ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৫ বছরে ৩ হাজার রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্তদান বিকেবি ক্লাবের

জাহাঙ্গীর লিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ১৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৬:১৬, ১৫ জুলাই ২০২১
৫ বছরে ৩ হাজার রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্তদান বিকেবি ক্লাবের

প্রতিষ্ঠানলগ্ন থেকে পাঁচ বছরে প্রায় ৩ হাজার রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্তদান সেবা দিয়ে জেলাব্যাপী অনন্য হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীপুরের ‌‘বি.কে.বি ক্লাব’। করোনা মহামারির সময়ে তাদের এই রক্তদান চলছে আরও দায়িত্ব নিয়ে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো রোগীকে রক্ত দিচ্ছেন এই ক্লাবের সদস্যরা। 

এছাড়া এই সময়ে প্রায় ৫ শতাধিক অসহায়দের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছেন তারা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্থানীয় মান্দারী বাজারের বিভিন্নস্থানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। ক্লাবটির উদোগে বিভিন্ন সময়ে ফ্রি ব্লাড ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন করা হয়। শুধু তাই নয়, অসহায় মুমূর্ষু রোগীদের রক্তদানের পাশাপাশি হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো, কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, দুঃস্থ পরিবারের শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত ক্লাবের সদস্যরা। 

বর্তমানে বি.কে.বি ক্লাবের পাশাপাশি বি.কে.বি পাঠাগার, ব্লাড ব্যাংক ও কালচারাল নামে আরও তিনটি পৃথক উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা। সামাজিক দায়বদ্ধতায় সেবা ও উন্নয়নে ১৩ ছাত্র ও তরুণের সমন্বিত এ অগ্রযাত্রা অনেকদূর এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন তাদের। জেলার সদর উপজেলার মান্দারীর ‘বাসার-খাদিজা বন্ধন’, যা সংক্ষেপে বিকেবি ক্লাব হিসেবে পরিচিত। 

গত ৫ বছর ধরে কাজ করছে ক্লাবটি। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ইসমাইল খান সুজন। তিনি একজন শিক্ষার্থী। শুরুতে মাত্র ১৩ জনকে নিয়ে এ ক্লাবের যাত্রা শুরু, যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭ শতাধিক। জানা গেছে, নোয়াখালী কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইসমাইল খান সুজন ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল তার ১৩ জন বন্ধুকে সাথে নিয়ে বিকেবি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। 

পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া রোগীদের রক্তদানের মাধ্যমে ক্লাবটির ব্যাপকতা লাভ করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ বছরে প্রায় তিন হাজার রোগীকে বিনামূল্যে রক্ত দান করেছেন ক্লাবের সদস্যরা। ব্লাড ব্যাংক ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জহিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক হলেন মাহমুদুল হাছান মাসুম। 

ব্লাড ব্যাংক ক্লাবের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, যখন কোনো রোগীর জরুরি ভিতিত্তে রক্তের প্রয়োজন পড়ে, তখন যে কোনো মাধ্যমে রোগীর স্বজনদের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে আমরা নিজ উদ্যোগে ওই গ্রুপে রক্তদাতাকে ওই হাসপাতালে প্রেরণ করি।  আমরা চাই না কোনো রোগী রক্তের অভাবে মারা যাক। সে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। 

বিকেবি ক্লাবের সভাপতি ইসমাইল খান ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি পলাশ বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য অসহায় সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করা। এছাড়া সমাজের নিজেদের ভালো কাজের অবদান রাখা। সেই লক্ষ্যেই আমাদের ক্লাবটি এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্লাবের পক্ষ থেকে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। কোনো অসহায় শিক্ষার্থীর যদি অর্থের অভাবে লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিরতণ করা হয়। 

গত ৫ বছরে ফ্রি রক্তদান কর্মসূচির আওতায় ২ হাজার ৭৮৪ জন রোগীকে রক্তদান করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনের পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানেও সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। 

বিকেবি ক্লাবের মাধ্যমে ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সদস্যরা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেন। এ পর্যন্ত পায় ৭টি টুর্নামেন্টে (ক্রিকেট) চ্যাম্পিয়ন এবং দুইটিতে রানারআপ ও দুইটি ফুটবল টুর্নামেন্টে রানারআপ হন ক্লাবের খেলোয়াড়রা।     

ইসমাইল খান সুজন বলেন, ছিন্নমূল ও অসহায়দের পাশে থাকা ক্লাবের মূল লক্ষ্য। অসহায় রোগীদের রক্ষদান অব্যাহত রাখা, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ক্লাবের মাধ্যমে সদস্যদের নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন করাসহ সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়াটা ক্লাবের উদ্দেশ্য। এছাড়া বিকেবি কালচারাল একাডেমির মাধ্যমে নাচগানের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনাও একটি উদ্দেশ্য। 

লক্ষ্মীপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়