ জানুয়ারি একদলীয় ডামি নির্বাচন করা হয়েছে। বিএনপির মতো বড় এবং প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করলো আওয়ামী লীগ সরকার।

ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বালাদেশের (ইউট্যাব) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বহু আগেই। ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। সেজন্যই জনগণ আর ভোট নিয়ে আগ্রহ দেখায় না। গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও দুর্নীতিতে দেশের মানুষ অতীষ্ঠ। সেজন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে আওয়ামী লীগ।

ইউট্যাব’র মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেছেন, অবৈধ সরকারের পাঁতানো ও ডামি নির্বাচনে দেশের কোনো সচেতন মানুষ ও বিবেকবান ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাননি। ভোটারশূন্য ভোট কেন্দ্রে ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কোনো মানুষ ছিলেন না। জনগণ বিরোধী দলগুলোর ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়ে ও সংহতি জানিয়ে জালিয়াতির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বর্জন করেছে। জনগণ এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের এই প্রত্যাখ্যানই প্রমাণিত হয় দেশের জনগণ নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর ২৯ অক্টোবর থেকে দলটি চার দফা হরতাল ও ১৩ দফা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এর পর লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়ে আসছে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও কর্মসূচি দিয়েছিল দলটি। নির্বাচনের আগে ঢাকাসহ সারা দেশে মিছিল ও গণসংযোগ করে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার নির্বাচনের পর নতুন করে দুই দিনের (৯ ও ১০ জানুয়ারি) কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

মেয়া/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়