ঢাকা     শনিবার   ১৭ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২

‘আকাশজয়ী’ মারুফ

তামিম ইসলাম, ফরিদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৬ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ২২:৩২, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
‘আকাশজয়ী’ মারুফ

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের মারুফ মোল্লা স্থানীয়দের কাছে এখন ‘আকাশজয়ী’ নামে পরিচিত। দারিদ্র্য আর সীমিত সুযোগের মধ্যে নিজ ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি তৈরি করেছেন প্যারাগ্লাইডার। যা দিয়ে তিনি পাখির মতো আকাশেও উড়েছেন। মারুফের এই অসাধারণ কৃতিত্ব এখন গ্রামজুড়ে আলোচনার বিষয়।

ছোটবেলা থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন মারুফ। দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হলেও থামেনি তার স্বপ্নের যাত্রা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবের ভিডিও দেখে আর স্থানীয়ভাবে জোগাড় করা যন্ত্রপাতি দিয়ে মাত্র কয়েক মাসের পরিশ্রমে তিনি তৈরি করেছেন প্যারাগ্লাইডার। মারুফের উদ্ভাবনী মন শুধু প্যারাগ্লাইডারে সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন ইয়ারকুলার এবং হাত-পা ঘামানো সমস্যা সমাধানের ইলেকট্রিক্যাল থেরাপি মেশিন। 

প্রথমবার আকাশ ছোঁয়ার মুহূর্তটি জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা বলে জানান মারুফ। তিনি বলেন, “স্বপ্ন আর সাহস থাকলে অসম্ভব বলে কিছুই নেই।” প্যারাগ্লাইডার তৈরিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, খেজুরতলা গ্রামের একটি ফসলের মাঠে মারুফের আকাশে ওড়ার দৃশ্য দেখতে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামবাসী। শুরুতে পরিবারের বকাবকি ও প্রতিবেশীদের সন্দেহের মুখেও তিনি দমেননি। 

মারুফের মা সামেলা বেগম বলেন, “আমার ছেলের এই কীর্তি অতুলনীয়। আমি ভাবতেই পারিনি আমার ছেলে এমন অসাধারণ কিছু করবে। একসময় যারা ওর কাজ নিয়ে সন্দেহ করত, এখন তারাই প্রশংসায় মুখর।”

গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, “মারুফের এই কাজ আমাদের গ্রামের জন্য গর্বের বিষয়। ওর মতো তরুণরা আমাদের অনুপ্রেরণা। মারুফ এখন গ্রামবাসীর কাছে আকাশজয়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।”

মারুফের স্বপ্ন এখন আরো বড়। তিনি একজন দক্ষ প্যারাগ্লাইডার হয়ে বাংলাদেশের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চান। পাশাপাশি, সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি তার প্যারাগ্লাইডার বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে চান। 

মারুফ বলেন, “আমি চাই আমার এই উদ্ভাবন দেশের কাজে আসুক। সরকারের সহায়তা পেলে আমি আরো বড় কিছু করতে পারব।”

মারুফের প্রশংসা করে স্থানীয় সমাজকর্মী ফারুক হোসেন বলেন, “তিনি (মারুফ) প্রমাণ করেছেন, অর্থের অভাব স্বপ্নের পথে বাধা নয়। মারুফের এই গল্প তরুণদের জন্য উৎসাহের উৎস। আমরা আশা করি, সরকার তার পাশে দাঁড়াবে।”

চর বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোহাম্মদ গফফার বলেন, ‍“মারুফের অসাধারণ সাফল্যে আমরা সবাই গর্বিত। তার প্রতিভা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি সত্যিই প্রশংসনীয়। খেজুরতলা গ্রামের এই যুবকের স্বপ্ন পূরণের গল্প আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।” 

তিনি আরো বলেন, “মারুফের প্রচেষ্টাকে আরো এগিয়ে নিতে আমি ব্যক্তিগতভাবে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব, যাতে তার জন্য আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যায়।”

ঢাকা/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়