ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাহাড়ে এবার গাছে গাছে কাঁঠাল

মো. মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৫:৫২, ১ এপ্রিল ২০২১
পাহাড়ে এবার গাছে গাছে কাঁঠাল

পাহাড়, বনাঞ্চল ও হাওরবেষ্টিত জেলা হবিগঞ্জ। এ বছর জেলার পাহাড়ের গাছে গাছে ফলের রাজা কাঁঠালের ব্যাপক মুচি এসেছে। আশানুরূপ মুচি আসতে দেখে পাহাড়ি চাষিরা সন্তুষ্ট। চৈত্র মাস চলছে, এখন কাঁঠাল গাছে মুচি। জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকা ফলের ঘ্রাণ বেরুবে চারদিকে। সেইসঙ্গে কাঁঠাল বিক্রি ও খাওয়ার ধুম পড়বে। 

পাকা শুরু হলেই পুরোদমে পাহাড়ি টিলা আর সমতল থেকে কাঁঠাল আসবে পাইকারি বাজারে। অনেকে অগ্রিম টাকার জন্য মুচি কাঁঠালই গাছে বেচা-কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অনেক কাঁঠালের বাগান। শুধু কি তাই, বাড়ির আঙিনা আর রাস্তার পাশেও কাঁঠাল গাছের ছড়াছড়ি।

এসব কাঁঠাল পাকা ও আধাপাকা অবস্থায় হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার বাহুবল উপজেলার ‘মুছাই’ ও চুনারুঘাট উপজেলার ‘চন্ডিছড়া’ বাজারে নিয়ে আসবেন বিক্রেতারা। পাইকাররা এ কাঁঠাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাবেন।

আর গত কয়েক বছর ধরে কিছু কাঁঠাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে বলে আলাপকালে স্থানীয় আড়তদার, কৃষক ও কৃষিবিভাগ জানিয়েছে। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর গাছে গাছে কাঁঠালের প্রচুর মুচি এসেছে। মুছাই’র ফলের আড়তের মালিক সুমন চৌধুরী, ইব্রাহিম চৌধুরী, সানু মিয়া চৌধুরীও এবছর কাঁঠালের ভালো ফলনের কথা জানিয়েছেন।

চুনারুঘাটের জাম্বুরাছড়ার সাহেদ মিয়া, নবীগঞ্জের দিনারপুরে ফজলু মিয়া, বাহুবলের রশিদপুর পাহাড়ি এলাকার আমির উল্লা, নূরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, আছমত মিয়া জানালেন, তাদের বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে গাছে গাছে কাঁঠালের মুচি এসেছে। কাঁঠাল উৎপাদনে আলাদা কোনো যত্ন নিতে হয়নি বলে উৎপাদন খরচও কম। 

হবিগঞ্জ শহরের ক্রেতা কবির মিয়া জানালেন, নির্ভেজাল বিষমুক্ত কাঁঠাল কেনার জন্য প্রতি বছরেই মুছাই গিয়ে থাকেন। এবারও যাবেন।

এ ব্যাপারে জেলার বাহুবল উপজেলার পূর্ব ভাদেশ্বর পুকুরপাড় গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে সাইদুল ইসলাম (২৪) জানান, ফয়জাবাদ হিল্সে’র পাহাড়ি টিলায় তাদের কাঁঠাল বাগান রয়েছে। আর এর ফলনে কোনো খরচ নেই বললেই চলে। সঙ্গে লিচু, লেবু, আনারসও চাষ হচ্ছে।

সাইদুল জানান, পাইকাররা গাছের মুচি কাঁঠাল ক্রয় করে রাখছেন। পরে পাকা অবস্থায় বিক্রিতে বেশি মুনাফা পাবেন। আর অনেকে এ অবস্থায় বিক্রি করছেন অগ্রিম টাকা পেয়ে অন্য কাজ করার জন্য। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সরকারিভাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর কাঁঠাল ফলের ফলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে কাঁঠালের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায় বলে অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি লাভজনক। এছাড়া তেমন যত্নেরও প্রয়োজন হয় না।’ 

‘একটি গাছ বহু বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তবে বন্যা মুক্ত এলাকায় কাঁঠালের বাগান করা উচিত। কারণ দীর্ঘ দিন এই গাছ পানি সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকার মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে গাছে গাছে কাঁঠালের মুচি এসেছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে কাঁঠাল পাকা শুরু হবে’, বলেন তিনি।

হবিগঞ্জ/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়