বিলের শাপলায় দারিদ্র্য জয়

শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও তরকারি হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র, খাল, বিল, পুকুর, ডোবায় শাপলা পাওয়া যায়। বিল পাড়ের একদল নিবেদিত প্রাণ এসব বিলের শাপলায় সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে আয়ও করছেন।

প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। শাপলার ফল দিয়ে তৈরি হয় চমৎকার সুস্বাদু খইও। গাজীপুরের কালীগঞ্জের বেলাই বিল পাড় ঘুরে এবং স্বাস্থ্য ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

উপজেলার দুবার্টি গ্রামের ফারুক (৪৩), খলিল (৩৩), নুরুল ইসলাম (৪২) ও বেলায়েত (৪৭) টিউবওয়েল বসানোর কাজ করেন। তারা জানান, বর্ষার ৬ মাস অন্য কোনো কাজ না থাকায় নিজেদের পেশা বদল করে বিলের শাপলা তুলে সংসার চালান। বর্ষা মৌসুম এলে টিউবওয়েল বসানোর কাজ মোটামোটি বন্ধই থাকে। কিন্তু তাই বলে কর্মব্যস্তরা বসে থাকতে নারাজ। বর্ষার সময় তারা তাদের পেশা বদল করে শাপলা উঠানোর কাজ করেন। আর তা স্থানীয় বাজার ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্রি করে সংসারের প্রতিদিনের অন্ন জোগান দেন।

শুধু তারাই নন, বিল পাড়ের প্রায় অর্ধ-শতাধিক দরিদ্র পরিবারের মানুষ এই শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিত। আর তাদের এ কাজে পরম বন্ধুর মতো সহযোগিতা করছে তাল গাছ দিয়ে তৈরি কোন্দা বা কাঠ দিয়ে তৈরি ডিঙ্গি নৌকা। এতে একদিকে যেমন নিজেদের সংসারের যাবতীয় চাহিদা মেটাচ্ছেন, অন্যদিকে বিলে জন্ম নিয়ে বিলেই পচে যাওয়া জাতীয় ফুল শাপলাকে সবজি হিসেবে করছেন অতি জনপ্রিয়।

সামাজিক সংগঠন কালীগঞ্জ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. জসিম উদ্দিন পুষ্টিসমৃদ্ধ ফেলনা শাপলা সবজি হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে যে শাপলা বিলে জন্মে বিলেই পচে যেত, সে শাপলা সবজি হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে ও দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে ভাবতে ভালোই লাগে বলে জানান তিনি।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এসএম রবীন হোসেন বলেন, সবচেয়ে আশার কথা, শাপলা এখন ফেলনা নয়, খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। আবার অনেকে এগুলো বিল থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসারও চালান। তাই দিবানিশি কাজ করে যাওয়া মানুষ ভালো থাক সবসময়, এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাস উদ্দিন মিয়া বলেন, শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। যা আলুর চেয়ে সাত গুণ বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া আশীর্বাদ বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। বিষয়টি ছোটভাবে দেখার সুযোগ নেই।