ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নতুন ব্রি-৮৯ ধানের ফলন বেশি 

রেজাউল করিম  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৪ মে ২০২২  
নতুন ব্রি-৮৯ ধানের ফলন বেশি 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) তিন কৃষি বিজ্ঞানী প্রায় ১০ বছর গবেষণা করে ব্রি-৮৯ ধানের জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। পুরনো জাতগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ফলন দিচ্ছে এ ধান। এই ধানের ভাত ঝরঝরে এবং খেতেও সুস্বাদু। উচ্চফলনশীল ‘ব্রি–৮৯’ এই জাত উদ্ভাবন করে এবার যৌথভাবে ‍গবেষণা ক্যাটাগরিতে গত (২০ ফেব্রুয়ারি) দেওয়া হয়েছে একুশে পদক। 

পদকপ্রাপ্তরা হলেন, গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কৃষি বিজ্ঞানী মো. এনামুল হক (দলনেতা), সাহানাজ সুলতানা (দলগত) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (দলগত)।
 
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘকাল ধরে দেশে ধান উৎপাদনের সিংহভাগই আসছে ‘ব্রি-২৮’ ও ‘ব্রি-২৯’ ধান থেকে। তবে দুই যুগের বেশি পুরনো এসব জাতের উৎপাদনশীলতা দিন দিন কমছে। অন্যদিকে বাড়ছে নতুন নতুন রোগবালাইয়ের প্রকোপ। বিকল্প হিসেবে  উচ্চফলনশীল জাতের নতুন নতুন ধান চাষের চেষ্টা চলছিল অনেক দিন ধরে। অবশেষে ১০ বছর প্রচেষ্টার পর ব্রি-৮৯ জাতটি উদ্ভাবন করেন গবেষক দলটি। এখন পর্যন্ত মাঠে উৎপাদন খুব ভালো। জাতটি ধীরে ধীরে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. এনামুল হক জানান, নতুন উদ্ভাবিত ব্রি-৮৯ ধান জাতে আধুনিক উচ্চফলনশীল বা উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া এবং লম্বা। ধানের দানা অনেকটা ব্রি-২৯ ধানের মতো, তবে সামান্য চিকন। পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৬ সেন্টিমিটার। এ জাতের কাণ্ড শক্ত, পাতা হালকা সবুজ এবং ডিগ পাতা চওড়া। ধানের ছড়া লম্বা, পাকার সময় কাণ্ড ও পাতা সবুজ থাকে। ফলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। এতে শিষের গোড়ার ধানও পুষ্ট হয়। এর জীবনকাল ব্রি-২৯ ধানের চেয়ে ৩ থেকে ৫ দিন আগাম। ১ হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪ দশমিক ৪ গ্রাম। চালে অ্যামাইলেজের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৫ ভাগ। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন, রান্নার পর ভাত চালের ১ দশমিক ৪ গুণ লম্বা হয়।

ব্রি-৮৯ ধানের বীজ বপনের সময় ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর। ৪০ থেকে ৪৫ দিন বয়সী চারা ২০ বাই ২০ সেন্টিমিটার ব্যবধানে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি। প্রতি গোছায় ২–৩টি করে চারা রোপণ করতে হবে। এই ধান চাষে প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ কেজি ইউরিয়া, ১২ থেকে ১৪ কেজি টিএসপি, ১৫ থেকে ২০ কেজি এমওপি, ১২ থেকে ১৫ কেজি জিপসাম এবং এক থেকে দেড় কেজি দস্তা বা জিংক সালফেট সার লাগবে। রোপণের ৪০ থেকে ৪৫ দিন জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এ জাতে রোগের আক্রমণ অন্যান্য জাতের তুলনায় কম। তবে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে অনুমোদিত বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। ১৮ এপ্রিল থেকে ৩০ মের মধ্যে ফসল কাটা যাবে। 

ব্রি সূত্রে জানা গেছে, ব্রি-৮৯ জাতসহ আরও পাঁচটি নতুন জাতের ধানের বিভিন্ন গুণ উল্লেখ করে এবং প্রমাণসহ গত বছরের অক্টোবরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গঠিত একুশে পদক যাচাই–বাছাই কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়। পরে তারা সবকিছু যাচাই–বাছাই করে ব্রি-৮৯ জাতের জন্য ব্রির জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. এনামুল হক, ব্রির জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাহানাজ সুলতানা ও জান্নাতুল ফেরদৌসকে নির্বাচিত করে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান মিয়া জানান, এর আগেও আমাদের প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছিল। যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য একুশে পদক পাওয়া আনন্দের সংবাদ। এ বছর পাঁচজন কৃষিবিদ একুশে পদক পেয়েছেন। পদকপ্রাপ্ত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই আমাদের প্রতিষ্ঠানের। এই পুরস্কার পাওয়ায় সবার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। 

/বকুল/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়