ভোজনরসিকদের জন্য আমার স্বল্প মূল্যের ক্যাটারিং ও টি-শপ: সবুজ সিকদার
হাকিম মাহি || রাইজিংবিডি.কম
‘টি অ্যান্ড টি’ শপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা
সবুজ সিকদার। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার কুড়িয়ানা গ্রামে। কৃষক বাবা অরবিন্দ শিকদার মারা গেছেন দুই বছর আগে। সবুজ এসএসসি ও এইচএসসি পড়েছেন গ্রামেই। স্বপ্ন দেখতেন ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই সুবাদে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করেন।
২০১০ সালে চাকরির উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকায় বড় বোনের বাসায় আসেন। চলে চাকরি খোঁজার কাজ। বোন-দুলাভাইয়ের সহযোগিতায় চাকরিও পান দেশের স্বনামধন্য একটি বেসরকারি গ্রুপ অব কোম্পানিতে। ধীরে ধীরে হয় পদোন্নতি। একসময় মাথায় আসে স্বপ্ন বদলের চিন্তা।
সিদ্ধান্ত নিলেন আর চাকরি নয়, শুরু করবেন ব্যবসা। এতে যেমন নিজের বলার মতো একটি গল্প হবে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানও। বেকার মানুষের ঠাঁই হবে তার প্রতিষ্ঠানে। যেই ভাবনা, সেই কাজ। চার বছর আগে প্রথমে চালু করেন ক্যাটারিং সার্ভিস। তারপর গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সন্ধ্যায় ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে শুরু করেন 'টি অ্যান্ড টি' শপ বা বিভিন্ন ধরনের চায়ের দোকান। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়েছেন সবুজ শিকদার।
রাইজিংবিডি: শুভ সন্ধ্যা। কেমন আছেন?
সবুজ সিকদার: জি ভালো আছি। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তাই একটু বেশি ভালো আছি।
রাইজিংবিডি : চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করলেন কেন?
সবুজ সিকদার: সে অনেক কথা। তবে, সংক্ষেপে বললে, প্রথমে চাকরি করেছি নিজেকে স্বাবলম্বী করবার জন্য। এখন সমাজের উপর দায়বদ্ধতা থেকে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেছি। এর মাধ্যমে কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কয়েকটি সংসার যদি চলে আমার প্রতিষ্ঠানে, তখন নিজেকে ধন্য মনে হবে।
রাইজিংবিডি : আপনার ব্যবসায়ী জীবনের গল্পটা শুনতে চাই।
সবুজ সিকদার : আমি আর আমার মেঝো ভাই বরুণ সিকদার প্রথমে ঢাকায় বোনের বাসায় থাকি। একসময় চাকরি পাই। মেসে উঠি। একদিন রাতে দুইভাই ডিনার করা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। সারাদিন ডিউটি করে এসে রান্না করাটা খুবই ঝামেলার। আর আমাদের মতো অনেকেই আছেন ব্যাচেলর, তাদেরও একই সমস্যা। তাই মাথায় আসে ক্যাটারিং সার্ভিস শুরু করবো। এতে যেমন আমাদের রাতের খাবারের ঝামেলা যাবে, অন্যদেরও একই সমস্যা সমাধান হবে। সঙ্গে মোটা অঙ্কের আয়ও হবে। চার বছর আগে সিকদার কিচেন' নামে ছোট পরিসরে ক্যাটারিং সার্ভিস শুরু করি। করোনা আসার পর বাইরের খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসাটা আরেকটু বড় করি।
রাইজিংবিডি : ক্যাটারিং সার্ভিসে কী কী খাবার বিক্রি করছেন। হোম ডেলিভারি দেন কি না?
সবুজ সিকদার : সিকদার কিচেনের প্রতিদিনের মেন্যুতে পাবেন- মাছ, মাংস, ডাল, সবজিসহ আরও রকমারি সব বাংলা খাবার। এছাড়া আমরা বিভিন্ন ধরনের পার্টি যেমন-জন্মদিন, বিয়ে, বৌভাত, অফিস পার্টি, ইফতার পার্টি ও বিভিন্ন ধরনের পার্টিতে খাবার সরবরাহ করে থাকি। আমাদের কাছে পাবেন বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি যেমন-হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি, দম বিরিয়ানি, লখনৌ বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন পোলাও, তেহারি, ভুনা খিচুড়ি, ফ্রাইড রাইচ, চিকেন রোস্টসহ যেকোনো ধরনের ইন্ডিয়ান ও বাংলা খাবার। আমরা সুদক্ষ ডেলিভারিম্যানের মাধ্যমে সময় ও নিষ্ঠার সঙ্গে হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকি।
রাইজিংবিডি : চায়ের দোকানে কী কী চা বিক্রি করছেন?
সবুজ সিকদার : আমরা সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত উপকরণ দিয়ে তৈরি করছি বিভিন্ন স্বাদের দেশি-বিদেশি এসব চা। যেমন- আফগানি পিংক টি, হাইদ্রাবাদী মাসালা টি, বাদাম টি, আলুবোখারা টি, লেমন টিসহ দেশি প্রায় সব ধরনের চা পাওয়া যায়।
রাইজিংবিডি : আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা?
সবুজ সিকদার : এখানে বয়সের কোনো ভেদাভেদ নেই। যারা কিউরিয়াস এবং যাদের চায়ের প্রতি ফ্যাসিনেশন আছে, তারাই আমাদের শপে আসছেন। এবং যারা তুলনামূলক কম দামে ফ্রেশ এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন খাবার খেতে আগ্রহী, তারাই ক্যাটারিং সার্ভিসটা ব্যবহার করছেন।
রাইজিংবিডি : কেমন পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। কোথায় কোথায় থেকে কাঁচামাল আনেন?
সবুজ সিকদার : স্বল্প পুঁজি নিয়ে পরিপাটি সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেখানে মালের আধিক্য রয়েছে এবং বিভিন্ন মালের প্রয়োজনে আমরা-কাওরান বাজার, রায়েরবাজার, নিউমার্কেট ও বিভিন্ন সুপারসপগুলোতে যাচ্ছি। অনেক সময় ঢাকার বাইরে থেকেও স্থানীয় বিভিন্ন খাবার, মসলা এনে থাকি।
রাইজিংবিডি : আপনার দোকানের নাম কী। কাস্টমাররা কীভাবে খুঁজে পাবেন আপনার দোকান?
সবুজ সিকদার : দোকানের নাম- টি অ্যান্ড টি এবং সিকদার ক্যাটারিং। লোকেশন- ৫৯, ১ম লেন, কলাবাগান, ঢাকা ১২০৫।
রাইজিংবিডি : অন্য দোকানের খাবারের চেয়ে আপনার দোকানের পার্থক্য কোথায়। কাস্টমাররা আপনার এখানে কেন আসবেন?
সবুজ সিকদার : আমার জানামতে আফগান পিংক টি ঢাকায় নেই মনে হয়। আমরাই প্রথম কাস্টমারদের ভিন্ন স্বাদের চা সরবরাহ করছি। আমরা মূলত ফুড সেফটির দিকে বেশি জোর দিচ্ছি। মাটির হাঁড়িতে চা, একটু আভিজাত্য।
রাইজিংবিডি : ব্যবসায় ঝুঁকি আছে, এটা জেনেও কেন ব্যবসা শুরু করলেন। আপনার এখানে কতজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
সবুজ সিকদার : নো রিক্স নো গেইন। কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে কিছু করার তাগিদে এবং সমাজের আরও কিছু মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। যেহেতু পরিসরটা ছোট, সেজন্য এখন ১০ জন নিয়েই কাজ করছি।
রাইজিংবিডি : মাসে আয় কেমন হয়?
সবুজ সিকদার : কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যবসা তেমন হয়নি। সবার বেতন দিয়ে সমান-সমান আছি। তবে, এই চলতি মাস থেকে আয় বেশি হবে বলে মনে করছি।
রাইজিংবিডি : যারা ব্যবসা করতে চান আপনার মতো, তাদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন।
সবুজ সিকদার : অসীম ধৈর্য থাকা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু ব্যবসা একটা লং জার্নি, সেহেতু স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে ভালো কিছু করতে চাইলে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা গড়তে হবে। আর একটা হলো প্রচুর বই পড়তে হবে।
রাইজিংবিডি : অসংখ্য ধন্যবাদ।
সবুজ সিকদার : রাইজিংবিডি পরিবার ও পাঠকদের ধন্যবাদ।
/মাহি/
আরো পড়ুন